রমজানের তাৎপর্য নিয়ে মনীষীদের মতামত – আফতাব চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২৩:০৯,অপরাহ্ন ২৩ মার্চ ২০২৪ | সংবাদটি ৬৬১ বার পঠিত
আফতাব চৌধুরী, সিলেট:
পবিত্র রমজান বিশ্ব মানবের জন্য আল্লাহতালার অনন্ত করুণার এক অন্যতম নিদর্শন। মহান ধর্ম ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ এই রমজান মাসের রোজা তথা উপবাসব্রত পালন করা। মানবকে মানবতার উচ্চ সোপানে আরোহণ করাবার এক মহতী প্রচেষ্টা নিয়ে বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহতায়ালা রমজানকে ধরাবক্ষে পাঠিয়েছেন। মানব চরিত্রে যে সমস্ত মহৎ গুণের সমন্বয় ঘটলে প্রকৃত মানব নামের অধিকারী হওয়া যায় এবং যে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে সমর্থ হলে আল্লাহতালার নৈকট্য লাভ করা যায়, তারই প্রকৃষ্ট সাধনা হলো এই রমজানের সিয়াম সাধনা।
আরবি নবম মাস রমজান, এই রমজান মাসেই রোজা তথা উপবাসব্রত পালনের নির্ধারিত সময়। তাই এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের মুসলমানরা এই মাসেই একই নিয়ম-পদ্ধতিতে এবং একই নীতি অনুসারে টানা একমাসই এই ব্রত পালনে সচেষ্ট হন। সুর্যোদয়ের ঘন্টা দুয়েক পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার, ইন্দ্রিয়তৃপ্তিমূলক কাজ এবং যাবতীয় কুকর্ম হতে বিরত থাকার নামই রোজা তথা উপবাস থাকা। ‘রমজান’ শব্দটি ‘রমজ’ ধাতু হতে উৎপত্তি। সুতরাং এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো আগুনে পুড়িয়ে ছাই ভষ্ম করা। সেই হেতু এই রমজানের উপবাসব্রত পালনে মানবের অন্তরের কলুষ কালিমাকে জ্বালিয়ে নির্মল এবং পবিত্র করে তোলে। যেমন একটি সদ্যোজাত শিশুসন্তান মাতৃগর্ভ হতে নিষ্পাপ নিষ্কলুষ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। এই রমজান ব্রত ইসলাম জগতের রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, ফকির-ভিখারি সর্বশ্রেণীর বয়ঃপ্রাপ্ত নর-নারী সবার উপরই বাধ্যতামূলক। এই টানা একমাস উপবাসব্রত পালনে মানবকূলকে ত্যাগ, সংযম, তিতিক্ষা, সাম্য, মৈত্রী, পরস্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। বিশেষত ইসলাম জগতের বিত্তবান ধনী স¤প্রদায় এই ব্রত পালনের মাধ্যমে সমাজের নিঃস্ব গরিব-দুঃখীর ক্ষুধা-তৃষ্ণার জঠর জ্বালা-যন্ত্রণা কীরূপ তা আপন অভিজ্ঞতা দ্বারা হৃদয়ঙ্গম করতে সমর্থ হন। যেহেতু তাঁরা চিরদিন সুখের অঙ্কে লালিত-পালিত, অভাব-অনটন এবং অনশনের দহনে কখনও পোড়েনি- তারাই ক্ষুধার্তের অন্তরের দুঃখ এবং অনশনক্লিষ্ট মানুষের দুঃখ-বেদনা কীরূপ তা বুঝতে পারেনি? তাই এই রমজানের উপবাস পালনের মাধ্যমেই তা অবগত হন।
