নড়াইল ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪০:৫৪,অপরাহ্ন ১৬ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৫০৯ বার পঠিত
নড়াইল থেকে সংবাদদাতা:: নড়াইলের কালিয়া সরকারি শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। উপধ্যাক্ষ কামাল মাহমুদ কলেজের বিভিন্ন মালামাল ও গাছ বিক্রি, পরীক্ষার ফরম পূরণ এবং ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মের সীমাহীন অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিকারের আশায় কলেজের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপাধ্যক্ষ কামাল মাহমুদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কলেজের নগদ অর্থ, মালামাল ও গাছ বিক্রির বিপুল পরিমাণ টাকা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে তার নিজের কাছে রেখে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ২০১৭-১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিক নিবার্চনীয় পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয় অকৃতকার্য হয়েছিল তাদের নিকট থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করেছিলেন। যারা এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল তাদের নিকট থেকে এক বিষয়ে ১হাজার, দুই বিষয়ে ২ হাজার এবং ৩ বিষয়ে ৩ হাজার টাকা গ্রহণ করেছিলেন।তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ,তিনি ভর্তিতে এবং পরীক্ষার ফরম পূরণে সর্বনিম্ন ৫০০ এবং সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করছেন। আবার কলেজে নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করে পরিচালনা কমিটি বা অধ্যক্ষের অনুমতি ব্যতিত প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থী প্রতি ইনকোর্স ফি ২০০,কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ৩০০ থেকে ৫০০, অফিস ব্যবস্থাপনা ২০০ থেকে ৫০০, কলেজ উন্নয়ন ২০০ থেকে ৫০০,পরিচয় পত্র ১০০ থেকে ২০০,সাহায্য তহবিল ৫০ থেকে ১০০,অন্যান্য ৫০,ইনকোর্স পরীক্ষা না দিলে ১ হাজার ৪০০,নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বিষয় ফেল করলে ১ হাজার,দুই বিষয় ২ হাজার এবং তিন বিষয় ফেল করলে ৩ হাজার,উপবৃত্তি ফরম ১০০ থেকে ২০০, উপবৃত্তি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করে থাকেন।ওই অর্থ কলেজ তহবিলে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করছেন।
এমনকি কলেজে অনুপস্থিত থাকলে একদিনের জন্য ২০ টাকা হারে জরিমানা আদায়ের অর্থও আত্মসাৎ করছেন। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই কলেজের ৮টি মাঝারি আকারের মেহেগুনি, ৫টি রেইন ট্রি, একটি বড় আকারের কাঁঠাল, ২টি নিম ও ১টি জাম গাছ কেটে বিক্রি করে আতœসাৎ করেছেন। যার সর্বমোট আনুমানিক মূল্য ২ লক্ষাধিক টাকা। তিনি নিম ও কাঁঠাল গাছ দিয়ে কাঠ মিস্ত্রী দিয়ে সোফা তৈরি করে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এছাড়া কলেজের বেশকিছু দরজা,জানালা,ইট,ইটের খোয়া, সিলেট সান বালু,একটি আরএফএল ব্র্যান্ডের দরজা,লোহা ও অনেক খুটিনাটি মালামাল বাড়িতে নিয়ে নিজ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। এভাবে তিনি নিজে করেছেন নিয়মের বেড়াজাল ছিন্ন। উপাধ্যক্ষ কামাল মাহমুদ স্থানীয় এবং বেশ প্রভাবশালী হওয়ার কারণে গোটা কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁর কাছে জিম্মি। বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়না জানা গেছে, ওই কলেজের অধ্যক্ষ তপন কুমার দাশ ও উপাধ্যক্ষ কামাল মাহমুদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রেশারেশি চলে আসছে। এ রেশারেশির কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কলেজের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা।
কামাল মাহমুদ প্রথম কর্মজীবন ১৯৯৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য তিনি ওই কলেজ থেকে বরখাস্ত হন। কালিয়া কলেজে যোগ করারপর থেকেই নানা ধরনের অনিয়ম শুরু করেন। তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও রুঢ় ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক অনিয়মের পাশাপশি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় গোড়ামীরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি জঙ্গি সংগঠন আইএসকে সমর্থন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি শহীদ দিবস,স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে তিনি অংশ গ্রহণ করেন না। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়েতে ইসলামীর অনুসারী হয়েও অদৃশ্য শক্তির বলয়ে তিনি দীঘদিন থেকেই কলেজের নীতি নির্ধারণী সব ক্ষেত্রে ব্যাপক দাপট দেখিয়ে চলেছেন। উপাধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুস সালামের নামে প্রতিষ্ঠিত কালিয়া উপজেলাবাসীর উচ্চ শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভাবকবৃন্দ।
তবে এসব অভিযেগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ কামাল মাহমুদ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,‘আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করে থাকি। এজন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ অভিযোগ করা হয়েছে।