যুক্তরাজ্য কি একঘরে হয়ে যাচ্ছে?
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৬:৪৭,অপরাহ্ন ১১ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ১৭৪৭ বার পঠিত
::জুবের আহমদ::
এক সময়ের পরাক্রমশালী যুক্তরাজ্যে , মনে হচ্ছে দিনে দিনে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যাচ্ছে । সাম্রাজ্যের পতন হয়তো সময়ের মাত্র । যুক্তরাজ্যের এখনকার অবস্তা কাগজে কলমে বাঘ , কিন্তু আসলে নখ দন্তহীন । যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহার করলে , আন্তর্জাতিকভাবে কেউ তাদেরকে গন্যই করবে না । যুক্তরাজ্যের আজকের এহেন নাজুক পরিস্তিতির জন্য নি:সন্দেহে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরুন অনেকাংশেই দ্বায়ী । ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাহির হইবার জন্য গনভোট আয়োজন ছিলো যুক্তরাজ্যের জন্য বিরাট ভুল । আর সেই ভুলের মাসুল হয়তো দিতে হতে পারে, আরো অনেক যুগ । অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার সময় যুক্তরাজ্যের অবস্তান ছিলো উপরের দিকে । এখন যে অবস্তানে জার্মানী এবং ফ্রান্স আছে ,তার চেয়ে ও বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা অন্যান্য দেশের চেয়ে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো যুক্তরাজ্য । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে কারেন্সি । সবাই অভিন্ন মূদ্রা ইউরো ব্যবহার করলেও যুক্তরাজ্য তাদের নিজস্ব মূদ্রা ব্যবহার করতো এবং এখনো করতেছে।
যাই হউক যুক্তরাজ্যের জন্য আগামী ৩১শে অক্টোবর হইতেছে ডেডলাইন । এই সময়ের ভিতরে যুক্তরাজ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাহির হইতেই হবে । চুক্তি ইউক বা না হউক । অবস্তাদৃস্টে মনে হচ্ছে যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাহির হবে চুক্তি ছাড়াই । আর যদি তাই হয় ,তাহলে নি:সন্দেহে যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোষানলে পরবে । বানিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে কোনটাসা হবে যুক্তরাজ্য । ক্ষতি পোষাতে যুক্তরাজ্য হয়তো চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে জোগবে । কিন্তু সেখানে ও তাদের অবস্তান নড়বড়ে । হংকংয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনে যুক্তরাজ্যের ইন্দন আছে বলে চীন অভিযোগ করেছে এবং তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য চীন যুক্তরাজ্যকে হুঁশিয়ার করেছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের নিযুক্ত ইংল্যান্ডের রাস্ট্রদূত স্যার কিম ডারেন এর একটি মেমো ফাঁস হয়েছে দুইদিন আগে সেখানে তিনি বর্তমান ট্র্যাম্প প্রশাসনকে অদক্ষ এবং অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন । ট্রাম্প এটা জানার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং উক্ত রাস্ট্রদূতকে নির্বোধ বলে সম্বোধন করেছেন এবং সেই সাথে তার সাথে কোনো ধরনের কাজ করবেন না বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন । শুধু তাই নয় কাতারের আমিরের সাথে ডিনার পার্টিতে সেই রাস্টদুতের আমন্ত্রণ শেষ মূহুর্তে প্রত্যাহার ও করা হয় । যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এই রকম অপমান কেউ তাদের করেনি কোনোদিন । এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে কুটনৈতিক টানাপোড়ান শুরু হয়েছে এবং শেষমেষ উক্ত রাস্ট্রদুতকে জোড়পুর্বক অব্যাহতী দেওয়া হয়েছে যদিও মিডিয়ায় বলা হয়েছে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন । রাজনৈতিক এবং কুটনৈতিক ভাবে যুক্তরাজ্যে, যে কতোটুকু দুর্বল তা এই ঘটনায় প্রতিয়মান হয় অথচ প্রত্যেকটি রাস্ট্রদুতের অধিকার রয়েছে সেই দেশের সরকার সম্পর্কে তার নিজস্ব এসেসমেন্ট করার । তাছারা স্যার কিম ডারেন হচ্ছেন প্রচন্ড মেধাবী এবং ঝানু কুটনেতিক । তার আছে অনেক সাফল্যগাথা ইতিহাস । কুটনৈতিক কাজের জন্য উনি পেয়েছেন স্যার উপাধী । তার পরও তাহাকে বিদায় নিতে হলো ।
উল্লেখ্য এই মেমো ফাঁস হওয়ার পিছনে যুক্তরাজ্য গতানুগতিক ভাবে রাশিয়াকে দুষারোপ করছে যেমনি ভাবে দুষারোপ করেছিলো নার্ভ এজেন্ট দিয়ে স্ক্রীপাল হত্যাকাণ্ডের চেস্টাকে । কিন্তু এখন পর্যন্ত তার স্বপক্ষে যুক্তরাজ্য্ কেনো প্রমান দিতে পারে নি । রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক দিনকে দিন খারাপই হচ্ছে । সম্প্রতি ইসরাইলকে খুশি করার জন্য ইরানের তেলবাহী ট্যাংক আটকানোর ঘটনা নাই বা বললাম । এই হলো বর্তমান যুক্তরাজ্যের প্রকৃত অবস্তা । বিসেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাজ্যে দিনের পর দিন এতোই দুর্বল হচ্ছে যে তাদের ইতিহাসে, তাদের এতো দূর্বলতার চোখে পড়েনি ।
লেখক: পর্তুগাল প্রবাসী।