মানব জীবনে যত প্রকার দুঃখ, বেদনা ও জ্বালা-যন্ত্রণা আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুঃখ হলো অনশনের দুঃখ এবং সবচাইতে বড় জ্বালা হলো জঠর জ্বালা। এই ক্ষুধার জ্বালায় ধার্মিকও খোদার প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠে। মা নিজ সন্তানকে বিক্রি করে, এমনকী কতই না বিষ পান করে, পানিতে ডুবে ও গলায় দড়ি দিয়ে প্রাণ বিসর্জন করে। তাই বিশ্বস্রষ্টা জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে দুঃখীর দুঃখ ও অনশনক্লিষ্ট মানবের অনশনের সূতীব্র জ্বালা বোঝাবার জন্য তাঁর সৃষ্ট মানব জাতির উপর রোজা তথা উপবাসব্রত পালন ফরজ অর্থাৎ অপরিহার্য করে দিয়েছেন। দূর্দশাগ্রস্থ জনসাধারণের দুঃখ নিজের জীবন দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করার প্রকৃষ্ট পন্থা হলো- রমজানের রোজা, শুধু তাই নয় উদারতা, বদান্যতা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, সততা প্রভৃতি মহৎ গুণ নিজের জীবনে রূপায়িত করার এবং অভ্যাসে পরিণত করার শ্রেষ্ট উপায় হলো এই রমজানের সাধনা। এমনকী দৈহিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনেরও অন্যতম প্রধান সহায়ক এই রমজান।
এই রোজা তথা উপবাসব্রত পালন শুধু আত্মারই উৎকর্ষ সাধন করে না সেইসঙ্গে মানব দেহের উপর তার প্রচুর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। যেহেতু এক মাসের নিরবচ্ছিন্ন উপবাসে দেহের বিপূল পরিবর্তন সাধিত হয়। শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, রাসায়নিক উপাদান, বায়ু-পিত্ত-কফ ও রক্তের ঘন্টায় ঘন্টায় অজ্ঞাতে পরিবর্তন সাধিত করে। প্রতিনিয়ত রোজাদারের হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া, রক্ত চলাচল, মূত্রগ্রন্থি ও যকৃতের ক্রিয়া, রক্তের নানা উপাদানের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। কেননা মানব পাকস্থলি একটি ‘যন্ত্র’ বিশেষ। সারা বছর একটানা খাদ্যবস্তু হজম করানো কাজের ফলে দূর্বল হয়ে পড়ে। তবে একমাস উপবাসের ফলে পাকস্থলি দিনের বেলায় বিরতি লাভ করে কর্মশক্তিতে সতেজতা লাভ করে এবং নানা প্রকার পেটের পীড়া থেকে রোজাদার নিস্কৃতি লাভ করে। বহুমূত্র রোগের একমাত্র মহৌষধ এই রোজার কৃচ্ছ সাধনা। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডাক্তারগণ বহুমূত্র রোগীদের সপ্তাহে একদিন উপবাস পালনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, দীর্ঘজীবন লাভ করার জন্য আহারের প্রয়োজনীয়তা খুব কম। ‘বেশি বাঁচবে তো কম খা’ প্রবচনটি সত্য।
বিশ্বস্রষ্টা মহাগ্রন্থ কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘হে বিশ্বস্ত মোমেন স¤প্রদায় এই রোজাব্রত তোমাদের শুল্কচারী ও খোদা ভীরু করার জন্য অবধারিত করা হয়েছে- যা পূর্বেও অবধারিত ছিল।’এই রমজান মাসে উম্মতে মোহাম্মদিগণকে যা দান করা হয়েছে তা অন্য কোনও নবীর উম্মতকে দেওয়া হয়নি। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহপাকের কাছে মৃগনাভী অপেক্ষা প্রিয়। সাগরের মৎস্যসমূহও আল্লাহর কাছে ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে। রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন বেহেশতকে সুসজ্জিত করে আল্লাহ ঘোষনা করেন- দুনিয়াতে নেকবান্দা সকল দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে শীঘ্র ফিরে এসে জান্নাতে প্রবেশ করবে? বেহেশতের ভিতর আটটি দরজার মধ্যে ‘রায়হান’ নামক একটি দরজা আছে, যার মধ্যে দিয়ে একমাত্র রোজাদারগণ প্রবেশ করতে পারবে, অন্য কেউই প্রবেশ করতে পারবে না।