রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় শাবি হলে তালা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৫:২৯,অপরাহ্ন ২৬ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৩৭৩ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে দীর্ঘ একমাসের ছুটির মধ্যে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে প্রায় ২০দিনের মতো আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসন।
পূর্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে সকল আবাসিক হল খালি করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিছু শিক্ষার্থী হল থেকে নামতে না চাইলেও কর্তৃপক্ষ তাদের জোর করে বের করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে পুলিশ এসেও টহল দিয়েছে বলে অভিযোগ এসব শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হল বন্ধের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সেইসব শিক্ষার্থী, যারা হলে থেকে বিভিন্ন চাকরির পড়াশোনা করছিলেন, অনেকে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করছিলেন।
তাদের পাশপাশি সমস্যায় পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে অাগত ভিন্ন ধর্মাবলম্বি শিক্ষার্থীরা, যারা ঈদের আগমূহূর্তে বাড়ি যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের শিক্ষার্থী সুমন সরকার বলেন, “আমাদের তো আর ঈদ নেই। তাহলে আমরা কোথায় যাব? হলে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা অন্য ধর্মাবলম্বী, তাদের তো হল ছুটির দরকার পড়ে না।”
ঈদের ছুটিতে কর্তৃপক্ষের হল বন্ধের এমন সিদ্ধান্তে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য দেখছেন এই সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী।
“বিগত দুই-এক বছর ধরে ঈদের ছুটি শুরু হলেই হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আবাসিক হলগুলো খোলা থাকে। তাহলে ঈদের ছুটিতে বন্ধ কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাতে এমন বৈষম্য কেন?” বলেন সুমন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ১৫ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সকল ক্লাস পরীক্ষা এবং ২২মে থেকে ১৩জুন পর্যন্ত সকল অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আর গত ২০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলা হয়, ২৪ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত প্রায় ২০ দিন হল বন্ধ থাকবে। এছাড়া হল প্রভোস্টবৃন্দ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও ২৪ তারিখ সকালে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হল বন্ধের এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক জানিয়ে বন্ধেও হল খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
তবে হল বন্ধের ‘যৌক্তিক কারণ’ নিজ ভাষায় ব্যাখ্যা করে কয়েকদিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের প্রভোস্ট হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, “সার্বিক দিক বিবেচনা করে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া হলগুলোতে দ্বায়িত্বরত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটিতে যাবেন। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব কীভাবে?”
এখন থেকে বড় ধরণের সকল ছুটিতে হল বন্ধ রাখা হবে বলেও তখন জানিয়েছিলোন তিনি।
গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন বন্ধে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা বলে হল বন্ধ রাখলেও এবারই প্রথম হল বন্ধের নিয়মের কথা আসলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
হল বন্ধের কারণে বিপাকে পড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের শিক্ষর্থী তৌহিদুজ্জামান জুয়েলর ও দ্বীনবন্ধু সরকার বলেন, “ছাত্ররা তাদের অধিকার বলে বার বার হলে থাকার দাবি জানালেও প্রশাসনের অনড় সিদ্ধান্ত খুবই অগণতান্ত্রিক এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যেভাবে তারা বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত।”
” তারা(হল কর্তৃপক্ষ) পুলিশ পাঠিয়েছেন, আমাদের বের করার জন্য। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তা ন্যাক্কারজনক।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি নাযিরুল আযম বিশ্বাস বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির সময় হল বন্ধ থাকতে পারে না। শিক্ষার্থীরা চাইলে হলে থাকতে পারবে। পড়াশোনা করতে পারবে। এটা তাদের অধিকার। এখানে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে হল বন্ধের মানে হয় না।’
হল বন্ধের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের প্রভোস্ট হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, “পূর্বের সিদান্ত অনুযায়ী হল থেকে সব শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। কিছু শিক্ষার্থী বলেছিল, রাতে যাবে। তারা রাতে চলে গেছে।
পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের লাইন বন্ধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের পুরনো লাইনে পুনঃস্থাপন কাজ চলছে। সেজন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।”
পুলিশ এসে শিক্ষার্থী হল থেকে বের হতে চাপ সৃষ্টি করেছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন ক্যাম্পাসের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের। তারা ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের হল থেকে নামতে পুলিশ কোন চাপ দেয় নি। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নেমে গেছে।