মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়ে পিতা থেকে দায় মুক্তি!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪১:২৭,অপরাহ্ন ১৫ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ১৫৩০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: মায়ের মৃত্যুর পর বাবাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল খুশি খাতুন (১২)। কিন্তু তা হয়নি। সৎ মা আর বাবার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে মামার বাড়িতে। শুধু তাই নয় পিতা মাত্র ৭০ হাজার টাকার মুচলেকায় দায় মুক্তি নিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে। খুশি খাতুন ঐ গ্রামের আঃ হান্নানের মেয়ে ও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী।
জানা গেছে, বছর দেড়েক আগে খুশি খাতুনের মা কাজল রেখা দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মুত্যু বরণ করেন। এর কয়েকমাস পর বাবা আঃ হান্নান বাগোয়ান গ্রামের ইমান আলির মেয়ে ইয়াসমীন আকতার কে বিয়ে করে। বেশ ভালই কাটছিল তাদের দিন। বিয়ের মাস তিনেক পর সৎ মা ইয়াসমীন আকতারের চোখের বালি হয়ে ওঠেন খুশি খাতুন। কারণে অকারণে খুশি খাতুনকে নির্যাতন করতে থাকে। মাস ছয়েক আগ থেকে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে খুশি খাতুন চলে আসে মামা হিয়ারুল ইসলামের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। কয়েকদিন পর ফিরে যেতে বাধ্য হয় বাবার বাড়িতে।
ঈদের আগে খুশি তার মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ঈদের আগের দিন বাবা আঃ হান্নান তাকে নিতে গেলে মামা মামিরা ঈদের পরে পাঠানোর কথা বললে গাল মন্দ করে ফিরে আসেন এবং মেয়েকে গ্রহন করবেনা বলে জানিয়ে দেয়। তার পরও মামা মামী অনুনয় বিনয় করে জানায় যে খুশি যেহেতু ছোট আর তার মা নেই সেহেতু ঈদ উৎযাপন শেষে তাকে রেখে আসা হবে।
দিন পাঁচেক আগে মামা মামীরা খুশি খাতুনকে তার বাবার বাড়িতে রেখে যায়। এর পর থেকেই শুরু হয় খুশি খাতুনের উপর অকথ্য নির্যাতন। তাকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতনা। সৎ মা তাকে খেতে না দিলে বাবাকে জানালে বাবা আঃ হান্নান উল্টো খুশিকে দোষ দিয়ে মারধর করত। মাঝে মধ্যে তাকে উপোষ করে দিন কাটাতে হতো।
খুশি জানায়, মা ও বাবার নির্যাতনের বিষয়টি তার সৎ ভাই জাব্বারুল জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে নানান হুমকি দিত। মামী আলেয়া বেগম জানান ছোট মেয়ে তাই ভয়ে অনেক কিছুই বলতনা। বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার খুশির মামা স্থানীয় চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামানকে জানালে তিনি সালিশ বৈঠকের ডাক দেন।
চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান জানান, খুশির অধিকার নিয়ে তার বাবা আঃ হান্নানকে চাপ দেওয়া হলে তিনি (আঃ হান্নান) তার মেয়েকে কাছে রাখতে চাননি। নানান অজুহাতে শিশু কন্যা খুশিকে দোষারোপ করে। সেই সাথে তার সৎ ভাই জাব্বারুল ও বোন আয়েশাকেও দোষারোপ করে। এ ব্যাপারে এক বৈঠকে আঃ হান্নান মাত্র ৭০ হাজার টাকা শিশু কন্যা খুশিকে পরিশোধ করে দায় মুক্তি চেয়ে মুচলেকা প্রদান করে। আগামী তিন মাস পরে ঐ টাকা তিনি পরিশোধ করবেন।
এ ব্যাপারে বাবা আব্দুল হান্নানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, পারিবারিক শান্তি রক্ষার্থে তিনি মেয়েকে গ্রহণ করতে পারবেন না।