এই রমজান মাসে দুর্বৃত্ত মানবের চিরশত্রæ শয়তানকে শৃঙ্খলাবব্ধ করে রাখা হয়, ফলে রোজাদার প্রকাশ্য পাপ কাজ করতে পারে না যা অন্য মাসে অনায়াসে করতে পারে। আল্লাহ নিজেই রোজাদার। তিনি সর্বপ্রকার পানাহার থেকে মুক্ত। অতএব রমজান আল্লাহতালার প্রিয়বস্তু, তাই রোজাদারগণও আল্লাহর কাছে প্রিয়পাত্র। রোজাদারের রাতের নিদ্রা ইবাদত ও তার পক্ষে নীরবতা পালন করা তসবিহস্বরূপ গণ্য হয়। রমজানের রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা ছিন্নভিন্ন করা হয়। সৈনিক যেমন রণক্ষেত্রে ঢাল দিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাত প্রতিরোধ করে তেমনি রোজাদার ব্যক্তি তার রোজাদ্বারা মহাশত্রæ শয়তানের কবল থেকে আত্মরক্ষা করে। রোজা পাপের প্রতিবন্ধকস্বরূপ।
এই পবিত্র রমজান মাসে পাঁচটি ঐশী মহাগ্রন্থ পাঁচজন বিশিষ্ট নবীর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। সেইগুলো হলো- ১) রমজানের প্রথম রাত্রিতে হজরত ইব্রাহিমের উপর ‘ছহিফা’। ২) চতুর্থ রাত্রিতে হজরত মুসার উপর ‘তৌরিত’। ৩) বারই রাত্রিতে হযরত দাউদের উপর ‘জবুর’। ৪) আঠারই রাত্রিতে হজরত ঈসার উপর ‘ইঞ্জিল’। ৫) বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর শবেকদরের রাত্রে ইসলামের সংবিধান মহাগ্রন্থ ‘কুরআন’ লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হয়। এরপর পূর্ণ তেইশ বছর ধরে প্রয়োজন সাপেক্ষে মহানবীর প্রতি প্রত্যাদেশরূপে প্রেরিত হয়। এই শবেকদরকে মহান আল্লাহ জোৎস্নাপ্লাবিত রজনীতে দান না করে অমানিশার ঘোর আঁধারে দান করেছেন, যাতে বান্দাহগণ আল্লাহর প্রেমলাভের জন্য বিনিদ্র রজনী যাপন করে তাঁর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। ওই রাত একহাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতের সমতুল্য পূণ্য সঞ্চয় হয়। এই রমজানের প্রথম দশদিন রোজাদারের উপর রহমত, দ্বিতীয় দশদিন পাপীতাপীদের পাপ মাফ করে দেন এবং তৃতীয় দশদিন পাপীদের নরকের আগুন থেকে নাজাত করে দেন।
আরামপ্রিয়তা সব অনিষ্টের মূল। তবে রমজান মাসে আরাম হারাম হয়ে যায়। যেহেতু রোজাদারের ধারাবাহিক রুটিনের মতো রমজান মাসের সময় অতিবাহিত হয়। এতে বৈষয়িক আরাম লওয়ার কোনও সুযোগই থাকে না।
একদা হযরত মুসা (আঃ) করজোড়ে মোনাজাত করে আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেন, হে পাকজাত আপনি উম্মতে মোহাম্মদিকে উৎকৃষ্ট কি দান করেছেন। এর উত্তরে আল্লাহ বলেন, ‘আমি উম্মতে মোহাম্মদিকে উৎকৃষ্ট রমজান মাস দান করেছি, যেহেতু এই মাসের মর্যাদা এইরূপ তোমাদের সর্বসাধারণের মধ্যে ‘আমার’ মর্যাদা ও সম্মান যেমন অতুলনীয়। অন্যান্য মাস অপেক্ষা রমজান মাসের মর্যাদা তেমনি অতুলনীয়। এমনকী আল্লাহ আরও বলেন, এই রমজান মাসে যারা রোজা রাখবে আমি তাদের আমলনামায় দুনিয়ার সমস্ত ফেরেস্তা ও জীব-জন্তুর অর্জিত পূণ্য লিখে দেব। তখন হজরত মুসা আক্ষেপ করে বললেন, ওহে প্রভু কেন আমাকে সেই পরম উম্মতে মোহাম্মদির অর্ন্তভুক্ত করলেন না।?’
