মে দিবসের অনুগল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১০:৫৮,অপরাহ্ন ০১ মে ২০২৫ | সংবাদটি ২৯ বার পঠিত
জুয়েল সাদত
এক সময় সিলেটে ছাত্র জীবনে বা সমসাময়িক সময়ে ১৯৯০ – ১৯৯৬ সালে আমরা ১ লা মে সিলেটে মে দিবসে জাসদ ছাত্রলীগের ব্যানারে আমরা বিশাল বর্নাট্য Rally করতাম৷ আজকের যারা সিলেটের বিএনপি করেন শীর্ষ নেতারা তাদের বেশীর ভাগ সেই Rally তে থাকতেন৷ নাম বললে বিব্রত হবেন৷ প্রসঙ্গে আসি। আমাদের শ্লোগান ছিল ” কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না ” দুনিয়ার মজদুর এক হও।
আজও মজদুর বঞ্চনা / লাঞ্চনা কমে নাই৷ মিডল ইস্ট এ শ্রমিকদের শোষন চলছেই৷। এদের ( মিডিলইস্টদের) শ্রমিক রা দাসের জীবনে বন্ধি।
মে দিবসের সেই সোনালী দিনের সিলেট শহরের মিছিলের সামনে আমরা থাকতাম।
আর পছনে থাকতেন (গুরু) পারভেজ আক্তার কিনু সহ সিনিয়রদের বড় অংশ। নাট্যব্যাক্তিত্ব এজাজ আলম ( নিউ ইয়র্ক) তার ফ্যাকাশে মোটরসাইকেল নিয়ে এসকর্ট করতেন।
ঐ সময়ের আম্বরখানা থেকে বন্দর বাজারের শ্রমিকরা বুজত কিনা, এত আধুনিক পড়ালেখা জানা শহরের বনেদী পরিবারের ছেলেরা কি বলছে। কেন বলছে। কার কথা বলে!
এর পর মে দিবসের Rally মনে পড়ে না। আমি ৯৪ সালের পর থেকে সংবাদমাধ্যম জড়িত হই। ১৯৯৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশ সরকারের আনসার ভিডিপির সিলেট বিভাগীয় জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে সরকারি চাকুরীতে জয়েন করি। ২০০১ সালের মাঝামাঝি তে আমেরিকা আসি৷
স্থানীয় দৈনিক মে দিবস নিয়ে লিখতাম৷
মে দিবসের গোড়াপত্তন আমেরিকায়, তখন শ্রমিকীরা ১২/১৪ কাজ করত। আফ্রিকান দাস কৃষ্ণাঙ্গরা কাজ করত৷ শোষনের শেকলে শ্রমিকদের জীবন বন্ধি ছিল৷ সে এক করুন কাহিনী। আফ্রিকা থেকে মুসলমান দাস এনে ( ১০০ ডলারে ১ জন) আমেরিকার সভ্যতা তৈরী হল৷
হাইওয়ে, রেলপথ, সাবওয়ে, সব কিছুই তারা বানাল৷
তারপর একটি আন্দোলন হল। আমেরিকার শিকাগোর হে মার্কেটে। বড় একটি আন্দোলন। শ্রমিক রা মারা গেল শিকাগো শহরে। সেখানেই এই ইতিহাস।
আমি ২ বার শিকাগো গিয়ে সেই জায়গাটা পাই নাই। জায়গাটা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে৷ আরো মজার বিষয় হল আমেরিকায় লেবার ডে ( মে দিবস) ১ লা সেপ্টেম্বর ।
শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে ধারাবাহিক রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর, কংগ্রেস অবশেষে ১৮৯৪ সালে ১ সেপ্টেম্বরকে শ্রমিক দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইন পাস করে, যা ১ মে তারিখের ঐক্যবদ্ধ, আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর উদযাপন থেকে দূরে সরে যাওয়ার আশা করে।
তবে আমেরিকায় শ্রমিকদের স্বার্থের সুরক্ষা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে৷
