প্রকল্পের ঘর নির্মাণেও দুর্নীতি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২৮:৪০,অপরাহ্ন ০৩ মে ২০২০ | সংবাদটি ৬৫৪ বার পঠিত
কায়রা (খুলনা) থেকে সংবাদদাতা : খুলনার কয়রা উপজেলার মেঘারাইট গ্রামের মাহফুজুর রহমান। সরকারের ‘গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় তিনি একটি ঘর পেয়েছেন। ঘরটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তিন লাখ টাকা। সম্প্রতি তার ঘরটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
কিন্তু ঘরটি নির্মাণের জন্য তার নিজের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।
মাহফুজ বলেন, ‘সরকার আমারে ঘর দিয়েছে। সব খরচ তার। তারপরও ইট, সিমেন্ট, মালামাল পরিবহন ও মিস্ত্রি খরচ বাবদ ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঘরে দেওয়া কাঠ ভালো না। জানালার গ্রিল ও চালের টিনও নিম্নমানের। ’
মাহফুজের মতো কয়রা সদর ইউনিয়নের হাসিনা খাতুন নামে এক উপকারভোগী অভিযোগ করেন, হিসাব অনুযায়ী তার বাসগৃহটি নির্মাণে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, নির্মাণকাজে নিয়োজিত মিস্ত্রিদের খাওয়া খরচ তাকে বহন করতে হয়েছে।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৩৬টি পরিবারকে বাসগৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা। এর মধ্যে ৩৪টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, জমি আছে ঘর নেই এমন দুস্থ ও হতদরিদ্রদের মাঝে দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়। দুই কক্ষ, রান্নাঘর, বাথরুমসহ করিডরবিশিষ্ট প্রতিটি ঘরের বিপরীতে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে হতদরিদ্র এবং যারা ১০ শতাংশের নিচে জমির মালিক এবং থাকার ঘর নেই এমন জনগোষ্ঠীকে ঘর নির্মাণের লক্ষ্যে সারা দেশের মতো কয়রায় এ প্রকল্প নেওয়া হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘরের সঙ্গে একটি রান্নাঘর ও টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের নীতিমালা ও নকশা অনুসরণ করা হয়নি। পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফলে বরাদ্দের অর্ধেক টাকাই নয়ছয় হয়েছে।
উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন, নির্মাণকাজে তদারকি করেছেন কৌশিক ও ওলি নামে দুই ব্যক্তি। তারা স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কমিটির সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন তারা। নকশা অনুযায়ী কাজ না করায় ৯ হাজারের স্থলে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার ইটে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর কয়রার এক সুবিধাভোগী বলেন, ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট, বালু ও কাঠ। কয়রা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা জনি চন্দ্র দাশ বলেন, আমার ঘরে সাড়ে ৬ হাজার ইট দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ না হতেই একটি জানালা ভেঙে গেছে। ঘরের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাফর রানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রকল্পের নীতিমালা ও নকশা অনুযায়ী প্রতিটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। নির্মাণসামগ্রী শতভাগ সঠিক দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে কাজ তদারকি করেছি। ওলি ও কৌশিক এ কাজ পরিদর্শনে কখনো যাননি। ’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউএনও শিমুল কুমার সাহা বলেন, অনিয়মের ব্যাপারে উপকারভোগীদের কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে না।
প্রকল্পের প্রধান উপদেষ্টা ও খুলনা-৬ আসনের (কয়রা-পাইকগাছা) সাংসদ মো. আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘এ বিষয়ে দুর্নীতি হলে খোঁজখবর নেব। তা ছাড়া অর্থ নেওয়ার ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেব। ’