প্রতিবেশি ৬ মুসলিমকে বাঁচিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন প্রেমকান্ত!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৯:৫১,অপরাহ্ন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৫০৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দিল্লির সাম্প্রদায়িক হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত ও অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছেন।
এই সহিংসতার মধ্যেও হিন্দু ধর্মের অনেকেই অসহায় ব্যক্তিদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
দিল্লির গুরুদোয়ারার দরজা মুসলমানদের জন্য খুলে দেয়া হয়, যাদের নিজ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়। এমন অসংখ্যা লোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী ভারতের রাজধানী দিল্লি।
তেমন একটি ঘটনা, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার প্রতিবেশি ৬ জন মুসলমানের প্রাণ রক্ষা করে, যখন উশৃঙ্খল জনতা তাদের বাড়েতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমন খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টাইমস।
প্রতিবেশির বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখে নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন প্রেমকান্ত বাঘেল নামের হিন্দু। তিনি বলেন, শিব বিহারের হিন্দু-মুসলমানরা সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে। কিন্তু দাঙ্গা ভিন্ন আকার ধারণ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোম নিক্ষেপ করে মুসলমানদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনা জানা মাত্রই বাগেল ঝুঁকি নিয়ে আগুনে আটকে পড়াদের উদ্ধার করে।
প্রেমকান্ত নিজের জীবন বাজি রেখে তার ছয়জন প্রতিবেশির জীবন বাঁচায়। এ সময় বন্ধুর মাকে বাঁচাতে গিয়ে মারাত্বকভাবে আগুনে পুড়ে যান তিনি।
বন্ধুটি বাড়িতে ছিল না, কিন্ত তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য তখনো বাড়ির ভেতরে আটকা পড়ে যায়। এ সময় পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন প্রেমকান্ত। প্রথমে বন্ধুর সন্তান ও তারপর বের করেন বন্ধুর স্ত্রীকে। কিন্ত বন্ধুর মাকে বের করতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন তিনি, প্যারালাইজড ভদ্র মহিলাকে নিয়ে বের হওয়াটা একজনের কাজ নয়। কিন্ত আশেপাশে সাহায্য করার মতো কেউ ছিলনা।
ইতোমধ্যেই প্রেমকান্তের হাত-পায়ের কিছু অংশ পুড়ে গেছে, আগুনের পরিমাণও বাড়ছে। নিজের পিঠের সঙ্গে বৃদ্ধা মহিলাকে বেঁধে বাড়ির বাহিরে আনেন তিনি। ততক্ষণে তার গায়েও আগুন ধরে গেছে, বাড়ি থেকে বেরিয়েই জ্ঞান হারালেন প্রেমকান্ত।
এর মধ্যেই পুরো এলাকায় সাড়া পড়ে গেছে, পানি ঢালা হচ্ছে তার গায়ে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার, কিন্ত কোন যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিলো না। প্রতিবেশিরা এম্বুলেন্সে ফোন করলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় তা আসতে পারেনি ওই এলাকায়।
বাধ্য হয়ে সারা রাত বাসাতেই থাকতে হয়, প্রেমকান্তের দেহের ৭০ ভাগ আগুনে পুড়ে যায়। তার বন্ধু ও পরিবার আশা ছেড়ে দিয়েছিলো। এরপর সকাল হলে তাকে জিটিবি হাসপাতালে নেয়া হয় এবং তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয়।
চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। শরীরের সত্তর শতাংশ পুড়ে গেছে , চিকিৎসকেরা চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছেন না, জ্ঞান আছে প্রেমকান্তের, কথাও বলতে পারছেন তিনি। তবে যে কোন দুঃসংবাদের জন্যে স্বজনদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন চিকিৎসকরা।
তারা আরো জানান, প্রেমকান্ত বারবার খোঁজ নিয়েছেন সেই মুসলমান পরিবারটির, যে মানুষগুলোকে তিনি উদ্ধার করেছেন তারা নিরাপদে আছেন কিনা, সেটা কয়েক বার জানতে চেয়েছেন তিনি।