কানাডায় আমাদের প্রিয়জনেরা কেমন আছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:২৭:৪৮,অপরাহ্ন ০৯ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ১৩৬০ বার পঠিত
কানাডায় আমাদের প্রিয়জনেরা কেমন আছে
করোনায় লকডাউনের দিনগুলি – ১৭
৮ এপ্রিল ২০২০
কানাডা, বিশ্বের সেরা নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় কানাডা সরকার, জনগণ এবং মিডিয়া সহানুভূতি প্রকাশ করেছিল ফলে কানাডাকে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বলা যেতে পারে। বিভিন্ন সূত্র মতে, কানাডায় ৮০ হাজারেরও বেশী বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছে, যাদের অধিকাংশই টরন্টো, ভ্যানকুভের, মন্ট্রিল, ক্যালগ্যারি এবং অটোয়ায় বসবাস করেন।
গতকাল কানাডায় বাংলাদেশী কমিউনিটি অনেকের সাথে কথা হয়েছে। জানতে চেয়েছিলাম করোনা লকডাউনে তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি কান্নার কথা।
কানাডায় আমাদের প্রিয়জনেরা কেমন আছে
করোনায় লকডাউনের দিনগুলি – ১৭
৮ এপ্রিল ২০২০
গোলাম ইজদানী চৌধুরী শিপু। সম্পর্কে মামা শ্বশুর। পরিবার নিয়ে থাকেন কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মন্ট্রিল এলাকায়। স্ত্রী, এক মেয়ে এবং দুই ছেলে নিয়েই তাদের সুখের সংসার। মামা বললেন, বাঙালি অধ্যুষিত মন্ট্রিল এলাকায় এখন আর সেই আগের মত ভিড় নেই। গ্রোসারি দোকানগুলোতে মানুষের উপস্থিতি নেহাত কম। করোনার প্রভাবে তারা চরম দিশেহারা। বর্তমান অবস্থায় খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে প্রবাসীদের জীবনযাত্রা। অনেকেই ঘরে বসে গুনছে সুদিনের প্রহর। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রবাসীদের অনেকেরই কাজ নেই। ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। মামাকে সতর্কতা অবলম্বন করেই কাজে যেতে হচ্ছে প্রতিদিন। মামী মন্ট্রিল শহরে একটি হাসপাতালে কাজ করেন। ভীতসন্ত্রস্ত হলেও দেশের এই দুঃসময়ে কাজে যেতেই হবে। মানুষের সেবা করাই হচ্ছে তাঁর কাজ।
প্রতিদিনই কানাডায় বেড়ে চলেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ৮ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত কানাডায় করোনা ভাইরাসে ৪২৪ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৯,৪৩৮ জন এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪,৫৪৮ জন। খবর এএফপির।
কানাডার ১০টি প্রদেশের সবক’টিতে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রধান মেট্রোপলিটন কেন্দ্র টরন্টো, মন্ট্রিল ও ভ্যানকুভার।
৮ মার্চ রবিবার প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো মারা যান কানাডার এক নাগরিক। কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার ওয়েস্টার্নমোস্ট প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। রয়টার্স।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বনি হেনরি ৯ মার্চ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘লিন ভ্যালি কেয়ার সেন্টারে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত একজন গতকাল মারা গেছেন। সেখানকার আরও দুই বাসিন্দা ও দুই কর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত।’ লিন ভ্যালি কেয়ার সেন্টারে প্রায় ২০০ প্রবীণকে দেখাশোনা করা হয় বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রভিন্সের বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ব্যক্তিগত ও সংগঠন ভিত্তিক ইমেইল দিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন।
এম জয়নাল আবেদীন জামিলের সাথে কথা হলো অনেকক্ষণ। আমরা একই উপজেলার বাসিন্দা। একই সাথে কলেজে লেখাপড়া করেছি। জামিল এখন পরিবার নিয়ে থাকেন কানাডার মন্ট্রিল শহরে। ওখানে ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। গোলাপগঞ্জ এসোসিয়েশনের সভাপতি ছাড়াও এরকম অনেকগুলো সংগঠনের সাথে জড়িত।
জামিল বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার। করোনা পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম বাড়ালে ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ ডলার জরিমানা এবং ১ বছরের জেল দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কানাডা সরকার।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব প্রবাসী শরিফগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়নে আগামী ২০ এপ্রিল ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এম জয়নাল আবেদীন জামিল এই সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক।
কানাডায় বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের অনেকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে। এ পর্যন্ত ৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন কয়েকজন। দেশটিতে আক্রান্ত কমপক্ষে ৩০ জন প্রবাসী।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কানাডার রাজধানী শহর অটোয়ায় কুইন্সওয়ে কার্লটন হাসপাতালে গত ৪ এপ্রিল শনিবার মারা গেছেন বাংলাদেশি শরিয়ত উল্লাহ। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি কানাডিয়ান নাগরিক, যিনি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ছিল শরিয়ত উল্লাহর সংসার। বাংলাদেশের ফেনী জেলার সন্তান নিহত শরিয়ত উল্লাহর দু ভাই কানাডার মন্ট্রিয়েল ও অটোয়া শহরে থাকেন। নিহতের জানাজা কিংবা দাফনের ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি।
গত ৫ এপ্রিল রোববার টরেন্টোর মাইকেল গেরন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাজী তুতিউর রহমান। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বাংলাদেশি। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে, এক ছেলে এবং স্ত্রী রেখে গেছেন। তুতিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ছিলেন।
৬ এপ্রিল সোমবার টরন্টোর এক হাসপাতালে মারা গেছেন মৌলভীবাজার জেলা অ্যাসোসিয়েশন, টরন্টোর উপদেষ্টা আব্দুল বাছিত। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে গুঞ্জন থাকলেও তাঁর পরিবার বলছে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন বাঙালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্রেটার ফরিদপুর জেলা অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার সভাপতি সালাম শরীফ।
সরকারি নানা সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা নানাভাবে করোনা মোকাবিলায় সচেতনতা ও সহযোগিতামূলক কাজ অব্যাহত রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৩ জন। চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লাখ ৬০ হাজার ২৪৭ জন।
##
আনোয়ার শাহজাহান
৯ এপ্রিল ২০২০
লন্ডন।