পরিত্যাক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক থেকে তেল-গ্যাস আবিস্কার!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৮:০৬,অপরাহ্ন ২৯ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ১২৩৬ বার পঠিত
এ.এস.লিমন, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) থেকে:: প্রয়োজন শেষ হলেই আমরা ছুড়ে ফেলে দেই পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল। কিন্তু পরিত্যাক্ত এ পলিথিন ও বোতল থেকে এবার আবিস্কার হলো আমাদর খনিজ সম্পদ নামে পরিচিত পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ও এলপি গ্যাস। আর তা আবিস্কার করলেন কুড়িগ্রামের রাজারহাটের রোস্তম আলী নামের এক শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে তিনি পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতল পুড়িয়ে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তার এই তৈরি করা পদ্ধতি ও জ্বালানী দেখতে প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে শত শত মানুষ এসে ভীড় জমাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল বালাকান্দি গ্রামের কৃষক মফিজুল হকের পুত্র রোস্তম আলী (২২) বাড়ীর উঠানেই একটি আবদ্ধ তেলের ড্রামে বেশকিছু পরিত্যক্ত পলিথিন রেখে আগুন দিয়ে তাপ দিয়ে পলিথিন গলিয়ে ডিজেল পেট্রোল অকটেন ও এলপি গ্যাস তৈরি করছে।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার নিজস্ব মটর সাইকেলে এসব জ্বালানি দিয়ে চালনা করে এলাকার মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। এছাড়া মাটি ও পানিতে ওই তরল পদার্থ ফেলে দিয়ে আগুন প্রজ্বলিত করে পেট্রোল প্রমাণ করেছেন। তার দেয়া পেট্রোল ও অকটেন ব্যবহারকারী এলাকার বেশ কিছু মটর সাইকেল আরোহী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আজ বিকালে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহঃ রাশেদুল হক প্রধান ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.আতিকুর রহমান আবিষ্কারক রোস্তম আলীর বাড়ী পরিদর্শন করেন। এ সময় তাদের সামনেই রোস্তম আলী পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে পেট্রোল অকটেন ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি করে প্রমাণ করেন দেন।
আবিষ্কারক রুস্তম আলী জানায়,ছোট বেলা থেকেই সে গবেষনায় আগ্রহী। ২০১৭ সালে সে ডিপ্লোমা পাশ করে অনলাইন কোর্সে ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশ (আইইবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। বর্তমানে সে অনলাইনে অধ্যায়নরত। এছাড়া সংসারের হাল ধরতে সে প্রাইভেট টিউটর হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে। আড়াই বছর আগে ২০১৭ সালের দিকে একদিন টিনের ছোট কৌটায় পলিথিন পুড়ে তরল পদার্থ বের করি। সেগুলো শোধন করে পরীক্ষা করে দেখতে পাই এগুলো ডিজেল ও পেট্রোল জাতীয় তরল পদার্থ। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক পরিত্যক্ত পলিথিন যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে এগুলো সংগ্রহ করে একটি আবদ্ধ প্রকোষ্ট ড্রামে ভিতরে রেখে আগুনে অতিমাত্রায় তাপ প্রয়োগ করে গলিয়ে ফেলা হয়। বাষ্পীয় হয়ে ডিজেল এবং নল দিয়ে বের হয়ে পেট্রোল অকটেন তৈরি হয়। সর্বশেষ পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হলে সেখানে আগুন দিলে আগুন লেগে থাকতো। যত তাপমাত্রা বেশী দেয়া হত তত বেশী তরল পদার্থ নির্গত হয়। সেই সাথে গ্যাস বের হয়। এসব সংগ্রহীত তরল পদার্থ দুথটি পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। এক ছাকন পদ্ধতি দুই থিতানো পদ্ধতি। এই তরল পদার্থ গুলো হাইড্রোকার্বন এবং এগুলোর ধর্ম এবং বর্ণ ডিজেল পেট্রোল অকটেন এবং নির্গত গ্যাস এলপি গ্যাস এর মতো। তাই এগুলো ডিজেল পেট্রোল অকটেন ও এলপি গ্যাস। এর মধ্যে উছিষ্ট পলিথিনের ছাই ফটোসষ্ট্যাট মেশিনের কালি হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করার পদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও আমার বেশ কয়েকটি আর্কষনীয় গবেষনা রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধান বলেন, রোস্তম আলীর পলিথিন পুড়ে পেট্রোল তৈরির বিষয়টি দেখলাম। এটি একটি ভাল উদ্যোগ। রোস্তম আলীর যদি আরো উন্নতভাবে তৈরি করতে পারে তাহলে তাকে সহযোগীতা করা হবে।