মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত নিন…
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৭:১২,অপরাহ্ন ১৮ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ২১৪৯ বার পঠিত
আমাদের দেশে মধ্যবিত্তদের আস্থার জায়গা হলো জাতীয় সঞ্চয়পত্র। সারা জনমের সঞ্চিত অর্থ একটি সময়ে এসে জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনে নিরাপদ একটি আশ্রয় খুঁজে নেওয়ার জায়গা হিসেবে ধরে নেয় তারা। বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অধীনে জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে সাধারণের নির্ঝঞ্ঝাট অর্থ বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করে। বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে, সাধারণ মানুষের হাতে জমানো টাকা লম্বা সময়ের জন্য ফেলে না রেখে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগে মুনাফা লাভ, দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমনÑ মহিলা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসার সুযোগ এবং সরকারের সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরিত অর্থ দ্বারা জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণ করার সুযোগ করে দেয়। বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে দেশের ২ কোটি গ্রাহককে। আবার এ গ্রাহকদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। সব মিলিয়ে আমরা ধরে নিতে পারি প্রস্তাবিত বাজেটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষের আগামী জীবন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্যবিত্ত।
বাজেটে গ্রাহকদের মুনাফার টাকার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে উৎসে কর দিতে হতো ৫ শতাংশ, এখন দিতে হবে ১০ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হতো। আর এ নিয়েই তৈরি হয়েছে গ্রাহকের বিভ্রান্তি। এতদিন যারা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে আসছে, তাদের জন্য কি এ হার বহাল থাকবে? নাকি নতুন ও পুরনো সবার জন্যই আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর চালু হবে? যারা মুনাফার টাকা তোলেননি, তাদের ক্ষেত্রেই বা কী নিয়ম হবে?
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর বলছে, বাজেট পাস হওয়ার আগে বর্তমানে যে নিয়ম আছে, সে নিয়ম বহাল থাকবে। এনবিআর বলছে, ১০ শতাংশ উৎসে কর ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে। যারা এখনও মুনাফার টাকা তোলেননি এবং যারা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়েই মুনাফার টাকা তুলতে চান, তাদের উচিত হবে ৩০ জুনের মধ্যেই তা তুলে ফেলা। সে ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে না। উৎসে কর দ্বিগুণ করার কারণে সমাজের সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের আয় কমে যাবে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কারণে কোনো গ্রাহক যদি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা পেয়ে থাকে, ১ জুলাইয়ের পর থেকে তিনি ৫ হাজার থেকে ৫০০ টাকা কম পাবেন। ব্যাংকের কাছ থেকে এ টাকা বুঝে নেবে এনবিআর। সঞ্চয়পত্র চালুর দর্শনটা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে এক ধরনের সুরক্ষা দেওয়া। আর এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিবিদ এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সঞ্চয়পত্র বেশি কিনছে এবং করের টাকায় বিপুল অঙ্কের মুনাফাও নিচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ১০, ২০ এমনকি ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন। সঞ্চয়পত্রকে সরকার প্রতিবছরই বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন পূরণের অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচনা করে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আমাদের দাবি, দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষের রাষ্ট্রের ন্যূনতম এ সুযোগ বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, বলা যায়, দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতি তাকিয়ে উৎসে করের বৈষম্যকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা এনে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে সরকার যে উদ্দেশ্যে বাজেটকে জনকল্যাণকর বলে আখ্যায়িত করেছেন তা শুধু প্রশ্নবিদ্ধই হবে না, দেশের অর্ধেক মানুষ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।