দীর্ঘ ৭৫ বছর পর দেখা প্রেমিক-প্রেমিকার!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০২:০৮,অপরাহ্ন ১৩ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৭৯৩ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দীর্ঘ ৭৫ বছর পর দেখা মিললো প্রেমিক-প্রেমিকার। একে অপরকে দেখেই প্রশ্ন এতদিন কোথায় ছিলেন?’কবি জীবননান্দ দাসের বিখ্যাত সৃষ্টি নাটোরের বনলতা সেন তার‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে’প্রেমিকের কাছে এই প্রশ্নটি করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ৭৫ বছর পর প্রেমিককে দেখে প্রথমে কোনো কথা ফুটেনি প্রেমিকা জেনেই পিয়ারসন নি গেনে ‘র মুখে। নিঃশব্দে তাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেছেন।
১৯৪৪ সালে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা কেটি রবিন্স পূর্ব ফ্রান্সের ব্রায়িতে একটি রেজিমেন্টে নিযুক্ত ছিলেন। জার্মানির দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সে সময় জোট বেঁধে লড়াই করছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। ফ্রান্সের সেই ঘাঁটিতে থাকতে তরুণ রবিন্স প্রেমে পড়েন ফরাসি কিশোরী জেনেই পিয়ারসন নি গেনেই- এর।
কিন্তু প্রেম হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই পূর্ব ফ্রন্টের উদ্দেশ্যে কেটি রবিন্সকে তাড়াহুড়ো করে গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়। ১৮ বছরের প্রেমিকা গেনেকে ছেড়ে আসার সময় রবিন্স কখনও ভাবেননি আবার কখনও তার সঙ্গে দেখা হবে। কোনোদিন প্রেমিককে ফিরে পাবেন এমনটি কল্পনাও করেননি গেনেও। যাওয়ার সময় কেটি রবিন্স জেনেইয়ের একটি ছবি চেয়ে নেন, স্মৃতি হিসাবে।
তারপর দীর্ঘ ৭৫ বছর পেরিয়ে যায়। তাদের দেখা হয়নি ঠিকই, কিন্তু জেনেইয়ের শেষ স্মৃতি হাতছাড়া করেননি রবিন্স। একদিন ফ্রান্সের একদল সাংবাদিক বিশেষ প্রতিবেদনের কাজে মিস্টার রবিন্সের সাক্ষাৎকার নিতে আসেন। ফরাসি সাংবাদিকরা তখন যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন। তাদের সঙ্গে দেখা হতেই ফ্রান্সের প্রচারমাধ্যম ফ্রান্স-টু এর সাংবাদিকদের জেনেই-এর সেই ছবিটি দেখান রবিন্স।
তিনি তাদের কাছে ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে জেনেইকে খুঁজে বের করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে এই সাক্ষাতের কয়েক সপ্তাহ পরেই রবিন্স ডি-ডে ল্যান্ডিং অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং এর ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফ্রান্সে যান। তিনি তখন ভাবতেও পারেননি সেখানে তার জন্য কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
রবিন্সকে চমকে দিতে, ফ্রান্সের ওই সাংবাদিকরা আগে থেকেই সেই নারীর খোঁজ বের করেন। এরপর মুখোমুখি করেন দুজনকে। দীর্ঘ ৭৫ বছর পর দেখা হতেই তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন। সে সময় বৃদ্ধ প্রেমিক রবিন্সের গায়ে ছিল সামরিক পোশাক। আর জেনেই কালো পোশাকে নিজেকে সাজিয়েছিলেন পরিপাটি করে।
পরে মিজ গেনেই সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সবসময়ের রবিন্সের কথা মনে করতেন। আশা করতেন যে, একদিন রবিন্স নিশ্চয়ই ফিরে আসবে।
নিজেদের আলাদা হওয়ার মুহূর্তটি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে স্মৃতিচারণ করেন মিজ গেনেই। তিনি বলেন, ‘রবিন্স যখন ট্রাকে করে ফিরে যাচ্ছিল, আমার মন এতোটাই ভেঙে পড়েছিল যে আমি ভীষণ কাঁদছিলাম। আমি আশা করেছিলাম যুদ্ধ শেষে সে হয়তো আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবে না।’
তবে বাস্তবে এই দীর্ঘ সময়ে তাদের একবারের জন্যও দেখা হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপের কথাও জানান মিজ গেনেই।
সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘রবিন্স এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কেন ছিল? আমার কাছে আরও আগে কেন ফিরে আসেনি ও? আমি ভাবি, যদি সে আরও আগে ফিরতো!’
রবিন্সের প্রেমিকা জেনেই বাস্তবতা মেনে নিয়েই বিয়ে করেছেন। সেই সংসারে তার পাঁচজন সন্তান রয়েছে।
থেমে নেই রবিন্সের জীবনও। তিনিও বিয়ে করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিজের পরিবার নিয়ে থাকছেন তিনি। তবে তারা দুজনই এখন নিজেদের সঙ্গীকে হারিয়েছেন। তাদের জীবন চলছে জীবনের নিয়মে। তাই দেখা করার পর তার ফিরে গেছেন যে যার স্থানে।
তবে বিদায় নেয়ার আগে তাদের আশা, ‘আবার হবে গো দেখা/ এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো’।