গোলাপগঞ্জের বৃহৎ আনারস বাগান ভ্রমন বিলাসীদের নতুন এক পর্যটন কেন্দ্র
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩২:৪১,অপরাহ্ন ১৭ জুন ২০২০ | সংবাদটি ২৪২৬ বার পঠিত
ইমরান আহমদ: উঁচু-নিচু টিলার বুক চিরে সারি সারি সাজানো-গোছানো আনারস বাগান। থোকা থোকা গাড় সবুজের ডানা মেলেছে ছোট-বড় হাজারো কাঁচা-পাকা আনারস। এমন দৃশ্য সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ দত্তরাইল গ্রামে।
সুন্দর আর মনোরম পরিবেশে পাড়া-গাঁয়ের ভিতরে গড়ে তুলা দৃষ্টিনন্দন এ আনারস বাগানের দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন আশপাশের মানুষ ছুটছেন দত্তরাইল গ্রামে। পাকা আনারসের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। এ আনারস বাগানটি ভ্রমন বিলাসিদের জন্য গড়ে ওঠেছে নতুন এক পর্যটন কেন্দ্র।
প্রায় ৬০ কিয়ার জায়গা নিয়ে পারিবারিকভাবে এ আনারস বাগানটি গড়ে তুলেছেন ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দু’বারের চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার সন্তানেরা। বৃহৎ আকারে গোলাপগঞ্জে এটিই একমাত্র আনারসের বাগান।
জলঢুপী জাতের এ আনারসের বাগানটি দত্তরাইল গ্রামে গড়ে উঠে ২০১৯ সালে। শখের বসে গড়ে তুলা বাগানে এখন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার আনারসের চারা গজিয়েছে। কোন ধরণের রসায়নিক ছাড়া প্রায় ১৮ মাস পরিচর্যা করে এখন শুরু হয়েছে বিক্রি। প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ হাজার পাকা আনারস বিক্রি হচ্ছে। তবে এ আনারস বিক্রি করে আয়ের সব টাকা জমা হচ্ছে মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার নামে গঠিত ‘আব্দুল মতিন চাঁন মিয়া এডুকেশন ট্রাস্টে’। যে ট্রাস্ট শিক্ষাসহ এলাকার অসহায় মানুষের কল্যাণে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
এ পরিবার শুধু আনারস বাগানই নয়, পূর্বে থেকে পেয়ারা, লিচু, তেজপাতা ইত্যাদি বাগানও গড়ে তুলেছেন তারা।
মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার ৮ পুত্র। তাদের কেউ যুক্তরাজ্য এবং কেউ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তারা সকলেই প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত এবং বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে জড়িত। বড় পুত্র আমিনুর রাজা মারুফ, তিনি গোলাপগঞ্জ এসোসিয়েশন অব মিশিগানের সভাপতি। দ্বিতীয় পুত্র রুহুল আমিন রুহেল, তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী, গীতিকার ও একজন কবি। এছাড়া তিনি আব্দুল মতিন চাঁন মিয়া এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি। তৃতীয় পুত্র মামুনুর রাজা সাহেল, তিনি ঢাকাদক্ষিণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা মিশিগানের সহ-সভাপতি। চতুর্থ পুত্র রুহুল কুদ্দুছ জুনেদ, তিনি ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা ইউকের দু’বারের সাধারণ সম্পাদক। পঞ্চম পুত্র রাসেল আহমদ, ষষ্ঠ পুত্র রুহুল কাদির রাজু, সপ্তম পুত্র রুহুল ইসলাম জাবেদ ও সর্বকনিষ্ঠ পুত্র রুহুল আবেদ, তিনি দেশে থাকতে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে ঢাকাদক্ষিণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা মিশিগানের সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়াও ছিলেন সৌখিন বিলাসী। বিশাল বাড়ির আঙ্গিনায় নানা জাতের ফলের বাগান ও মাছ চাষ করে এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের যোগান দিয়েছিলেন। পুর্ব থেকেই তাঁর বাগানের খ্যাতি রয়েছে। ১৯৭৮ সালে স্থানীয় বাংলাদেশ তরুন সংঘের আমন্ত্রণে কানাডা থেকে একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন জাতের বাগান গড়ে তুলার বিষয় জানতে বাংলাদেশে আসলে আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার বাড়িতে প্রায় ৪ মাস বসবাস করেন।
এরই পথ অনুস্মরণ করে সন্তানেরাও আনারস বাগান গড়ে তুলে বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সাম্বলম্ভী হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
যেভাবে গড়ে ওঠে আনারস বাগান: আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার ৫ম পুত্র রাসেল আহমদ প্রবাসে থাকলেও দেশে অকেজ পড়ে থাকা টিলা কিভাবে কাজে লাগানো যায়। সেই চিন্তা থেকেই গড়ে উঠে বিশাল আনারস বাগান। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শ্রীমঙ্গল ভ্রমন করেন সরফরাজ আহমদ সুমন, কাওছার রাজা রতন ও আরমান আলী। প্রবাসে থাকা পরিবারের সকলের সাথে আলোচনা করে আনারস বাগান গড়ে তুলার সিদ্ধান্ত হয়। পরে স্থানীয় ব্যাংকার রইছ উদ্দিনের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে বিশাল আনারস বাগান। এছাড়া তাদের সাথে সহযোগি হিসেবে রয়েছেন সামছুল আলম গোলাপ।
বিশাল এ বাগানে এখন প্রায় ১৫/২০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। এ বাগান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার আনারস ঢাকাদক্ষিণ বাজারসহ আশপাশের প্রায় সকল বাজারেই বিক্রি হচ্ছে।
বৃহৎ এ বাগানটি স্থানীয়সহ আশপাশের মানুষের কাছে দৃষ্টিনন্দন এক জায়গায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ আনারস বাগানটি স্বচক্ষে দেখতে চলে যান দত্তরাইল গ্রামে। অনেকে বাগার ঘুরে ঘুরে দেখে ফেরার সময় সুস্বাদু কয়েক হালি আনারস ক্রয় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
বাগানে যেভাবে যাবেন: প্রাইভেট বা লোকাল গাড়ি দিয়ে বাগানে যাওয়া সম্ভব। সিলেট কদমতলী থেকে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী হয়ে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে যাওয়ার পূর্বে ব্রাক ব্যাংক (ঢাকাদক্ষিণ শাখা) সামনে এসে নামতে হবে। এখান থেকে নিশ্চিন্ত বিএনকে সড়কে আধা কিলোমিটার গেলেই রাস্তার পাশে দেখা যাবে গেইট। যে গেইটে লেখা আছে ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’। গেইট দিয়ে ঢুকে একটু ভিতরে গিয়ে দেখা মিলবে বেশ কয়েকটি উঁচু-নীচু টিলা। এসব টিলায়ই গড়ে তুলা হয়েছে জলঢুপ জাতের সুস্বাদু বিশাল আনারস বাগান।