যাযাবরের অনুতাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৭:২৪,অপরাহ্ন ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৭৭৩ বার পঠিত
::বিপ্লব চক্রবর্তী::
আজকাল চোখ খুললে আমি আর মানুষ দেখতে পাই না,
দেখি কিছু অবাধ্য শকুন,
কিছু ক্ষুধার্ত নেকড়ের দল।
হাহাকার জুড়ে দেয় তারা সারা জগতে,
তাদের তীব্র শব্দে
কোনো কোকিলের গান শুনতে পাই না।
প্রভাতের ডাক শুনতে পাই না।
চোখে ঝাপসা দেখি,
নীল হয়ে আসে চোখ।
গলা চাপা আমার আবদ্ধ আকাশে
আর কোনো পাখি উড়ে বেড়ায় না,
নাটাই এর টানে শো শো করে
ঘুরে বেড়ায় না আর কোনো ঘুড়ি।
আজকে অনেক ভোরে ঘুম ভাঙল,
মুখখানি রাঙা ছিল আমার,
শরীরে ছিল জোয়ার, শত জন্মের ঢেউ,
ধোঁয়াশা মেটানোর কাজে লেগে পড়তে-
আজ আমি বদ্ধ পরিকর।
কিন্তু। আয়নার চোখে চোখ রাখতেই
নেতিয়ে গেল চেহারা,
অবাধ্য হয়ে গেল চেতনা,
পঁচে গলে গেল শরীর।
এক জঘন্য গন্ধে ছেয়ে গেল আমার ঘর,
এক রুম থেকে আরেক রুমে।
আমি আজ আয়নার বদলে
শকুনের চোখে চোখ রাখি,
পাপড়ি ফেলতে দেই না
কিন্তু চোখ সরাতে হয়,
শকুনের সারা দেহে অনেক তেজ,
তার চোখ চিক চিক করে বালির মতো,
সারা দেহে দাবদাহ,
দাঁতে-মুখে গলে যাওয়া মাংস ঝুলে আছে
রক্ত আমি আর দেখতে চাই না,
চোখ সরিয়ে ফেলি।
শুনেছি আজ ভোরে কোনো শহরে লেগেছে আগুন
পুড়ে গেছে ঘর, বাজার, রাজপাট,
রাজপথে আজ নেকড়ের থাবা।
আমার ছুটে যেতে মন চায়
কিন্তু কোনো এক জনমের দুর্বলতা আমাকে আঁকড়ে ধরে,
আমার শার্টের বোতাম ঝুলে পরে,
ছিঁড়ে যায়।
বেহুঁশ আমি দিগ্বিদিক ছুটি,
নতুন জুতোর খুঁজে
নতুন তৃপ্তির খুঁজে। (চলবে…)
বিধাতার অদৃষ্টে জড়ানো
চেতনার শামুক, আমার
মোমের শরীরে উৎপাত শুরু করে দেয়।
আমার গলার কোণে বেঁধে থাকা সুর
আত্মসমর্পণ করতে পারেনা,
চিৎকার ও না।
শুধু কিছু মূর্খের আওড়ানো বুলি
আমার কানের কাছে এসে
কিছু একটা শুনাতে থাকে।
আমি শুনতে চাই না।
কখনো কখনো মনে হয়,
কানটা না থাকলেই
ভালো হতো বোধহয়,
হয়তো শুনতে হতো না
কোনো বিশ্রী বা অশুভ কথা। আর-
সুশ্রী থাকতে কেনইবা আমি
বিশ্রী শুনতে চাইবো।
আমার কল্পিত অভিষেক মৃত্তিকাপ্রবণ,
আর পিশাচগুলো প্রকৃতির দায়গ্রস্ত।
আজকাল বিধাত্রীর আর্তনাদও
বিশ্রী লাগে,
হে ধাতা, হে পিতা,
তুমি কি কোনো উপঢৌকন?
নাকি আমার যাতনার দীর্ঘ অভিলাষ?
হঠাৎ!!!!!!!
আমার আত্মার দিকে তাকায় ধরা,
শত বর্ষের মৃতপ্রায় সংস্কৃতি ঝরে-
ডালের লতায় পাতায় জড়ানো কঙ্কালের নিঃশ্বাস
বর্ষা হয়ে, আমার অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ানো কপোতের গায়ে নিস্তব্ধতার প্রতীক একে যায়।