হতদরিদ্রদের তালিকা করুন : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৯:১৭,অপরাহ্ন ২২ অক্টোবর ২০১৬ | সংবাদটি ২১০১ বার পঠিত
দলীয় কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (২২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নেতাকর্মীদের প্রতি, কাউন্সিলর ডেলিগেটদের প্রতি আহ্বান জানাব। সকল নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে আমার আহ্বান থাকবে-বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। কাজেই আপনারা নিজ নিজ এলাকায় কতজন দরিদ্র মানুষ আছে, গৃহহারা মানুষ আছে, কোন মানুষের ঘর নাই, বাড়ি নাই, ঠিকানা নাই, নিঃস্ব-রিক্ত মানুষ, কারা হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী-আপনারা তাদের তালিকা বানান। তাদের জন্য আমরা বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দেব। তারা যাতে বেঁচে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব। কারণ তারা আমাদের নাগরিক। জনগণের কল্যাণ করাই আমাদের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি এ কাজ সঠিকভাবে করতে পারি ইনশা আল্লাহ আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। দারিদ্র্যের হার আমরা ২২ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্রের হার আমরা ১২ ভাগের নিচে নামিয়ে এনেছি।
৯৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন কৃষক ব্যাংকে হিসাব খুলে কৃষি উপকরণে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২ কোটি ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯৭ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড আমরা দিয়েছি। এর মাধ্যমে তারা ভর্তুকির টাকা পান এবং কৃষি উপকরণ কিনতে পারেন। এভাবেই আজকে আমার বাংলাদেশে ৩ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টনের উপর খাদ্য উৎপাদন করছি। যারা দরিদ্র, প্রতিবন্ধী তাদের খাদ্য বিতরণ করে যাচ্ছি। একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট না পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগের উপর নিয়ে যাব
‘আমরা প্রবৃদ্ধি ইতিমধ্যে ৭ ভাগে উন্নীত করেছি। আমরা এখানেই থেমে থাকতে চাই না। ৮ থেকে ১০ ভাগের ওপর এ প্রবৃদ্ধি অর্জন আমরা নিয়ে যাব। দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনব।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি উন্নত দেশে হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই আমরা ঘোষণা দিয়েছি সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। এর বিরুদ্ধে আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি এবং নিয়ে যাব।’
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেব না
‘সেই সাথে বাংলাদেশের মাটি, এ দেশের ভূখণ্ড কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না বা কোনো্ প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য আমাদের ভূ-খণ্ড কাউকে আমরা ব্যবহার করতে দেব না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া হবে পাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এই পাচ্য-পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধ দেশ হিসেবে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। এ জন্য আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি।’
যা অর্জন তা সবই আওয়ামী লীগের দান
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রাচীনতম সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম। আজকে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। আজ আমরা বাঙালি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি বিশ্ব দরবারে। আমরা আত্মপরিচয়ের সুযোগ পেয়েছি। আমাদের ভাষা মাতৃভাষা, বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যা অর্জন, যতটুকু আজ অর্জিত হয়েছে তা সবই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দান। আওয়ামী লীগই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এ অর্জন এনে দিয়েছে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শত আঘাত, প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ এ সংগঠনকে ধরে রেখেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে, আমি সকলের কথাই কাজ স্মরণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন।
‘বর্তমানে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের একেবারে অনগ্রসর জাতি অর্থাৎ হিজড়া, বেদে ও হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনকে আমরা ৬০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দিচ্ছি। চা শ্রমিকদের জন্য ১৫ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছি। এভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে পড়ে থাকা মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
‘বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, সেতু, রেল নৌপথ, বিমান যোগাযোগ- সবকিছু যাতে উন্নত হয় সেজন্য ব্যাপক কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
এক লাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করা। একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি যেখানে বেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে।’
বন ৭ ভাগ থেকে ১৩ ভাগে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০ ভাগে উন্নীত করা।’
আওয়ামী লীগ-প্রধান বলেন, ‘সবাইকে আমরা কম্পিউটার শিক্ষা দেব। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য থাকবে না। ইনশা আল্লাহ শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে, প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বালার ব্যবস্থা আমরা নেব।’
শনিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে দু’দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সভাপতির বক্তব্য শুরু করেন তিনি। প্রায় ৪০ মিনিট বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।