সুযোগ এসেছে একাত্তরের চেতনায় দৃঢ় প্রত্যয়ে জেগে ওঠার
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৬:৩৭,অপরাহ্ন ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৭৪৯ বার পঠিত
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে পৃথিবীর বুকে স্থান পায় লাল-সবুজের মানচিত্র। টানা যুদ্ধ হয় ৯ মাস। শত শত সন্তান হারা মায়ের আত্মনাদে অর্জিত এই বিজয়। সেই জাতির বীর সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত গোটা জাতি।
জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরব, অহঙ্কার ও আনন্দ উজ্জ্বলতার সাক্ষ্য বহনকারী একটি অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই বিশেষ দিনটিতে ২৬ মার্চ ১৯৭১-এ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে এ বিজয় ছিনিয়ে আনে।
এই দিনটিতেই ৯৫ হাজার পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। ৩০ লাখ বাঙালির বুকের রক্তে, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও অগণিত মানুষের সীমাহীন দুঃখ-দুর্ভোগের বিনিময়ে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন এই বিজয় মুকুট শিরে পরেছিল বাংলাদেশ।
সুদীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তানিদের অত্যাচার-নিপীড়ন আর সীমাহীন বঞ্চনার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার অমোঘ বাণী বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
পাকি সামরিক শাসকরা বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করে ২৫ মার্চ গভীর রাতে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ওই রাতেই গ্রেপ্তারের আগে, বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশবাসীকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বর্বরতার নিন্দা এবং বাংলাদেশের পক্ষে সাহায্য ও সহযোগিতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।
যে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সেই ময়দানেই ৯৫ হাজার পাকি হানাদার বাহিনীর সদস্যকে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে হয়। বিজয়ের এই দিনে স্বাধীনতার সেই মহানায়কের প্রতি জানাই আমাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা। তার সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি তাদের, যাদের অমূল্য সংগ্রামী জীবনের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি, মুক্ত স্বাধীন স্বদেশভূমি পেয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষপ্রান্তে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা বেছে বেছে এ ভূখণ্ডের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, দার্শনিক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী হত্যার যে তাণ্ডবে মেতে উঠেছিল সেই ক্ষতি কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। স্বজন হারানোর স্মৃতি এ বিজয়ের দিনেও আমাদের বিষাদগ্রস্ত করে। অবশ্য আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, পূর্ব দিগন্তে নৈরাশ্য-গ্লানির আঁধার কেটে আলোর রেখা দেখা দিতে শুরু করেছে।
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায় কার্যকর হয়েছে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। অনেকেরই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এখন সুযোগ এসেছে বাংলাদেশকে পরিপূর্ণরূপে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার, একাত্তরের চেতনায় দৃঢ় প্রত্যয়ে জেগে ওঠার।
বিজয় উদযাপনে আমাদের শপথ হোক সব ষড়যন্ত্রের অর্গল ভেঙে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন-গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সুখী-সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই অর্জিত হবে আমাদের প্রকৃত বিজয়।