আমরা যারা আমেরিকায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছি্৷ দেখেছি প্রত্যেকটি কাজের জায়গায় লেবার ডিপার্টমেন্ট এর নীতিমালা প্রদর্শন করতে হয়৷ নুন্যতম মজুরী স্টেট নির্ধারিত দিতে হয়। ৮ ঘন্টা কাজে ৩০ মিনিট ব্রেক৷ অভিযোগ করার নাম্বার দেয়া, ট্রেনিং এর মজুরী দিতে হয়৷ এটাই নিয়ম, আবার ট্রেড ইউনিয়ন ও জড়িত থাকে৷ ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের নায্য হিসাবের দরদাম করে৷
আরেকটি চিত্র আছে, আমাদের নিউইয়র্কে এর ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে যারা আসেন তাদের ট্রেনিং এর ২ সপ্তাহের টাকা দেন না৷ ইংরেজি জানেননা বলে দেশী দোকানে কাজ করে অনেকে এটা মেনে নিতে বাধ্য হন৷ দেশী অসাধু ব্যবসায়ীরা স্টুডেন্টদের এবং দুর্বল কাগজ যাদের তাদের ঘন্টা হিসাবে মজুরী কম দেন৷ এই অপকর্মটা করে লজ্জিত হন না । অনেকে অভিযোগ করেন না লেবার ডিপার্টমেন্ট এ, এরকম চলছে।। শুধু নিউইয়র্ক না সব জায়গায় এরকম । তারপর ২ সপ্তাহের পে চেক আটকানো থাকে৷। অনেকে অন্য জায়গায় নিয়ে চেছড়াদের নিকট ২ সপ্তাহের বেতন রেখে চলে যান৷ এরকম বিচার আমাদের করতে হয়।
এই বৈষম্যমূলক আচরন গ্যাস ষ্টেশনের মালিকরা করেন বেশী৷
বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নারী শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের জন্য বিগত সরকার অনেক কিছুই করেছে৷ সেগুলোর ধারাবাহিকতা ও আরও ভাল কিছু করতে হবে। মেটারনিটি লিভ মহিলা ও পুরুষদের দেয়া হয়েছে এগুলো আরও আপড করতে হবে৷ মহিলা শ্রমিকদের সাথে বৈষম্যে করা যাবে না, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বন্ধ করতে হবে এবং নায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে৷
ইসলামে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, রাস্ট্রকেও শ্রমিক দের সব অধিকার দিতে হবে।। ILO ইন্টারন্যাশনাল লেবার ল এর সব শর্ত মানতে হবে৷

মহান মে দিবস বলা হয়। কারন শ্রমিক রা মহান৷ তাদের ঘামেই রাষ্ট্র চলে, সমাজ চল।
আমাদের আমেরিকায় স্ট্রিট লেবার পাওয়া যায়৷ হোম ডিপো বা রাস্তায় অনেক হোমলেস কাজ খুজে৷ বেশীর ভাগ আমেরিকার। যারা নি:স্ব হয়ে গেছে৷ আই ডি রিভোক, পরিবার লস্ট। করুন স্টোরী শুনি৷ রাস্তায় থাকে৷ ডিংক করে।

আমি আমার গার্ডেন এর জন্য বা রেন্টাল হাউসে ক্লিনিং এর জন্য নিয়ে আসি। তারা কয়েক ঘন্টা কাজ করে, তাদের লাঞ্চ করাই, যাবার সময় প্যান্ট, শার্ট, জুতা দিয়ে দেই৷ হিসাবের চেয়েও বেশী টাকা দেই।। গড ব্লেস ইউ বলে চলে যায় ।।। আমরা সবাই ই শ্রমিক নানা মাধ্যমে। তাই সবাই এর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷
/ জুয়েল সাদত – কলামিস্ট / সাংবাদিক। আমেরিকা