এরশাদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ায় ক্ষুব্ধ ফখরুল!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩৪:১৪,অপরাহ্ন ১৮ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ১৫৩১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সদ্যপ্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রাষ্টীয় মর্যাদা দেয়ায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদকে ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে আপস করে, তাদের সঙ্গে জোট করে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে। আজকে তাকে (এরশাদ) রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়। আর যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করলেন, ১৯৭১ সালে পাক সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী থাকলেন তাকে আজকে কারাগারের অন্ধকারে অন্তরীণ করে রাখা হয়।’
বৃহস্পতিবার বিকালে বরিশাল নগরীতে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে ফখরুল প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে স্থানীয় বিএনপি এই সমাবেশ করে।
এরশাদের মৃত্যুতে নিজেদের শোক জানানোর কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা রাজনৈতিক দলের সভাপতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছি। কিন্তু এটা সত্য যে, এরশাদ সরকারের আমলেই এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, তার সরকারের আমলেই আমাদের বহু মানুষ, ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে। জনগণের উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে সরানো হয়েছে।’
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই, এদেশের মানুষ আমরা কখনো পরাজয় স্বীকার করিনি। আমরা আমাদের সমস্ত দাবি আদায় করেছি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আমরা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করেছি, ১৯৫৪ সালে সমস্ত দল এক হয়ে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে স্বৈরাচার মুসলিম লীগকে পরাজিত করেছি, আমরাই ১৯৬৯ সালে ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐক্য সৃষ্টি করে সেদিন স্বৈরাচার আইয়ুব খানকে পরাজিত করেছি, আমরাই ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাক স্বৈরাচারকে হটিয়ে দিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তৈরি করেছি, আমরাই ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার ঐক্য সৃষ্টি করে তাদেরকে পরাজিত করেছি এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’
‘আমাদের অধিকার আমাদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের অধিকার অন্য কেউ কি রক্ষা করে দেবে? আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন কি অন্য কেউ করবে? আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশের ফিরিয়ে আনার আন্দোলন কি অন্য কেউ করবে? বিচার বিভাগের স্বাধীনতার আন্দোলন কি অন্য কেউ করবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জনগণের কথা শুনুন, দেয়ালের লিখন পড়ুন, তাদের ভাষা যেসব উচ্চারিত হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের কথা বুঝতে চেষ্টা করুন, বিরোধী দলগুলোকে ডেকে আলোচনা করে একটা রাস্তা বের করেন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বরিশালের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, এত প্রতিকূলতার মধ্যে আপনারা এখানে এসেছেন। আজকে বরিশাল থেকে আন্দোলনের সূচনা হলো। সরকারকে বলব, কালবিলম্ব না করে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। তাকে যদি মুক্তি না দেন আপনাদেরও রক্ষা হবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণ আর ধর্ষণ ছাড়া কোনো খবর নাই। হত্যা শুধু হত্যা আর হত্যা। আদালতও হত্যা থেকে বাদ যাচ্ছে না। মেগা প্রজেক্টের নামে, মেগা উন্নয়নের নামে তারা নিজেদের পকেট বোঝাই করছে। মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।’অবিলম্বে একাদশ নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসরন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশালের হেমায়েতউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে এই জনসভা হয়। মহানগরসহ ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়া প্রতিকৃতি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে ঈদগাহ মাঠে আসেন। সর্বশেষ গত বছরের ৭ এপ্রিল এই মাঠেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি সমাবেশ করেছিল।
মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনের পরিচালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস জাহান শিরিন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আকন কুদ্দুছুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, হাফিজ ইব্রাহিম, মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ, আবুল হোসেন খান, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, হাসান মামুন, হায়দার আলী লেলিন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নুরুল ইসলাম নয়ন, মোস্তাফিজুর রহমান, এলিজা জামান, বরিশালের এবাদুর হক চাঁন, ভোলার গোলাম নবী আলমগীর, ঝালকাঠির মোস্তফা কামাল মন্টু, পটুয়াখালীর অহিদ সারোয়ার কালাম, পিরোজপুরের আলমগীর হোসেন, বরগুনার নুরুল ইসলাম মোল্লা প্রমূখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বরিশালের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, ইলেন ভুট্টো, ফিরোজ উজ জামান, বাহাউদ্দিন বাহার, মেহেদি হাসান তালুকদার, রুহুল আমিন দুলাল, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।