হেফাজতের মহাসচিব হতে `মাইজভান্ডারী`র দোয়া নিলেন মুফতি ফয়জুল্লাহ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৭:৪৪,অপরাহ্ন ০৪ জুলাই ২০২০ | সংবাদটি ২৫৪৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ ছেড়েছেন আল্লামা হাফিজ জুনায়েদ বাবুনগরী। এখন শোনা যাচ্ছে হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব পদও ছাড়ছেন তিনি। এমন গুঞ্জন বিরোধী অঙ্গনে।
আর বাবুনগরীকে নিয়ে নানা তীর্যক মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফিপূত্র আনাস মাদানীও। যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এক্ষেত্রে তিক্ততা না বাড়িয়ে নিরব থেকে হেফাজত আমিরের সাথে বিষয়টির সূরাহার চেস্টা চালাচ্ছেন বাবুনগরী। এমন আভাসও মিলছে।
তবে সংগঠনের আমির আল্লামা আহমদ শফির পক্ষ থেকে হেফাজত ইসলাম পুনর্গঠনের বিষয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাবুনগরীকে মহাসচিব পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়াই চলছে। এ পদে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ও নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার নবনিযুক্ত মোহতামীম মুহাম্মদ সলিমুল্লাহর অর্ন্তভুক্তির আভাস মিলেছে।
সুত্রমতে, তারা দুজনই আল্লামা শাহ আহমদ শফির ঘনিষ্ট। এদের মধ্যে মুফতি ফয়জুল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে। এটি আল্লামা শফির বাড়ির পাশের ইউনিয়ন। আর এ দুজনের কথায়ও রয়েছে হেফাজত পূনর্গঠনে সুর।
মুফতি ফয়জুল্লাহ এরমধ্যেই হেফাজতের মহাসচিব পদের জন্য ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন। যা স্বীকার করেছেন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। হেফাজতের পূনর্গঠন প্রক্রিয়ার নৈপথ্যে তিনিও ভুমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।
আর মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ বলেন, হেফাজতের আমির কয়েকদিন আগে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছেন। কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তিনি যে কোনো সময় সভা আহ্বান করতে পারেন। একক ক্ষমতাবলে তিনি যাকে ইচ্ছা মহাসচিব নির্বাচিত করতে পারেন।
এছাড়া হেফাজত আমিরের ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে পরিচিত একজন শীর্ষ আলেমও হেফাজতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় জুনায়েদ বাবুনগরী পদ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব পদে রাখতে চান না আল্লামা শফি। তিনি বাবুনগরীকে নিয়ে খুবই অস্বস্তিবোধ করছেন। তিনি মূলত হেফাজতে তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরী ও মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনতে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।
কমিটি পুনর্গঠন করতে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি সপ্তাহখানেক আগে গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেন। হেফাজতের কার্যকরী ও শূরা কমিটির সভায় নেতৃত্ব পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়া হবে। এখন এই সভা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, আল্লামা আহমদ শফি অসুস্থ অবস্থায় হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার মোহতামীম ও হেফাজতের আমিরে পদাসীন হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর উপর চরমভাবে ক্ষুব্দ হন। ফলে আমির পুত্র আনাস মাদানীসহ অনুসারী আলেমরাও ক্ষিপ্ত হন বাবুনগরীর উপর। এ কারনে আল্লামা শফি মাদ্রাসার শুরা মজলিসের বৈঠকে বাবুনগরীকে হাটাহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক থেকে সরিয়ে শেখ আহমদকে পদাসীন করেন।
এর আগে সিনিয়র নায়েবে আমির পদ থেকেও সরে যান জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনিও আল্লামা শফির সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সিনিয়র নায়েবে আমির পদ থেকে ইস্তফা দেন। ওই পদেও স্থান হতে পারে মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আহমদ দিদার কাসেমীর। তবে আমির পদে আপাততে পরিবর্তন হবে না। আল্লামা শফি আমৃত্যু এ পদে থাকবেন।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে কথা বলতে চাইলে কল রিসিভ করা হয়নি। তবে ওয়াটস অ্যাপের মেসেজ অপশনে প্রশ্ন করা হলে-ফিরতি মেসেজে এ বিষয়ে তিনি আপাতত কোন কথা বলতে চান না বলে জানানো হয়।
একই অবস্থা আল্লামা শাহ আহমদ শফিরও। ফোন রিসিভ না করায় ওয়াটস অ্যাপে মেসেজ দেয়া হলেও তাতে কোন সাড়া মেলেনি। ফলে এ বিষয়ে তেমন কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে হেফাজতের মহাসচিব পদ থেকে সরানোর বিষয়ে আল্লামা শফিপূত্র মাওলানা আনাস মাদানীকে দায়ী করে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে নানা স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ ঝারছেন আলেমরা। এতে মাওলানা মোহাম্মদ ফয়সাল নামে একজন লিখেছেন-জুনায়েদ বাবুনগরীর একজন ইসলামের প্রকৃত খাদেম। ইসলামের ধ্যান-ধারণা ও নীতি আদর্শ থেকে কোন লোভ তাকে বিচলিত করতে পারেনি। পক্ষান্তরে আনাস মাদানী একজন লোভী ও ইসলামী আদর্শচ্যুত মানুষ এবং আওয়ামী লীগের দালাল। তার কারনে হেফাজতের এই দশা। বাবুনগরীকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলে আরেকটি হেফাজত গঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি কওমি আক্বীদাপন্থি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গঠিত হয়।
হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্নপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যেখান থেকে শাপলা চত্বরের ঘটনার জন্ম। আর এ ঘটনার জন্য জুনায়েদ বাবুনগরী ও জামায়াত ইসলামের সংশ্লিষ্টতাকে দায়ী করছেন আল্লামা শফিপূত্র আনাস মাদানী। এমনকি জুনায়েদ বাবুনগরীকে জামায়াতের এজেন্ট বলেও আখ্যা দেন তিনি। আর এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন-শাপলা চত্বরে যা হয়েছিল সব হেফাজত আমিরের নির্দেশেই হয়েছিল। বরং আনাস মাদানীই জামায়াতের দালাল।
এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত `সুপ্রভাত` নামে পত্রিকা এমন সংবাদ প্রকাশ করলে তা অসত্য বলে দাবি করেন মুফতি ফয়জুল্লাহ। তাঁর এ দাবির প্রেক্ষিতে পুণরায় পত্রিকাটি নিউজ করে যে, সংবাদটি পূর্ণ সত্য এবং মুফতি ফয়জুল্লাহর সাথে কথপোকথনের নাকি অডিও রেকর্ড রয়েছে। প্রয়োজন হলে তারা প্রকাশ করবে।
আবার একই দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন হাটহাজারির মাওলানা মীর ইদ্রিস নামে একজন।
তিনিও দাবি করছেন, সংবাদটি পড়ে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন অডিও আছে। যদিও তারা সে অডিও এখনো প্রকাশ করেনি।