নন্দিত নেতা শেখ হাসিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৪:০৪,অপরাহ্ন ০৭ অক্টোবর ২০১৬ | সংবাদটি ১৭৩১ বার পঠিত
কেয়া চৌধুরী : দেশের নন্দিত নেতা শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর। একটি মহৎ জীবনের প্রতি ভালবাসা শ্রদ্ধা আর গভীর আর্কষণ থেকে কিছু লেখার এই প্রয়াস-
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনতার উদ্দেশে হাত তুলে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। বাড়ির মূল অংশের বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণী। তিনি আর কেউ নন, আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বড় মেয়ে। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাকে আদর করে ডাকতেন ‘হাসু’ নামে। পারিবারিক গভীর বন্ধনে আনন্দঘন পরিবেশে যার বেড়ে ওঠা।
জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামে সাহসের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও দীপ্তিময় উদার মানুষ তিনি। সুখ স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে যোগ দিয়েছেন দেশ গড়ার বৃহৎ কর্মক্ষেত্রে। আড়ম্বরহীন সহজ সরল জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে মাঠে নেমেছেন। তার রয়েছে সকলকে সুখী করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। তার মূল লক্ষ্য তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার।
১৯৭৫ সালে পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ছিলেন বিদেশে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কাজের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন জননেত্রী। তার পথ চলা কখনই নিরাপদ ছিল না। তাকে বিপদে পড়তে হয়েছে বারবার। তারপরও থেমে যাননি তিনি।
মানুষের অধিকার আদায়ের মূলমন্ত্র নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তাকেই সবচাইতে বেশি অধিকার বঞ্চিত হতে হয়েছে। দেশে ফিরে তিনি পিত্রালয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে পারেননি। ইনডেমনিটি অধ্যদেশ জারি থাকায় একজন সাধারণ নাগরিকের মতো থানায় গিয়ে একটি জিডি করার আইনি অধিকারও প্রয়োগ করতে পারেননি।
দেশের স্বাধীনতাকে ফলপ্রসূ করার এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামেন শেখ হাসিনা। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন বাঙালির আশা-আকাঙক্ষার প্রতীক। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি যারা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় না, তাদের কোপানলে পড়েন তিনি। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
রাজনীতির অর্থ দেশসেবা- এ কথাই তিনি শুনে এসেছেন শৈশব জুড়ে। মানুষের সঙ্গে মেশার ও মানুষকে বুঝতে পারার চেষ্টা নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী হিসেবে ছুটে চলেছেন। কখনো হেঁটে, কখনো নৌকায়, কখনো ট্রেনে বা ভ্যান গাড়িতে করে ছুটে গেছেন গ্রামে-গঞ্জে, কুটিরে, বস্তিতে। অনাহারে-অনাদরে যারা দিন যাপন করছে সেই মানুষগুলোর কাছে গেছেন। যেকোনো জনপদের দুর্দশার তথ্য তার কাছে কখনো আড়াল থাকেনি।
বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা শেখ হাসিনা তার পরিবার থেকে জেনে এসেছেন। যুক্ত হয়েছেন বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শুনেছেন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা। যাদের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আর্দশ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে বাঙালি যুদ্ধ করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে দেশ শাসনের কাজ শুরু করেছিলেন। স্বাধীর বাংলার মাটিতে অল্প দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র উপহার দিতে পেরেছেন তিনি। যে শাসনতন্ত্র ছিল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। অনাগত প্রজন্ম যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারে, বিশ্বের অন্যতম সভ্য ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নাগরিক আমরা- এই ছিল বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা। কিন্তু তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পথ হারানোর গল্প শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হিরো’ বানানো হয়। পুরস্কৃত করা হয় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরকে।
শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে পথ দেখানো শুরু করেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনেছেন। দেশবাসীকে এক নতুন জীবনবোধে জাগ্রত করলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে সক্ষম হন। শহীদদের স্বজনেরা যা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, জননেত্রী শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করলেন।
বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যাওয়ার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বসভায় ‘শেখ হাসিনা’ একটি প্রশংসিত নাম। চলতি বছরের শুরুতে জি-সেভেন সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে পাশে থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বের নামকরা সংস্থাগুলোর জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ক্ষমতাধর বিশ্ব নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কথা। জঙ্গিবাদের ব্যাপারে তিনি সরকারের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা ঘোষণা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি ‘সুখী-সমৃৃদ্ধ বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা এগিয়ে যাচ্ছেন। এই এগিয়ে যাওয়ার পথে সকল চ্যালেঞ্জ গ্রহণে বাংলার আপামর জনসাধারণ তাকে শক্তি যুগিয়ে চলেছে। প্রতিটি মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশে চাল রপ্তানি হচ্ছে। ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে সরকার।
শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। তার যাত্রাপথ হোক নিষ্কণ্টক। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তার জয় হোক। তিনি দীর্ঘজীবী হোন। বাংলাদেশকে পরিণত করুন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়। এই কামনায় তার জন্মদিনে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভালবাসা।
লেখক : সমাজকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও সংসদ সদস্য