পুতিনের ঘোষণা ইউক্রেনে আর কোনো বড় হামলা ঘটবে না
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৫:৩৭,অপরাহ্ন ১৫ অক্টোবর ২০২২ | সংবাদটি ৬১৮৭ বার পঠিত
ইউক্রেনে রুশ বাহিনী আর বড় কোনো হামলা ঘটাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে চায় না।
এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে ‘রিজার্ভ সেনা’ হিসেবে দেশের সক্ষম নাগরিকদের বাধ্যতামূলক যোগদানের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে তিনি এ ও বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য তিনি অনুতপ্ত নন।
শুক্রবার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে বা পরিকল্পনা আমাদের নেই। একটি দেশ ধ্বংস হয়ে যাক, তা আমরা কখনও চাইব না। এই কারণে সেখানে আর বড় কোনো হামলা ঘটবে না।’
‘সেই সঙ্গে আমি আমি আরও একটি তথ্য দিতে চাই; তা হলো—সামরিক অভিযানে রিজার্ভ সেনা হিসেবে রুশ নাগরিকদের নিয়োগের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।’
এশীয় এবং ইউরেশীয় দেশগুলোর জোট কনফারেন্স অন ইন্টার্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) সম্মেলনে যোগ দিতে গত ১৩ অক্টোবর কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় গিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেখানেই আয়োজন করা হয়েছিল এই সংবাদ সম্মেলনের।
আস্তানার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে পুতিনের চিরাচরিত গম্ভীর-দৃঢ় চেহারা দেখা যায়নি, বরং এদিন তার চেহারা ও কণ্ঠস্বর ছিল বেশ কোমল।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম অঙ্গরাজ্য ইউক্রেন ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ সরাসরি রুশ বংশোদ্ভূত এবং রুশভাষী। সোভিয়েত আমলে রুশ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় জনগোষ্ঠীর মোটামুটি সদ্ভাব বজায় থাকলেও ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর দ্বন্দ্ব শুরু হয় এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
ইউক্রেনের রুশভাষী লোকজন বরাবরই নিজেদের রাশিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে ইউক্রেনীয়রা সবসময়ই নিজেদের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র জাতি মনে করতে অভ্যস্ত। এটিই মূলত দুই জনগোষ্ঠীল দ্বন্দ্বের মূল কারণ এবং স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনে এই ইস্যুতে দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই ছিল। গত প্রায় ৩ দশকে ইউক্রেনে জাতিগত দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের সীমানাভুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের রুশভাষী জনগোষ্ঠী রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও সরকারকে সরাসরি সহায়তা করেছিল।
এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই রাশিয়ার প্রধান বৈরীপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনৈতিক বলয়ে ঢুকতে দেন-দরবার করছিল ইউক্রেন। রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়া হারানোর পর এই তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের এসব কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয় মস্কো এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। কিন্তু কিয়েভ তাতে কান দেয়নি।
প্রায় চার বছর এই ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলার পর অবশেষে ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন পুতিন।
গত ৯ মাসের অভিযানে ইউক্রেনের চার প্রদেশ খেরসন, ঝাপোরিজ্জিয়া, দনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশ দখল করে নিজের সীমানভূক্ত করেছে রাশিয়া। হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, ছোট-বড় প্রায় সব শহর গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।
অভিযানে অবশ্য রাশিয়ারও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা। এছাড়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাশিয়ার ওপর। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশ বড় ধাক্কা খেয়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি।
তবে আস্তানার সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। কারণ তার মতে, এই অভিযান অবশ্যম্ভাবী ছিল।
‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, (ইউক্রেনে) আজ যা হচ্ছে, তা অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত; কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছিল—তাতে চলতি বছরই, কিংবা তার পরের বছর এই সংঘাত অবশ্যম্ভাবী ছিল এবং সেক্ষেত্রে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হতো আরও অনেক অনেক বেশি। আমরা ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করেছি।’