বায়োমেটিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার বাণিজ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪০:২৮,অপরাহ্ন ১৭ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৮৭ বার পঠিত
নড়াইল থেকে উজ্জ্বল রায়:: নড়াইল সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বায়োমেটিক হাজিরা মেশিন ক্রয় বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সয়ং শিক্ষা অফিসারের এমন বাণিজ্যে ফুসে উঠেছেন শিক্ষকবৃন্দ।
জানা গেছে, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পাল সম্প্রতি সদরের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ডেকে বায়োমেটিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের জন্য তাগিদ দেন। শুধু তাগিদই নয় এক প্রাকর হুমকি দিয়ে মেশিন ক্রয়ে সিন্ডিকেটও তৈরী করেছেন। তিনি পছন্দের একজন ব্যবসায়ীর নিকট হতে একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থে সিন্ডিকেট করে নিম্নমানের বায়োমেটিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ে বাধ্য করছেন শিক্ষকদের।
কিন্তু প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের স্বাধীন ভাবে এ মেশিন ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু স্লিপ এর টাকা থেকে এ মেশিন ক্রয় করা হচ্ছে, সেহেতু এ মেশিন ক্রয় করার জন্য স্লিপ কমিটিই যথেষ্ট। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে স্লিপ কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঘুষখোর উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক নেতাদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি দামে ওই মেশিন কিনতে বাধ্য করছে। নিম্নমানের ওই বায়োমেটিক হাজিরা মেশিনের বাজার ম‚ল্য ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা হলেও সিন্ডিকেটের ধার্যকৃত ২৩ হাজার টাকায় বায়োমেটিক হাজিরা মেশিন কেনানো হচ্ছে। অতিরিক্ত যে টাকা নিচ্ছেন দোকানদারের হাত ঘুরে তা ওই সিন্ডিকেটের নিকট পৌছে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার ১৭৫টি বিদ্যালয়ের সব গুলোতেই ২৩ হাজার টাকায় এই মেশিন ক্রয়ের বিল ভাউচার দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করা হচ্ছে এই বিল ভাউচার সাক্ষর করতে ও মেশিন নেয়ার জন্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুষখোরদের এহেন বাটপারীতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। প্রকাশ্যে এতোবড় অনৈতীক কাজ করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা গত ২৫ জুন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়ে মেশিন ক্রয় আপাতত বন্ধ রেখেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে জেলার লোহাগড়া উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কোম্পানীর মেশিন মাত্র ৯ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায় (ভ্যাট সহ) ক্রয় করেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস স‚ত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ ৫ সদস্যের একটি ‘স্লিপ কমিটি’ এটি ক্রয় করবে। কিন্ত সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পাল সদরের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে মেশিন ক্রয়ে নিজস্ব আইন প্রয়োগ করছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের জিম্মি করে তার বেধেঁ দেয়া ২৩ হাজার টাকা দামে মেশিন কিনতে বাধ্য করছেন।
ধুরন্ধর উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পাল তার অনুগত এক চাটুকার শিক্ষককে দিয়ে যশোরের এক আইটি প্রতিষ্ঠানের বিল ভাউচার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষকের নিকট পৌছে দিচ্ছেন। বিলে কোন টাকার কথা উলেখ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুষখোরদের এহেন বাটপারীতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। সৎ শিক্ষকবৃন্দ ঘুষখোর উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পাল ও তার সহযোগিদের বিরূদ্ধে ঝাড়– মিছিল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পালের সাথে যোগযোগ করলে তিনি বলেন, খুব ভালো মানের মেশিন কম দামে কিনে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের হাতে সময় কম, তারা বেশি দোকান ঘুরতে পারবে না। তাই তাদের যশোরের একটা ভালো দোকান দেখিয়ে দেয়া হয়েছে, ভালো মানের মেশিন কেনার জন্য। তাছাড়া এ মেশিন ক্রয়ের জন্য আলাদা করে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কেউ কোন দুর্ণীতি করতে পারছে না।