করোনাকে আটকানোর পথ ‘টিকা’, এটি আসছে কবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫১:৪১,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৫০৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনাভাইরাসের ভয়ে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে ভরসা রাখছে সব দেশই। তবে বিজ্ঞানীদের মত, এই ভাইরাসকে আটকানোর একটাই পথ— টিকা। পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা করছেন এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট দাবি করেছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের টিকা এসে যাবে। গিলবার্ট ও তাঁর দল ইতিমধ্যে টিকা আবিষ্কারের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি মেল’-এ এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
গত মাসেই গিলবার্ট জানিয়েছিলেন যে, ২০২০ সালের শেষের দিকে তিনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা তৈরি করতে সক্ষম হবেন। সম্প্রতি সারা গিলবার্ট ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য টাইমস’-কে জানিয়েছেন, “এই ধরনের অন্য যে সব প্রতিষেধক নিয়ে আমরা কাজ করেছি, তার মতোই এই প্রতিষেধক কার্যকর হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এটা নিছক অনুমান নয়। নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এই প্রতিষেধক ৮০ শতাংশ সফল হবে।” যদিও কোনও নতুন প্রতিষেধক কার্যকর করতে অন্তত ১৮ মাস সময় লাগে বলে মত চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের, তবু তিনি এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই প্রতিষেধক কার্যকর করতে সক্ষম হবেন। তবে একই সঙ্গে এই ভ্যাকসিনোলজিস্ট জানান, কোনও প্রতিষেধকের ব্যাপারে কখনওই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই হিউম্যান ট্রায়ালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তা হলে কি এই মহামারিকে এ বারে আটকে দেওয়া যাবে? কী বলছেন কলকাতার চিকিৎসকরা? রাজ্যের করোনা উপদেষ্টা কমিটির গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ডের সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানালেন, “সার্স কোভ–২ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার অন্যতম হাতিয়ার অবশ্যই টিকা। মহামারির বাড়বাড়ন্ত আটকাতে এই মুহূর্তে টিকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী মহল একমত। কিন্তু এই মুহূর্তে বলা মুশকিল, কবে তা ব্যাপক হারে মানুষের ওপর প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। বিশ্বের তাবড় তাবড় গবেষণাগারে অজস্র বিজ্ঞানী টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু এখানে একটা বিষয় আছে। কোনও রোগীর অসুস্থতা কমাতে যে ভাবে ওষুধ প্রয়োগ করা যায়, সে ভাবে কিন্তু টিকা প্রয়োগ করা যায় না। কেননা টিকা প্রয়োগ করতে হয় সুস্থ মানুষের ওপর, রোগীকে টিকা দেওয়া যায় না। এ বারে কোনও সুস্থ মানুষের ওপর টিকা প্রয়োগ করতে গেলে খেয়াল রাখতে হবে তাঁর শরীরে যেন বিন্দুমাত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়। এর জন্যে ধাপে ধাপে অনেক অ্যানিম্যাল ট্রায়াল ও অনেক সময় দরকার। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের একটা নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন পাওয়া গেলে তবেই টিকা সম্পর্কে শেষ কথা বলা যাবে। কিন্তু এখনও সেই অ্যান্টিজেনকে শনাক্ত করা গিয়েছে কি না, সে বিষয়টিও স্বচ্ছ নয়। সুতরাং এই মুহূর্তে টিকার জন্য অপেক্ষা না করে মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখাটা ভাইরাস ঠেকিয়ে রাখার অন্যতম উপায়।”
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানি সারা গিলবার্ট ও তাঁর সহযোগীদের আবিষ্কৃত টিকার প্রসঙ্গে ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার জানালেন যে, “কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসকে জব্দ করতে আমরা সকলেই চাইছি একটা প্রতিষেধক। শোনা যাচ্ছে চিনের উহানের বেশ কিছু মানুষ নাকি সেরে ওঠার পরে আবার আক্রান্ত হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সার্স কোভ–২ করোনাভাইরাসের টিকা তো সোনার পাথরবাটি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণত কোনও নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণের পর সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয় অ্যান্টিবডির সাহায্যে। কিন্তু সত্যিই যদি দ্বিতীয় বার কেউ আক্রান্ত হন, তা হলে বুঝতে হবে সার্স কোভ–২ করোনাভাইরাস মিউটেশন করেছে। প্রতিষেধক দিয়ে কোনও লাভই হবে না। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসই হোক বা যে কোনও ভাইরাল ইনফেকশন, তিন ভাবে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করা হয়। এক, টিকা, দুই, অ্যান্টিভাইরাল আর তিন নম্বর হল প্রতিরোধ। প্রথম দু’টি পদ্ধতি সম্পর্কে এখনও গবেষণা চলছে। হাতে যা আছে সবই পরীক্ষামূলক। তাই তৃতীয় বিষয়টি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধে গৃহবন্দি থাকাই একমাত্র উপায়। তবে এ কথাও ঠিক, বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা করোনা প্রতিরোধী টিকা নিয়ে আদাজল খেয়ে গবেষণা করছেন। প্রতি দিনই এ রকম কোনও না কোনও খবর আসছে। কিন্তু সম্পূর্ণ হিউম্যান ট্রায়াল না হলে এ বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে মন্তব্য করা অনুচিত। ব্যাপক হারে টিকা ব্যবহার করার জন্য আরও অনেক বেশি সময় লাগে।”
সংক্রামক রোগের চিকিৎসক দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন, “কোভিড–১৯ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহল এখনও দ্বন্দ্বে আছেন। সম্পূর্ণ নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানা নেই। তাই অক্সফোর্ডে যে টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা যে আমাদের দেশে বা অন্য দেশে কার্যকর হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি যে কোনও নতুন টিকা ব্যাপক হারে দেওয়ার আগে অনেক বেশি সময় ধরে গবেষণা ও পরীক্ষা প্রয়োজন।”