আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেম ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৫:৩০,অপরাহ্ন ১৬ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ২৯৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন ফেনীর সোনাইগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রায় তিন সপ্তাহ পর রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ফেনীতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
ফেনীর আলোচিত কিশোরী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনায় সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় গত ২৭ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। প্রশ্ন উঠে পুলিশ তাকে ইচ্ছা করে ছাড় দিচ্ছে কি না। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নিশ্চয়তা দিচ্ছিলেন, যে কোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার হবে।
পরোয়ানা জারির ২০ তম দিনে রবিবার দুপুরে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে সার্ক ফোয়ারা এলাকায় ওসি মোয়াজ্জেম ধরা পড়েন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকের বিস্তারিত জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মারুফ সরদার।
পুলিশের ধারণা, মোয়াজ্জেম কৌশলে জামিন নিতে জন্য হাইকোর্ট চত্বর এলাকায় এসেছিলেন। তবে আগে থেকেই তাকে নজরদারিতে রেখেছিল পুলিশ। আদালত চত্বরে ঢোকার আগেই শাহবাগ পুলিশের হাধেরা পড়েন তিনি।
হাইকোর্টে দায়িত্বরত ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, নিজের পরিচয় লুকাতে দাড়ি-গোঁফ বড় রেখেছিলেন মোয়াজ্জেম। এ কারণে প্রথমে তাকে চিনতে পারেননি তারা। কয়েকবারের চেষ্টায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার সঙ্গে দেখা করে নুসরাত যৌন হয়রানির যে অভিযোগ করেছিলেন, সেটি ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি নিজে। বিষয়টি নিয়ে তোলপার হলে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন আরেক আলোচিত আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ডিসি মারুফ সরদার বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। আমরা তাকে খুঁজছিলাম। সার্ক ফোয়ারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুনেছি সে জামিন নিতে হাইকোর্টে গিয়েছিল। তবে এতো দিন কোথায় আত্মগোপনে ছিল সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।’
এখন ডিএমপি কী করবে- এমন প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে (মোয়াজ্জেম) সোনাইগাজী থানা পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাকি দায়িত্ব তাদের।’
গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চারটি টিম নিবিড়ভাবে কাজ করে। তাদের কাছে তথ্য ছিল, মোয়াজ্জেম গত কয়েকদিন ধরে কুমিল্লায় অবস্থান করছেন। সেই তথ্য অনুযায়ী গত চার দিনে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফোন নম্বর ট্র্যাকিং মোয়াজ্জেমের ফোনে অবস্থান নির্ণয় করা গেলেও গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশল অবলম্বন করেছিলেন তিনি। নিজের ফোনটি অন্যের কাছে দিয়ে রেখেছিলেন।
গত ২৭ মার্চ রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা শ্রেণীকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন বলে অভিযোগ ছিল। এমন অভিযোগ উঠলে রাফিকে থানায় ডেকে নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করার সময় রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন তিনি। এ সময় দুই জন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন মেয়েটি।
ওসি যখন ভিডিও করছিলেন, তখন নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। ওই সময় ওসি বলেন, ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও। …‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠার পর অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে ওসি মোয়াজ্জেম ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ছিল। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।