আ’লীগের কমিটি: দলীয় কার্যক্রম আলাদা রাখতে মন্ত্রী-এমপিরা বাদ!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫১:১৬,অপরাহ্ন ১৬ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৫২২ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্য। সরকার ও দলের কার্যক্রম আলাদা রাখতে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সফল ও জনপ্রিয় কয়েকজন তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আগের মতো তারা সময় দিতে পারছেন না।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকালেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকে বাদ পড়েন। বর্তমান মন্ত্রিসভার ৪৮ সদস্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদে আছেন দশজন।
আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল একই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে। সরকার ও দলকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আগামী সম্মেলনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ফলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এখন কয়েকজন আছেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে। তবে দলীয় পদ থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ দায়িত্ব পেতে পারেন সরকারে। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।
একই সঙ্গে চলতি বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ে আওয়ামী লীগের যেসব সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রী কাজ করেছেন, প্রমাণ হলে ও সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তারাও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করছে দল। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে দলটি।
যেসব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন, তাদের প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সারা দেশে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সহায়তাকারীদের শনাক্তে কাজ করবে আওয়ামী লীগ সভাপতির গঠিত আটটি সাংগঠনিক টিম। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানায় বৈঠকে উপস্থিত সূত্র।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি আনার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি ও সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আসছে আওয়ামী লীগ।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ থেকে বাদ পড়েন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর, অর্থ সম্পাদক আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইয়াফেস ওসমানসহ অনেকে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে গঠিত মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিম প্রমুখ। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি বাড়ানোর সঙ্গে সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় এসব সিদ্ধান্ত নেয় দল।
সূত্রমতে, চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সময় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের শীর্ষপদে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন। সভাপতি ছাড়া দলের অন্যান্য পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আলোচনা আছে। দলকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে এ পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা চলছে।
আগামী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে জনপ্রিয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টির পরিকল্পনা চলছে দলটিতে। ফলে তখনো কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন অনেক বড় নেতা।
এসবের জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তদারকি করছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম। চলতি বছরই শেষ হচ্ছে সরকারি দলের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছরমেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই চেয়েছেন দল ও সরকারকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করার। এর ফলে আওয়ামী লীগে যথেষ্ট পরিমাণে নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে নেত্রী সরকার ও দলকে আলাদা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারেন। আমাদের দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খুবই দক্ষতার সঙ্গে তার দল ও মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তাকে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দায়িত্ব বণ্টনের বিবেচনায় কেউ সরকারে থাকেন এবং কেউ সরকার ও দল দুটির দায়িত্বেই থাকেন। কেউ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে দলে তাকে বেশি সময় দিতে হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, সরকারে সে তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারেন না।’
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই দলকে নতুন করে সাজানোর পাশাপাশি সরকার থেকেও দলকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনা আছে। সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই পরিকল্পনাগুলোর বিশেষ উদ্দেশ্য।
সরকারের গত সাড়ে ১০ বছরের সাফল্যে দলকে আরো সুসংহত ও সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে এবারের সম্মেলনে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সব সময় চাইতেন দল ও সরকার আলাদা হবে। দল ও সরকার আলাদা হলে বেশ কয়েকটি লাভ হয়। এতে দল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, সরকারের ভুলত্রুটি হলে ধরিয়ে দিতে পারে। ফলে রাজনৈতিক দলটি শক্তিশালী হয় আর সরকারও ভুল-ভ্রান্তি শোধরাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু যা চাইতেন, তা বাস্তবায়ন করতে চান। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী দলে পরিণত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।