লড়াই করেও পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙতে পরেনি জিম্বাবুয়ে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৫:১৭,অপরাহ্ন ০৩ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৩০৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: প্রথম ওয়ানডের মতো জয়টা অত সহজ ছিল না। এবার জিম্বাবুয়ে লড়াই করল। রীতিমত ভয় দেখাল। পুরো দেশকে স্নায়ু চাপে রাখল। শেষ বল পর্যন্ত হাল ছাড়েনি। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারল না।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) মাশরাফির দল জিতল আরেকটি ওয়ানডে। তাতে নিশ্চিত হল সিরিজ জয়। বাংলাদেশের ২৫তম সিরিজ জয়। এ ম্যাচে জয়ের নায়ক তামিম ইকবাল। দীর্ঘদিন পর দেশসেরা ওপেনারের ব্যাট হাসল। তাতে হাসল বাংলাদেশও। তার ব্যাটে আসল রেকর্ড গড়া রান। তাতে জিম্বাবুয়ে রানের পাহাড়ে চাপা। লড়াই করলেও অতিথিরা পারল না পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙতে।
তামিমের ক্যারিয়ার সেরা ১৫৮ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ৩২২। জবাবে জিম্বাবুয়ের ইনিংস থেমে যায় ৮ উইকেটে ৩১৮ রানে। ৪ রানের জয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ১৫তম জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ইনিংস জুড়েই তামিমময়। এক হাতে বাংলাদেশকে শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত টেনেছেন। তার অনবদ্য, ধ্রপদী ইনিংসে আড়াল হয়েছে বাকি সবকিছু। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে ১৫৪ রান করেছিলেন তামিম। দীর্ঘ ১১ বছর তামিমের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি কেউ। এবার নিজ থেকে দায়িত্ব নিয়ে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার।
এ ইনিংস কতোটা বড়, কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবশেষ ১২ ওয়ানডেতে তার রান মাত্র ২৮০, গড় ২৩.৩৩ আর স্ট্রাইক রেট ৬৭.৭৯। ব্যাটিং যেন ভুলতে বসেছিলেন। প্রচুর ডট বলার খেলার মানসিকতা পিছিয়ে দিচ্ছিল তাকে। আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক শব্দগুলো হয়ে উঠেছিল তার প্রতিশব্দ। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৩ বলে ২৪ রান যেন আরেকবার তামিমের ওপর আঙুল তুলেছিল।
সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন ছিল বড় কিছুর। নিজেকে প্রমাণের, আত্মবিশ্বাস ফেরানোর, সমালোচনার জবাব দিতে দরকার ছিল এমন কিছুরই। সিলেট তাকে দিল সেই মঞ্চ। এদিন এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি উইকেটে তামিম ভুগছেন। যে বলগুলো শেষ কয়েক ম্যাচেও ডট খেলেছেন সেগুলো আজ পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে।
এ ইনিংস খেলার পথে তামিম গড়েছেন রেকর্ডও। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে তামিম ওয়ানডেতে সাত হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ৮৪ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। দারুণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খুব সহজেই পেরিয়েছেন মাইলফলকে। ৪২ বলে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে পেয়েছেন ১০ চার। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে মেরেছেন আরও ৪টি। নব্বইয়ের ঘরে এসে প্রথমবার তার স্ট্রাইক রেট একশর নিচে নামে। ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পেতে কিছুটা মনোযোগী ব্যাটিং করেছেন। ৯৪ থেকে একশ ছুঁয়েছেন ১৩ বলে। এরপর রানে ফুলঝুরি ছোটন ২২ গজে। দ্রুত রান তুলে পৌঁছে যান দেড়শতে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৫৮ রান করেছেন। ১৩৬ বলে ২০ চার ও ৩ ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস।
নিজের ইনিংস বড় করতে গিয়ে তামিম ‘রান আউট’ করেছেন দুজনকে! প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন শান্তকে ফেরাতে। লিটনের রান আউট দূর্ভাগ্যজনক। তামিমের শট ফেরাতে মুম্বার হাত লেগে বল আঘাত করে স্ট্যাম্পে। তখন লিটন ক্রিজের বাইরে। এরপর শান্তকে ডাক দিয়ে চলে যান ক্রিজের অপর প্রান্তে। কিন্তু শান্ত তাকে ফিরিয়ে দিলেও সেই ডাক শোনেননি। তামিমের জন্য নিজের উইকেট ছেড়ে আসেন শান্ত।
