জজ মিয়া নাটক যেভাবে উন্মোচিত হয়!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৫:৩৪,অপরাহ্ন ২১ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৮৯৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যায় গ্রেনেড হামলা চালায় সে সময়ের রাজনীতির কুশীলবেরা। এতে আওয়ামী লীগের তৎকালীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।
ইতিহাসের নারকীয় সেই গ্রেনেড হামলার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল ও দলটির অন্য নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী আরও দুটি মামলা করেন। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে তদন্তের দায়িত্ব গড়ায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে।
ঘটনার প্রথম দিকে শৈবাল সাহা পার্থ নামের এক তরুণকে আটক করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে এর মূলহোতা দাবি করে জজ মিয়া নামের এক সিডি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এর ৩ বছর পর এটিও জোট সরকারের চক্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। তদন্তের নামে তৎকালীন জোট সরকার পুরো ঘটনাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে।
ঘটনার ১০ মাসের মাথায় ২০০৫ সালের ৯ জুন সিআইডি আকস্মিক দাবি করে, গ্রেনেড হামলার মূল আসামি জজ মিয়া ধরা পড়েছে। এমন ঘোষণায় সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়ার উপর জেরার নামে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের মুখে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে জজ মিয়া বলেন, তিনি আগে কখনো গ্রেনেড দেখেননি। গ্রেনেড ও বোমার মধ্যে পার্থক্য তিনি জানেন না। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। আর বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।
এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, জজ মিয়াকে গ্রেফতারের পর থেকেই সিআইডি তার পরিবারকে প্রতিমাসে ভরণপোষণ বাবত ২ হাজার টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি।
জানা যায়, জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে আনার সময় তার মা জোবেদা খাতুনকে সিআইডির সে সময়ের বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিক ও আবদুর রশীদ বলেছিলেন, আপনার ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। তাকে ভালো চাকরি দেব, আপনারা সুখে থাকবেন। এরপরই জজ মিয়ার মাকে মাসিক ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। কিন্তু আসল ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কর্মকর্তারা টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন।