‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’: বাগদাদে শোক মিছিলে স্লোগান
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৫:১০,অপরাহ্ন ০৪ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৫৪৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত হওয়ায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলেইমানির জানাজায় যোগ দিয়েছে অসংখ্য মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি অপারেশনের দেখভাল করতেন কাশেম সোলেইমানি। তার মৃত্যুর ‘বড় ধরণের প্রতিশোধ’ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
বাগদাদে শোক মিছিলে অংশ নেয়া মানুষজন ইরাকি এবং মিলিশিয়া বাহিনীর পতাকা বহন করে এবং শ্লোগান দেয়, ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’।
শহরের অনেকগুলো রাস্তা জুড়ে মিছিল চলে। তাদের অনেকের হাতে ছিল সোলেইমানি এবং ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবি। তার মৃত্যুতে কয়েকদিন ধরে শোক পালন করতে যাচ্ছে ইরান ও ইরাকের সমর্থকরা। পরবর্তীতে তার মৃতদেহ ইরানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং নিজ শহরে দাফন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) মার্কিন এক হামলায় কাশেম সোলেইমানিসহ মোট ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু মাহদি আল-মুহানদিস, যিনি ইরানের সমর্থনপুষ্ট খাতিব হেজবুল্লাহ গ্রুপের কমান্ডার এবং ইরাকি মিলিশিয়াদের একটি জোট পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের নেতা ছিলেন।
ইরাকে আবার মার্কিন হামলা
ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, সোলেইমানির মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবারও দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওই হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরাকের একজন সেনা জেনারেল। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এই হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সম্পৃক্ত থাকার তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন।
ঠিক কী কারণে জেনারেল সোলেইমানিকে হঠাৎ করে হত্যা করা হলো, তার কোন বিস্তারিত কারণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরু করতে নয় বরং বন্ধ করতেই’ ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা কাশেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে সোলেইমানির ‘সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান’ হয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তার ওপর হামলার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছিলেন ‘খুব ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে।
হামলার পর যেকোনো উপায়ে অতিসত্বর আমেরিকান নাগরিকদের ইরাক ছাড়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরান কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
সোলেইমানির মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে, দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি বলেন: “স্রস্টার উদ্দেশ্যে তার যাত্রা, তার পথ বা মিশনকে থামাতে পারবে না, অপরাধীদের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে যারা তার এবং অন্য শহীদদের রক্তে হাত রাঙিয়েছে।”
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া এক চিঠিতে, ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভাঞ্চি বলেন যে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে তেহরানের।
ইরাক কীভাবে এর অংশ হলো?
ইরাকের বেশ কয়েকটি মিলিশিয়া গ্রুপকে সহায়তা করে ইরান। সোলেইমানি মাত্রই ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে এসে নেমে মিলিশিয়া বাহিনীর অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি কনভয়ে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের গাড়ি বহরে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি মিসাইল আঘাত করে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয়েই ইরাকের মিত্র দেশ।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপ সামলাতে সহায়তা করার জন্য কয়েক হাজার মার্কিন সেনা ইরাকে রয়েছে। তবে ইরাকি সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির বাইরে গিয়ে আচরণ করছে।
এই মিসাইল হামলাকে ইরাকে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং জাতীয় গর্বের ওপর আঘাত বলে বর্ণনা করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি।
রোববর (০৫ জানুয়ারি) এ নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইরাকের পার্লামেন্ট।
কাশেম সোলেইমানি কে ছিলেন?
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করা হতো ৬২ বছর বয়সী সোলেইমানিকে।
ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) এর এলিট ইউনিট কুদস ফোর্স সরাসরি আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির কাছে জবাবদিহি করতো। সেখানে এর নেতৃত্বে থাকা সোলেইমানিকে বীরত্বপূর্ণ জাতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হতো।
কুদস বাহিনীকে তার ২১ বছরের নেতৃত্বের সময় ইরান লেবাননে হেজবুল্লাহ এবং অন্যান্য ইরান-পন্থী চরমপন্থিদের সহায়তা দিয়েছে; ইরাক এবং সিরিয়ায় সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করেছে; সিরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করেছে। তথ্য সূত্র- বিবিসি।