ইসলামের সংবিধানে কয়েকটি জিনিষের উপর ছদকা তথা জাকাত (দান-খয়রাত) নির্ধারিত হয়েছে, যেমন ধনী ব্যক্তিদের ধনের প্রাচুর্যের উপর চল্লিশ অংশের এক অংশ টাকা পয়সা দান করা ‘জাকাত’ নামে অভিহিত। তেমনি মানব শরীরের জাকাত হলো রোজা তথা উপবাস থাকা। নির্ধারিত রমজান মাসে এবং এই উপবাস ব্রত পালনের জাকাত হলো ‘ফিতরা’।
ইসলামের মহান সাম্যবাদ নীতি এই জাকাত ও ফিতরার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই জাকাত ও ফিতরা সঠিক হিসেবে আদায় করা হলে সমাজের দুস্থ-দরিদ্র, গরিব-মিসকিনের দুঃখ-কষ্ট আংশিক হিসেবে লাঘব হবে। ফিতরা আদায় না করলে এই রোজা খোদার কাছে গৃহীত হয় না, বরং এই রোজা আকাশ ও পৃথিবীর মধে ঝুলন্তথাকে।
প্রাচ্য ও পশ্চাত্যের অমুসলিম কতিপয় মনীষী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইসলামী প্রথায় রোজা তথা উপবাস ব্রত পালনের উপকারিতার কথা অকুন্ঠচিত্তে স্বীকার করে তাদের ব্যক্তিগত উক্তি ব্যক্ত করেছেন। এখানে কয়েকটি বিশেষ উক্তি ব্যক্ত করা হলো-
১.মুসলামানগণ যে ধারাবাহিক প্রথায় রোজা রাখে তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিধানসম্মত এবং দেহের পক্ষে অতিশয় হিতকর- ডা. লিড ফার্ট, জার্মানি। ২) ইসলামী রোজা দেহ ও আত্মার প্রাণ। মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব বেশি হয় এবং এর ফলে দেহের প্রধান-প্রধান অঙ্গগুলোর ক্লান্তিলাঘব হয় এবং সেগুলো শক্তিশালী হয়- ডা. এফ এম গ্রিফি, লন্ডন। ৩) রোজা দ্বারা সমস্ত দেহ পবিত্র হয় এবং দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ পায়, যার ফলে সেগুলোর কার্য পূর্বাপেক্ষা দ্রæততর ও সুষ্ঠু হয়- ডা. মেকারিয়াস, গ্রিস। ৪) রোজা রক্ত প্রবাহকে ঠিক রাখে এবং মেধা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে- ডা. জিওগেøাভিচ। ৫) ইসলাম যে রোজার বিধান দিয়েছে তা নানাবিধ আত্মিক ও দৈহিক উপকারের আকর- ডা. জি সি গুপ্ত, মুম্বই। ৬) রোজা মানুষের পাপ ও অপরাধপ্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং চিন্তাভাবনাকে কলূষিত হতে দেয় না- ডা. সি ফ্রয়েড। ৭) রোজা মানসিক রোগের প্রতিষেধক, তা আত্মাকে নির্মল পবিত্র রাখে- ডা. স্যামুয়েল আলেজান্ডার। ৮) রোজা কয়েক প্রকার ব্যাধিকে বিদূরিত করে, বিশেষত কফজনিত রোগগুলো- ডা. এম ক্লাইভ। ৯) রোজা আত্মার খোরাক- ডা. জ্যাকব। ১০) কর্কশ মেজাজের ও অবিবাহিত লোকদের জন্য রোজা পরম উপকারী। এতে মনের চিন্তাধারা পবিত্র থাকে এবং অসৎ ধারণার উদ্রেক হতে পারে না- ডা. আব্রাহাম জে হেনরি। ১১) রোজা দ্বারা মানুষের ভিতর ও বাইরের সব গ্লানি ও কলুষতা দূর হয়ে যায় এবং তা মানসিক ও দৈহিক রোগসমূহের প্রতিষেধক- ডা. জোসেফ। ১২) রোজা অন্তরে শান্তি, ধৈর্য ও স্বস্তি সৃষ্টি করে। এর দ্বারা সহনশীলতা বাড়ে এবং কষ্টসহিষ্ণুতার অভ্যাস গড়ে ওঠে- ডা. হেনরি এডওয়ার্ড। ১৩) মনের শান্তিলাভের জন্য রোজা উৎকৃষ্ট পন্থা- ডা. খান লিমার্ড। ১৪) বিপদ-আপদ ও ক্ষুধা-পিপাসার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য রোজার চাইতে অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই- ডা. সিগার।