মাস্কের সাথে হ্যান্ডগ্লাভসও সংকট
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৫:৪৮,অপরাহ্ন ০৯ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৫১০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বাংলাদেশে ৩ জন রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত- এমন খবর প্রকাশের পর পরই মাস্কের দাম বেড়ে গেছে ৪ থেকে ৫ গুণ।
রবিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যার পর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে সব ধরণের মাস্ক।
শুধু তাই নয়, মাস্কের সাথে ওষুধের দোকানগুলোতে বিক্রি হয়ে গেছে সব ধরণের হ্যান্ডগ্লাভসও।
আইইডিসিআর এর ঘোষণার পর সরেজমিনে রাজধানীর তেজকুনীপাড়া, ফার্মগেট, ইন্দীরা রোড, গ্রীন রোড ও কারওয়ান বাজার এলাকায় মাস্ক ব্যবসায়ী ও ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এক থেকে দেড় ঘণ্টায় শেষ মাস্ক
কারওয়ান বাজারের মাস্ক ব্যবসায়ী তারেক রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় সব মাস্ক শেষ। প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ পিছ মাস্ক বিক্রি করেছি।
তবে প্রথম এক থেকে দেড় ঘণ্টায় অনেক কাস্টমার এসেছে। তখনই ৪ ভাগের ৩ ভাগ মাস্ক বিক্রি হয়ে গেছে। এই সময় ৬শ’ থেকে ৭শ’ পিছ মাস্ক বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফার্মগেটের বদরুল আলম নামের আরেকজন হকার বলেন, আমার কাছে কয়েক ধরনের মাস্ক ছিল। যেমন-কাপড়ের নরমাল মাস্ক, বাংলা ফিল্টার মাস্ক, চায়না ফিল্টার ফিল্টার মাস্ক। এছাড়াও ছিল টিস্যু পেপারের তৈরি ওয়ান টাইম মাস্ক। সন্ধ্যার পর করোনা ভাইরাস বাংলাদেশকে আক্রমণ করেছে এমন খবর শোনার পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মাস্ক কেনার জন্য।
তিনি বলেন, দাম নিয়ে কারো সাথে দ্বিতীয়বার কথা বলতে হয়নি। সবাই আসছে আর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে মুহূর্তেই সব মাস্ক শেষ হয়ে গেছে। সারাদিন তেমন বেচাবিক্রি না হলেও সন্ধ্যার পর এক হাজার থেকে ১২শ পিছ মাস্ক বিক্রি হয়েছে।
তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি কিনছে চায়না ফিল্টার মাস্ক। এই মাস্কটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান ফুটপাতের এই ব্যবসায়ী।
পাইকারি দোকানেও মাস্ক শেষ জানিয়ে বদরুল বলেন, রাত ৮টার পর পাইকারি দোকানে সব বিক্রি হয়ে গেছে। ৬০ টাকা ডজনের (প্রতি পিছ ৫ টাকা) মাস্ক পাইকারি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি প্রতি পিছ কেনা পড়েছে ২০ টাকায়।
ফার্মসীগুলোতে মাস্কের সাথে সাথে শেষ হ্যান্ডগ্লাভসও
ওষুধের দোকানে সাধারণত টিস্যু পেপারের তৈরি ওয়ানটাইম মাস্ক বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এসব এলাকার কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি দোকানে খোঁজ করে কোথাও পাওয়া যায়নি মাস্ক।
গ্রীন রোডের রেজওয়ান ফার্মেসীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, শুধু মাস্ক নয়, তাদের কাছে থাকা হ্যান্ডগ্লাভসসহ বিভিন্ন ধরণের সার্জিক্যাল অ্যাক্সেসোরিজ বিক্রি হয়ে গেছে ১ ঘণ্টার মধ্যেই।
ফার্মগেটের জননী ফার্মেসীর বিক্রেতারা বলেন, আতঙ্কে ভুগছে মানুষ। ফলে অল্প সময়ে সব মাস্ক ও গ্লাভ্স বিক্রি হয়ে গেছে। বলতে গেলে মূহুর্তেই ফার্মেসীতে জট লেগে গেছে কাস্টমারে।
দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ
মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে মাস্কের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। বিকেলে চায়না ফিল্টারের একটি মাস্ক ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর তা এক লাফে উঠে যায় ১০০ টাকায়। রাত ৮টার পর তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ টাকায়। একইভাবে ধাপে ধাপে বেড়ে ২০ টাকার বাংলা ফিল্টার মাস্ক বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, ১০ টাকার টিস্যু পেপারের তৈরি ওয়ানটাইম মাস্কের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। আর নরমাল কাপড়ের ১০ টাকার মাস্ক বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
ক্রেতাদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ
করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশ আক্রান্ত এমন খবরে মূহুর্তেই সামান্য টাকার একটা পণ্য আকাশচুম্বী হওয়া কোনোভাবেই মেনে যায় না বলে জানান সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর ইন্দিরা রোডে ফুটপাত থেকে ১৫০ টাকায় একটি চায়মা ফিল্টার মাস্ক কিনেছেন রাহেলা বেগম নামের একজন ক্রেতা।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাকাতি ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে। ৩০/২০ টাকার মাস্ক কিনতে হয়েছে ১৫০ টাকায়। কেবল করোনা আক্রান্তের খআর শোনা গেলো। এরমধ্যেই মাস্কের দাম এত বাড়লো। যদি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট কাটবে।
রাহেলা বেগম বলেন, সরকারের মনিটরিং টিমকে এখনই বাজারে তদারকি করতে হবে। মাস্কসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম হাতের নাগালে নিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় গরীব মানুষেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।