ছাত্রদলের গতি রক্ষায় আসছে ৩১-৫১ সদস্যের কমিটি!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৭:৫৭,অপরাহ্ন ২৭ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৬১৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দীর্ঘদিন ধরে মাঠের বাইরে থাকা ছাত্রদল জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন কমিটি পেয়ে গা ঝাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার আগেই জড়িয়ে গেছেন মামলায়। শীর্ষ দুই নেতার গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে। তারা ছাত্রদলের নতুন গতি রক্ষায় অন্তত আংশিক হলেও কমিটি দিতে চাইছেন।
পুলিশি কাজে বাধা দেয়ার মামলায় ছাত্রদলের দুই শীর্ষ নেতাকে ধরতে ইতিমধ্যে একবার চেষ্টা চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের অনাগত গ্রেপ্তার আশঙ্কায় শিগগির কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার তোড়জোড় চলছে।
এ নিয়ে ছাত্রদলের দুই শীর্ষ নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডনে নিয়মিত আপডেট দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খসড়া তালিকাও তৈরি করা হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। তালিকা চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদকদের কাছ থেকে নাম নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ত্যাগী ও সাংগঠনিক নেতাকর্মীদের নাম চাওয়া হচ্ছে তাদের কাছে।
ঢাকার একটি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যতটুকু জানি খুব শিগগির আংশিক কমিটি হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি ফোন করে আমাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছেন।’
গত মাসের ১৯ তারিখ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায় ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলেও বাকি কমিটি হবে সিলেকশনে।
একটি সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে তারেক রহমানের কাছে খসড়া তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকায় থাকা কর্মীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীরাও চাইছেন এই মহূর্তে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলেও আংশিক কমিটি যন হয়ে যায়। তাহলে দুই শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হলেও সংগঠনের কার্যক্রম ধরে রাখা যাবে। ছাত্রদলের বর্তমান সক্রিয়তার কারণে তাদের প্রতি সরকারের মনোভাব ইতিবাচক নয় বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দাবি, নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দফা বাধার মুখেও সরব উপস্থিতি ছাত্রদলের। এটা থামানোর জন্যই সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যেকোনো সময় দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এমন অবস্থার মুখোমুখি হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো কঠিন হবে যদি কোনো ধরনের কমিটি না থাকে। এমনকি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তাই দ্রুতই অন্ত আংশিক হলেও কমিটি চান তারা।
গত ১২ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়। পরে পল্টন থানায় ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
গত ২০ অক্টোবর নিজেদের ফেসবুক আইডি হ্যাকের বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে ফেরার পথে টিএসসিতে দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় তারা অন্য পথে পালিয়ে যান। এরপর থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন। তারা অনেকটা আত্মগোপনে আছেন বলে জানা যায়।
আংশিক কিংবা পূর্ণাঙ্গ যা-ই হোক, এবার কমিটির আকার খুব বড় হবে না বলে জানান ছাত্রদলের গত কমিটির একজন শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ হলেও সবশেষ কমিটির মতো ঢাউস কমিটি হবে না এটা নিশ্চিত। আপাতত আংশিকের কথা শোনা যাচ্ছে। সেটা ৩১ সদস্যের কিংবা সর্বোচ্চ ৫১ সদস্যের হতে পারে।’
রাজীব আহসান ও আকরামুল ইসলামে গত কমিটির সদস্যসংখ্যা ছিল ৭৩৮। প্রথম ধাপে দেওয়া হয়েছির ১৫৩ সদস্যের কমিটি। পরে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে আরও ৫৮৫ জনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার হয়।
ওই নেতার মতে, সরকারি চাপের মধ্যেও ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে ছাত্রদল দীর্ঘদিন পর মাঠে কিছুটা তৎপর হয়েছে। সংগঠনের এই আমেজ থাকাবস্থায় যোগ্য কর্মীদের বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া উচিত। তা না হলে গতি হারাবে সংগঠন।
এ নিয়ে যে যার জায়গা থেকে হাইকমান্ডের কাছে তাদের মনোভাব জানাচ্ছেন উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, তবে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত আসে তারেক রহমান ও ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ সঠিক করে বলতে পারছেন না।
কমিটির বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কমিটি দেয়ার। সে জন্য কাজ করছি। আশা করি শিগগির একটি সুন্দর ও সাংগঠনিক কমিটি দেয়া সম্ভব হবে।