ছিটকে পড়লো আর্জেন্টিনা, উড়লো ব্রাজিল!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৮:২২,অপরাহ্ন ০৩ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪১১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: পারলো না আর্জেন্টিনা, পারলেন না লিওনেল মেসি। কোটি ভক্তদের হতাশ করলো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের সঙ্গে হেরে গেল ২-০ গোলো। ম্যাচের শুরুর দিকে গোছানো এক আক্রমণে দলকে এগিয়ে দিলেন গাব্রিয়েল জেসুস। আর দ্বিতীয়ার্ধে রবের্ত ফিরমিনোর গোলে রাখলেন মূখ্য ভূমিকা। তরুণ এই ফরোয়ার্ডের নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল।
বেলো হরিজন্তের মিনেইরো স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে সেমি-ফাইনালে ২-০ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা।
ম্যাচের শুরুতে কিছুটা এলোমেলো খেলা আর্জেন্টিনা দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো। লেয়ান্দ্রো পারেদেসের আচমকা নেওয়া দূরপাল্লার শট ক্রসবার ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে বেঁচে যায় ব্রাজিল।
সাত মিনিট পর প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পেয়েই এগিয়ে যায় তিতের দল। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে দানি আলভেস দুজনকে কাটিয়ে সামনে রবের্তো ফিরমিনোকে পাস দেন। আর লিভারপুলের এই ফরোয়ার্ডের বাড়ানো বল ছোট ডি-বক্সের মুখে পেয়ে অনায়াসে জালে পাঠান জেসুস।
৩০তম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। মেসির ফ্রি-কিকে আগুয়েরোর নেওয়া হেড ক্রসবারে প্রতিহত হত।
প্রথমার্ধের বাকি সময়টা কাটে দুই দলের বিচ্ছিন্ন কিছু আক্রমণে। এর মধ্যে ৪০ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার মার্কস আকুনা এবং ব্রাজিলের অধিনায়ক দানি আলভেস। এছাড়া কোনো গোল না হওয়ায় ১ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তরুণ ফরোয়ার্ড এভারটন সোয়ারেসকে উঠিয়ে উইলিয়ানকে মাঠে নামান ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে। প্রথমার্ধের মতো এবারও শুরুতেই আক্রমণে ওঠে ব্রাজিল। তবে ফিলিপ্পে কৌতিনহোর দুর্বল প্রচেষ্টা থামিয়ে দিতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের।
তবে মিনিটতিনেক বাদে দুই মিনিটের ব্যবধানে ব্রাজিলের রক্ষণে দুইবার হানা দেয় আর্জেন্টিনা। ৫০ মিনিটের মাথায় লাউতারো মার্টিনেজের বাম পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন।
দুই মিনিট পর মেসি, আগুয়েরো ও মার্টিনেজের সম্মিলিত আক্রমণটিকে হতাশায় রূপ দেন রদ্রিগো ডি পল। ডি-বক্সের কোনা থেকে বল মেরে দেন বারের ওপর দিয়ে। ফলে সে যাত্রায়ও কোনো বিপদ হয়নি ব্রাজিলের।
এক গোলের লিডে থাকলেও ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টায় কমতি রাখেনি ব্রাজিলও। ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় হেসুসের নৈপুণ্যে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। তবে সে বলটি পেয়ে বারের ওপর দিয়ে মারেন বার্সেলোনার তারকা খেলোয়াড় ফিলিপ্পে কৌতিনহো।
এ আক্রমণ সাজানোর সময় হেসুসকে অযাচিত ফাউল করায় ম্যাচে আর্জেন্টিনার পক্ষে তৃতীয় হলুদ কার্ড দেখেন হুলেন ফয়েথ। ৫৮ মিনিটের মাথায় চতুর্থ হলুদ কার্ডটি দেখেন লাউতারো মার্টিনেজ।
তার আগে ৫৭ মিনিটের মাথায় আবারও বারে লেগে গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। লাউতারো মার্টিনেজের শট ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে ফিরে এলে বাম পায়ে শট নেন মেসি। কিন্তু সাইড পোস্টে লেগে ফিরে এসে সেটি। ফিরতি বল গোলমুখে বাড়ালেও, জায়গামতো ছিলেন না আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড়। ফলে সে যাত্রায়ও ম্যাচে ফেরা হয়নি আলবিসেলেস্তেদের।
এ আক্রমণের পরপরই জোড়া পরিবর্তন করেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। মার্কস আকুনার বদলে তিনি মাঠে নামান অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে। রদ্রিগো ডি পলের বদলে আসেন জিওভানি লো সেলসো। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কোনো।
উল্টো ৭১ মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ব্রাজিল। এবার গোল করেন রবার্তো ফিরমিনো, তাকে বলের জোগান দেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। মাঝমাঠ থেকে একার নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে বোকা বানিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান হেসুস।
সুযোগ বুঝে পাস বাড়িয়ে দেন ডি-বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো ফিরমিনোর উদ্দেশ্যে। ফাঁকা জালে বল প্রবেশ করাতে কোনো সমস্যাই হয়নি লিভারপুল তারকা ফিরমিনোর। দুই গোলের লিড নিয়ে ম্যাচের ২০ মিনিট বাকি থাকতেই জয়োল্লাস শুরু হয়ে যায় স্বাগতিকদের গ্যালারিতে।
গোল হজম করলেও সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনেও। ডি-বক্সের কাছে দানি আলভেস হ্যান্ডবল করলে গোলের ২০ গজ দূরে ফ্রি-কিক পায় তারা। কিন্তু লিওনেল মেসির শট আটকে যায় রক্ষণ দেয়ালে। সেটি থেকে কর্ণার পেলেও গোল করা হয়নি আর্জেন্টিনার।
ম্যাচের ৮০ মিনিটের মাথায় দুই গোলেরই নায়ক হেসুসকে উঠিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে। তার বদলে আসেন অ্যালান মারকুয়েস লোরেইরা। যিনি দুই মিনিটের মধ্যেই দেখেন ব্রাজিলের পক্ষে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটি।
শেষবারের মতো গোলের চেষ্টায় ৮৫ মিনিটের মাথায় নিকলাস তালিয়াফিকোকে উঠিয়ে পাওলো দিবালাকে মাঠে নামান আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয়নি কিছুই। গোল শোধ করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ২-০ গোলের জয় নিয়েই ফাইনালে উড়ে গেছে ব্রাজিল আর ছিটকে পড়লো আর্জেন্টিনা।