গোলাপগঞ্জ উপজেলাবাসীকে প্রশাসনের হুঁশিয়ারি সংকেত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৬:৫২,অপরাহ্ন ০২ মে ২০১৯ | সংবাদটি ১৩২৮ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: ঘুর্ণিঝড় ‘ফনি’ বিষয়ে সকলকে হুঁশিয়ারি সংকেত দিয়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। সাথে সাথে প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিগণ তাদের নিজ নিজ এলাকার নাগরিকদের সতর্কতা প্রদানেরও নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিত কোন বিজ্ঞপ্তিতে এ হুঁশিয়ারি সংকেত না পাওয়া গেলেও বৃহস্পতিবার গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজে এরকম একটি সংকেত প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত সংকেতটি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো:
‘ঘুর্ণিঝড় ফনি’ বিষয়ে হুঁশিয়ারি সংকেত । উপজেলার সকল কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে অবস্থান করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে । স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। গোলাপগঞ্জ উপজেলার কন্ট্রোল রুমের নম্বরসমূহ-
উপজেলা নির্বাহী অফিসার- 01730331035
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার- 01716740982।
এছাড়া গোলাপগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে শহরজুড়ে মাইকিং করাচ্ছেন।
আমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহেল আহমদ তিনিও ফেসবুকে তার নিজস্ব ওয়ালে ইউনিয়নের সকল নাগরিকদের সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।
চেয়ারনের দেয়া পোস্টটিও তুলে ধরা হলো:
সম্মানিত ৯নং পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের জনসাধারণ,
আপনাদের অবগতির জন্যে জানানো যাইতেছে যে,আগামী ৪ ও ৫ই মে শনি ও রবিবার বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্ত হইতে একটি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হওয়ার/আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।তাই সকলকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা যাইতেছে।
প্রসঙ্গ, বঙ্গোপসাগরে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে ভয়ঙ্কর রূপে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাণ্ডব লীলা দেখাতে পারে। শুক্রবার (৩ মে) ভারতের ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ‘ফণী’র। শক্তি সঞ্চয় করে ধীর গতিতে বঙ্গোপসাগরে ঘোরপাক খাওয়া এই ঝড়ের তাণ্ডবে একেবারে ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ।
ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু বলছে, ১৯৭৬ সালের পর এতো শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি এই অঞ্চল।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে আগামী ৪ মে (শনিবার) বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ তাণ্ডব চালাতে পারে দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায়। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এসব জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলেছে।
এ ব্যাপারে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী বর্তমানে তামিলনাড়ুর বিশাখাপত্তমের পূর্ব উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটার ও পুরি থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
গত ৪৩ বছরে অর্থাৎ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে যতগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে তার কোনোটি কখনই এতো শক্তিশালী আকার ধারণ করেনি।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ সাধারণত ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং এই ঝড় যে কোনো সময় সৃষ্টি হতে পারে। তবে সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শেষে অথবা মে মাসের দিকে এমন ঝড় দেখা দিলেও বেশিরভাগই নভেম্বরে হয়।
এ বিষয়ে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক কে জি রমেশ বলেন, ‘এ ধরনের ঝড় বৈশ্বিক উষ্ণতা পরিবর্তনের ফল। বঙ্গোপসাগরের বায়ুমন্ডলের পরিবর্তনের কারণে এই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে…।’
‘বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে এখন আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি এবং পূর্ব সতর্কতা নিতে হবে। তবে এই ঝড়ের কারণে আগাম বর্ষা শুরুর সম্ভাবনা নেই।’
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের ঘূর্ণিঝড়-পরিসংখ্যান শাখা বলছে, ‘১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে মোট ৪৬টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছিল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। এছাড়া সাতটি মে মাসে এবং ১৯৬৬ ও ১৯৭৬ সালে মাত্র দুটি ঝড় সৃষ্টি হয় এপ্রিল মাসে।
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ধ্বংসাত্মক শক্তি সঞ্চয় করে বুধবার দুপুরের দিকে সাগরের সামান্য উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। শুক্রবার ভারতের ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ‘ফণী’র।