নারী কেলেঙ্কারীতে এবার ফাঁসলেন পল্টন থানার ওসি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০০:১২,অপরাহ্ন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৮০৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ফেসবুকে দীর্ঘদিনের পরিচয়সূত্রে এক তরুণীকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে ঢাকায় ডেকে এনে পল্টন থানার ওসির অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে তদন্ত ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ফেসবুক ও ফোনে দীর্ঘদিনের আলাপের ঘনিষ্ঠতায় তরুণীকে ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে ঢাকায় ডেকে আনেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক। রাখেন পল্টনের একটি হোটেলে। ওই দিন রাতে হোটেল বয় তরুণীকে স্যুপ দিয়ে যান, যা খেয়ে তরুণী ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দুইটায় ঘুম ভাঙলে তরুণী দেখেন ওসি মাহমুদুল হক তার পাশে শুয়ে আছেন। বুঝতে পারেন তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ সময় ওসি মাহমুদুল তরুণীকে বলেন, তিনি তাকে ভালোবাসেন। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। তাকে তালাক দিয়ে এই তরুণীকে বিয়ে করবেন। এরপর তার সঙ্গে মাসের পর মাস শারীরিক সম্পর্ক করেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তরুণীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় এনে ধর্ষণ ও পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও এখন ওসি মাহমুদুল ওই তরুণীকে বিয়ের বদলে উল্টো ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ গেছে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ। তদন্তে ওই তরুণীর সঙ্গে ওসির অবৈধ সম্পর্কের সত্যতা মিলেছে। ডিএমপি সদর দপ্তর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি পুলিশপ্রধানের কাছে। এখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশপ্রধান বরাবর দেওয়া ওই তরুণীর লিখিত অভিযোগের একটি কপি ঢাকা টাইমসের হাতে এসেছে।
কলেজে পড়ার সময় ফেসবুকে মাহমুদুল হকের সঙ্গে তার পরিচয়। প্রায়ই ফোনে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হতো তাদের। দীর্ঘদিনের এই যোগাযোগ ও পুলিশের দায়িত্বশীল পদে থাকা মাহমুদুলকে বিশ্বাসে ঠাঁই দেন তিনি। তরুণীর ভাষ্য, ‘২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় ডাকেন মাহমুদুল। ঢাকায় এলে আমাকে হোটেল ক্যাপিটালে তোলেন। ওই দিন রাতের খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে আমাকে অচেতন করা হয়। আমি ঘুমিয়ে পড়লে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন মাহমুদুল। জ্ঞান ফেরার পর আমি তার কাছে এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে সে বলে- আমাকে সে অনেক ভালোবাসে। আমাকে সরাসরি প্রস্তাব দিলে আমি হয়তো রাজি হতাম না। তাই চেতনানাশক মিশিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এ সময় আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় মাহমুদুল। এই প্রতিশ্রুতিতে ওই রাতে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে সে।’
কোরআন শরিফের ওপর হাত রেখে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন ওসি মাহমুদুল- এমন দাবি করে তরুণীটি বলেন, ‘আমি নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর প্রতি সপ্তাহে আমাকে ঢাকায় ডেকে এনে একই হোটেলে রাখত। গত বছরের অক্টোবরে বুঝতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি তাকে জানালে সে আমাকে দ্রুত বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে গর্ভপাত করতে বলে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে তার কথায় গর্ভপাত করাই আমি। এরপর মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সে আর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। গত ২ এপ্রিল আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মাহমুদুল।’
১২ এপ্রিল ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তরুণী। তার পরিবার সবকিছু জানতে পেরে তারা মাহমুদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সময় তরুণীর পরিবারকে উল্টো হুমকি দেওয়া হয়, পল্টন থানার ওসির অনেক ক্ষমতা, বাড়াবাড়ি করলে তরুণীর অনেক ক্ষতি হবে।
আইজিপি বরাবর অভিযোগে তরুণী লেখেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকবার মাহমুদুলের বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়। প্রথমে তার বাবা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেন। কিছুদিন পর তিনি হঠাৎ আমার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকেন। আমাকে বলেন, আমি যদি তার ছেলের জীবন থেকে সরে না যাই তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর অভিযোগ করেছি।’
দুজনের সম্মতিতে তাদের মধ্যকার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ও ছবি ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো তার কাছে আছে বলে জানান তরুণী।
মাহমুদুলের স্ত্রী ও একটি ছেলে রয়েছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না, স্ত্রীকে তালাক দেবেন মাহমুদুল। এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলতেন, এরপর তাকে (ভুক্তভোগী তরুণী) বিয়ে করবেন তিনি। তরুণী বলেন, ‘ততদিনে আমি নিরুপায় হয়ে গেছি। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু এখন আমাকে বিয়ে করতে চায় না। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবাই জেনে গেছে। এখন আমি সমাজে মুখ দেখাব কী করে! যদি ও (মাহমুদুল) আমাকে বিয়ে না করে আমি প্রয়োজনে আদালতের শরণাপন্ন হব।’
এখন আইজিপির সদয় বিবেচনার দিকে তাকিয়ে আছেন ভুক্তভোগী তরুণীটি। বলেন, ‘শুনেছি আইজিপি স্যার খুব সৎ এবং তার কাছে অপরাধী প্রমাণিত হলে কাউ ছাড় দেন না।’
তরুণীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান ডিএমপির সবুজবাগ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোনালিসা। তিনি বলেন, `তদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে জানতে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।