সিলেট-তামাবিল রুটে পুণরায় বিআরটিসি বাস চালুর দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৮:৫৫,অপরাহ্ন ০৯ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৪৬৯ বার পঠিত
বিশেষ সংবাদ:: সিলেট-তামাবিল রুটে পুনরায় বিআরটিসির বাস চালুর দাবি জোরালো হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছেন বৃহত্তর জৈন্তাবাসী। সিলেট-তামাবিল রুটসহ ওই অঞ্চলের সিলেট-গোয়াইনঘাট ও সিলেট-কানাইঘাট রুটেও বিআরটিসির বাস চালুর দাবিতে প্রয়োজনে বৃহৎ কর্মসূচির ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে সিলেট-তামাবিল সড়কে বিআরটিসির বাস চালু হয়েছিল। কিন্তু পরিবহন মালিকদের নানামুখি ষড়যন্ত্রে এ বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। তবে এবার সিলেট-কোম্পানিগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চালু হলে বৃহত্তর জৈন্তাপুরবাসী এ দাবিতে সরব হন। তাদের দাবি- শিগগির সিলেট-তামাবিল রুটে বিআরটিসির বাস চালু করতে হবে। আর এ দাবিতে ইতোমধ্যেই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে এলাকাবাসী। জৈন্তাপুরবাসীর দাবিÑ সিলেট বিআরটিসি ডিপোতে পর্যাপ্তসংখ্যক বাস থাকা সত্তে¡ও স্বার্থান্বেষী একটি মহলের চাপে এ নাগরিক সেবা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার সিলেট-সুনামগঞ্জ ও সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কে বিআরটিসির বাসসেবা চালু করে ২০১৯ সালে। গত জুন মাসের প্রথম দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে এ বাস সার্ভিস চালু হয়। গত নভেম্বরে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কে বিআরটিসির বাসসেবা চালুর হয়। ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট এবং নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে পর্যটকদের যাতায়াত সহজতর করতে বেশ কয়েকটি বাস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বেসরকারি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে মাত্র চারটি বাস চালু হয় ওই রুটে। বর্তমানে এ দুটি রুটে বিআরটিসির মাত্র ৮টি বাস চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ম্যানেজার মো. জুলফিকার আলী বলেন, ‘যাত্রীদের যাতায়াতকে সহজ, নিরাপদ ও ব্যয় কমানো আমাদের দায়িত্ব। আমাদের কাছে প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি ও অন্যান্য রুটে বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বাসও আছে। অনেকগুলো নতুন দু’তলা বাস ডিপোতে পড়ে আছে। কিন্তু সড়কে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র সিলেট-সুনামগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ রুটে চারটি করে মোট ৮টি বাস চালানো হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে সিলেট থেকে ছাতক, জাফলং, হবিগঞ্জ রুটে বাস চালুর চিন্তাভাবনা রয়েছে।’
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা বাধা দেওয়ার নানা চেষ্টা করেছে এখনও করছে। যদিও সড়কে সরকারি বাস চলাচলে বাধা দেওয়াকে নৈরাজ্য বলে মনে করেন সিলেটের সুশীল সমাজ। এব্যাপারে ভ‚মি সন্তান সিলেটের আহবায়ক আশরাফুল কবির বলেন, ‘এখন তো প্রতিযোগিতার যুগ। সরকার কোনো বাস সার্ভিস বন্ধ করে বিআরটিসির বাস চালু করছে না। বরং এ বাস সার্ভিসের মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বাড়বে। যাত্রীরা ভালো সেবা চান। কে কোন বাসে চড়বে এটা কেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা নির্ধারণ কওে দেবে? সড়কে এ নৈরাজ্য বন্ধ করতে সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’
বৃহত্তর জৈন্তাপুর ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির সভাপতি আবুল মওলা চৌধুরী বলেন, জৈন্তাপুরে বিআরটিসি বাস চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবিতে বৃহত্তর জৈন্তাপুরবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট র্কতৃপক্ষ এ দাবি কেন এখনও বাস্তবায়ন করছে না, তা বুঝা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন,সিলেট-তামাবিল জাফলং একটি গুরুত্ব সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক যাতায়াত করেন। বর্তমানে যে সকল বাস আছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং মানসম্মত নয়। বেসরকারি বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে বার বার বলা সত্তেও তারা সেবার মান উন্নয়নের ব্যবস্থা নেননি। তাই বিআরটিসি বাস চালু করা একান্ত প্রয়োজন।’
জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন,এটা বৃহত্তর জৈন্তাবাসীর প্রাণের দাবি। ইতোমধ্যে এলাকার গর্ব প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস বিআরটিসি বাস শিগগির এ রুটে বাস চালু করা হবে।’
জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ বলেন,জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিআরটিসি বাস চালু হলে আমরা স্বাগত জানাই। তবে সেবার মান উন্নয়ন করে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এলাকার জনগণ যাতে সাধ্যের মধ্যে ভাল মানের সেবা পান তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বিআরটিসির সিলেট ডিপো ম্যানেজারের ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেন,উনার সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি কালক্ষেপন করছেন।’
জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সিলেট-সারি-গোয়াইনঘাট ও সিলেট তামাবিল রুটে বেসরকারি বাসের সংকট রয়েছে। তাই এ রুটে বিআরটিসির বাসের সেবা খুব প্রয়োজন। যেসব লোকাল বাস চলছে তাদের বেশিভাগেরই ফিটনেস নেই।
তামাবিলের ব্যবসায়ী ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু বলেন,বিগত সরকারের আমলে এ রুটে বিআরটিসি বাস চালু হলে বৃহত্তর জৈন্তাপুরবাসী স্বাগত জানান। কিন্তুকুচক্রী মহলের কারণে এসেবা বন্ধ হয়ে যায় কিছুদিন পরই। এটা খুবই দুঃখজনক।
তবে বিআরটিসি বাস চলাচল বিষয়ে বেসরকারি পরিবহন শ্রমিক নেতারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তারা জানান, লোকাল রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল করলে বেসরকারি পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তারা বিআরটিসি বাস চালুর বিরুদ্ধে। সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি মো. রুনু মিয়া বলেন,লোকাল রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গরিব শ্রমিকরা।’ তিনি বলেন,মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে বিআরটিসি বাস চালুতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু গরিব শ্রমিকদের স্বার্থ চিন্তা করে যেন লোকাল রুটে বিআরটিসি বাস না ছাড়া হয়।’
সিলেট-তামাবিল মিনিবাস মালিক সমিতি’র সভাপতি নুর উদ্দিন বলেন,এটা একটা আঞ্চলিক সড়ক। বিআরটিসি বাস আঞ্চলিক সড়কে চললে স্থানীয় মালিক শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তাই সিলেট-তামাবিল জাফলং সড়কে বিআরটিসি বাস চালু করার চেষ্টা করলে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনে নামব।’
সিলেট-তামাবিল বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মনাফ বলেন,আমরা সিলেট-তামাবিল সড়কে সরকারি ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেই। এ অবস্থায় বিআরটিসি বাস চালু হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হব। আমাদের ভাড়ার রেট যদি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হয়, তবে বিআরটিসি বাস চলতে আমাদের কে,নো আপত্তি নেই।’
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল হক বলেন, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিআরটিসি সিদ্ধান্ত নিবে। এখানে জেলা প্রশাসনের কোনো ভুমিকা নেই।