১৫) পরলোকগত মহাত্মা গান্ধী ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। তিনি অধিকাংশ সময় ব্রত পালন করতেন। নিজের ধর্মানুসারে যোগসাধানা করতেন। কিন্তু এক স্থানে ইসলামী রোজা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, মুসলামগণ যে পদ্ধতিতে রোজা রাখে তা অন্য ধর্মীয় ব্রত ও উপবাসের সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। ইসলাম এ ব্যবস্থা মুসলমানদের শিক্ষা দিয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি ও আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। সত্য বলতে কী- নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এ ব্যবস্থা অনুসরণ করলে নানাবিধ আধ্যাত্মিক সুফল পাওয়া যায় এবং পরমাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়। ১৬) জনৈক আমেরিকান লেখক মি. ভলক্রিট লিখেছেন- অন্তরের নির্মলতা, দেহের পরিচ্ছন্নতা, আত্মার পবিত্রতা এবং চিন্তার উৎকর্ষের জন্য রোজার চাইতে উত্তম ব্যবস্থা আর কিছুই নেই যা ইসলাম তার অনুসারীদের দান করেছে। ১৭) জার্মান অধ্যাপক সোর্ড একটি পত্রিকায় লিখেছেন, বিভিন্ন ধর্মে উপবাসের মাধ্যমে অন্তরের শুদ্ধতা ও আত্মার পবিত্রতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চালু রয়েছে বটে কিন্তু নিয়মানুগতা ও মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যের দিক দিয়ে এর উৎকৃষ্ট নিদর্শন একমাত্র ইসলামেই পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেছেন যে, প্রভাতের লক্ষণসমূহ প্রকাশের পূর্বে সেহরি গ্রহণ এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা বিশ্ব প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ১৮) পন্ডিত বিদ্যাসাগর কাশ্মীরি তাঁরই এক প্রবন্ধে লিখেছেন- ইসলামের ব্রত তথা রোজা অন্যান্য সমস্ত ব্রত থেকে উত্তম এবং এতে কোনও প্রকার দোষ-ত্রæটি নেই। ১৯) ফ্রান্সের অধ্যাপক ডি এস ফ্রোর্ড তাদের স্থানীয় এক সাপ্তাহিক পত্রিকায় লিখেছেন, ইসলামের পয়গম্বরের নির্দেশিত ইবাদত অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি ইবাদাত হচ্ছে রোজা, যা আত্মশুদ্ধি ও সংযমের একটি উৎকৃষ্ট উপায়। এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এই রোজা ইসলামের প্রাণ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
তারিখ: ২৩.০৩.২০২৪