অপহরণের হুমকিতে পুলিশ পাহারায় পরীক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৮:২৩,অপরাহ্ন ০৩ এপ্রিল ২০১৯ | সংবাদটি ৫৪৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: আপন বোন ও বোনের জামাইর অপহরণের হুমকিতে প্রথদিনের পরীক্ষা দিতে না পারলেও পুলিশ পাহারায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় অংশ নেন বাগমারা উপজেলার মচমইল ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রী।
ওই ছাত্রীর ভাষ্য, তার বোনের স্বামী তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ভালোবেসে বিয়ের অপরাধে স্বামীর কাছ থেকে আলাদা করতেই এ হুমকি দেন তার ভগ্নিপতি।এ ঘটনায় সোমবার আদালতে মামলা দায়ের করেন বিউটি খাতুন।
বিউটি খাতুন উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। সাত মাস আগে পরিবারের অমতে উপজেলার তেলীপুর গ্রামের মন্টু প্রামাণিকের ছেলে সিরাজুল ইসলামকে ভালোবেসে বিয়ে করেন বিউটি। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে বিউটি লেখাপড়া করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এসএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৪.৯১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
কিন্তু হুমকি ছিল পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে। এ জন্য চলমান এইচএসসির প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি বিউটি।
স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সোমবার তারা এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই রাতেই পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। নিরাপত্তাসহ বিউটিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশি নিরাপত্তায় বিউটি পরীক্ষা দিয়েছেন।
বিউটি খাতুন জানান, চার বছর প্রেমের পর সিরাজুলকে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তার বোনের স্বামী ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার একডালা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বিচ্ছেদের জন্য ওঠেপড়ে লাগেন। এরই অংশ হিসেবে বাবার বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার স্বামীর ওপর নির্যাতন চালান জাহাঙ্গীর। জিম্মি করে পরে সিরাজুলকে দিয়ে তালাকনামায় সই করিয়ে নেন ভগ্নিপতি।
ভগ্নিপতির তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিতে প্রথম দিন বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে তিনি কেন্দ্রে যেতে সাহস পাননি বলে জানান।
বিউটি খাতুনের স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির কারণে পরীক্ষা দেওয়া হলো না বিউটির-এমন একটি সংবাদ প্রকাশ হয় স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যমে।
“সেটি প্রশাসনের নজরে আসার পর সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনজন পুলিশ সদস্য তাদের বাড়ি গিয়ে বিউটিকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বলেন।
“সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে একজন নারীসহ দুই পুলিশ সদস্য বিউটিকে বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। পরীক্ষা শেষে আবার বাড়ি পৌঁছে দেন।”
বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, হুমকির কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি সেটি তারা আগে থানায় জানায়নি। পত্রিকার সংবাদ দেখে পুলিশ পাহারায় তার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
“প্রত্যেক পরীক্ষার দিন পুলিশ গিয়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে এবং বাড়ি পৌঁছে দেবে।”
বিউটি খাতুন বলেন, চার বছর প্রেম করে তারা বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাদের বিয়ে মেনে নেয়নি তার বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। বিয়ের পর থেকে সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করানোর জন্য তার ভগ্নিপতি ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার একডালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন।
“সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে জাহাঙ্গীর তার ছোট ভাই আলমগীর হোসেনের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চান।”
খবর পেয়ে ওই রাতেই বাগমারা থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এরপর থেকেই অব্যাহত হুমকি পাচ্ছিলেন বলে জানান বিউটি। বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, হুমকিতে ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে না জানতে পেরে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। যত দিন তিনি পরীক্ষা দেবেন তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা-নেয়া করবে পুলিশ। বোন, বোনের স্বামীসহ ৫ জনের নামে ওই ছাত্রীর মামলা দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন ওসি।