তৃতীয় উইকেটে তামিমকে সঙ্গ দেন মুশফিক। দুজনের ৮৭ রানের জুটিতে রীতিমত এলোমেলো হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণে। মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পর সাজঘরে ফিরলেও তামিম মনোযোগ নষ্ট করেননি। ৫০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৫৫ রান করেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে নেমে খানিকটা ধীর গতিতে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তা পুষিয়ে দেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৭ বলে ৪১ রান। চতুর্থ উইকেটে তামিম ও মাহমদুউল্লাহর জুটিতে আসে ১০৬ রান, যা ম্যাচে ছিল সর্বোচ্চ। শেষ দিকে বাংলাদেশের রান বড় করেন মোহাম্মদ মিথুন। ১৮ বলে ৩২ রান তুলেন ৩ চার ও ১ ছক্কায়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তুলে বোলিংয়ে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। ৬৭ রানের ভেতরে তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান চাকাবা (২), টেলর (১১) ও উইলিয়ামসকে (১৪) সাজঘরের পথ দেখায় মাশরাফির দল।
এক প্রান্তে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন টিনাসে কামুনহুকামউই। ব্যাটিং দৃঢ়তায় তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু তাকে আটকানোর উত্তর জানা ছিল তাইজুলের। নিজের প্রথম ওভারে কামুনহুকামউইকে ফিরিয়ে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি ফেরান তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ৫১ রানে বোল্ড হন ডানহাতি ওপেনার।
পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ পায় জিম্বাবুয়ে। ওয়েসলি মাধবেরেকে সঙ্গে নিয়ে জুটি বাঁধেন সিকান্দার রাজা। ৭৬ বলে তাদের ৮১ রানের জুটিতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু এ দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের কাজ অসম্পূর্ণ রাখেন। হাফ সেঞ্চুরির পর হাসেনি তাদের ব্যাট। মাধবেরেকে (৫২) তাইজুল এবং রাজাকে (৬৬) ফেরান মাশরাফি।
দুই পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানকে হারালেও জিম্বাবুয়ের মনোবল একটুও টলেনি। বাংলাদশেকে ভয় দেখানো তখনও বাকি ছিল। মুতুমবোজি ও টিরিপানোর হঠাৎ ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এলোমেলো বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। লেট ব্যাটিং অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যানের দাপটে রোমাঞ্চ ছড়ায় সিলেটে। উত্তেজনা বেড়ে যায় গোটা স্টেডিয়ামে।
তাদের ৪৩ বলে ৭৮ রানের জুটিতে ম্যাচ গড়ায় শেষ ওভারে। শেষ ওভারে ২০ রান দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের। প্রথম বলে সিঙ্গেলের পর ওয়াইড দেন আল-আমিন। তৃতীয় বলে ডানহাতি পেসার ভাঙেন ভয়ংকর জুটি। ২১ বলে ৩৪ রান করা মুতুমবোজি ক্যাচ দেন লিটনের হাতে।
কিন্তু রোমাঞ্চের তখনও বাকি ছিল। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে পরপর দুই ছক্কা হাঁকান টিরিপানো। ওই দুই ছক্কায় বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ‘শোক’ নেমে আসে। জিম্বাবুয়ের ড্রেসিংরুম ছিল উৎসবের মঞ্চ।
জয়ের জন্য ২ বলে দরকার ৬ রান। পঞ্চম বল শর্ট দেন আল-আমিন। টিরিপানো ব্যাটে ছোঁয়াতে পারেননি। শেষ বলে দরকার আরেকটি ছক্কা। পাঁচ ছক্কা হাঁকানো টিরিপানোর আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। কিন্তু ডানহাতি ব্যাটসম্যান পারেননি দলের দাবি মেটাতে। লেন্থ বলে এক রান নিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান ৪ রানে নামিয়ে আনেন। ২৮ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন টিরিপানো।
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের শেষটা বাংলাদেশের পক্ষে আসলেও জিম্বাবুয়ে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা মোটেও খাটো করার মতো দল নয়। জয় থেকে খুব বেশি দূরে নয় তারা। শুধু প্রয়োজন খানিকটা সময়। নতুন করে তৈরি হওয়া দলটা যেভাবে বাংলাদেশকে ভয় দেখালো তাতে মনে হচ্ছে শিগগিরই তারা উড়াবে বিজয়ের পতাকা।