সৌদির আরামকোয় ড্রোন হামলায় বিশ্বে তেলের দাম বৃদ্ধি!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩২:২৯,অপরাহ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪৯৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অপরিশোধিত তেল শোধনাগার ‘আরামকো কোম্পানি’র দুটি বৃহৎ স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র হুথি বিদ্রোহীরা। মূলত এ ঘটনায় পর থেকে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা গত চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের সরবরাহ প্রায় ৫ শতাংশেরও বেশি হারে কমেছে।
সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘বিবিসি নিউজ’ জানায়, আরামকোর পৃথক স্থাপনায় হামলার পর বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেল প্রতি প্রায় ৭২ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দেশের রিজার্ভ থেকে তেল ছাড়ার অনুমোদন দিলে সে দাম আবারও খানিকটা কমে আসে।
সৌদির সরকারি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর চারটায় আবকাইক ও খুরাইসে তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলার কারণে সৃষ্ট আগুন এরই মধ্যে আরামকোর শিল্প নিরাপত্তা দল নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। যদিও এর জন্য দেশের সার্বিক তেল ও গ্যাস উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে। এখান থেকে পুনরায় তেল উৎপাদনে আসতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে দাবি সৌদি কর্তৃপক্ষের।
বিশ্লেষকদের মতে, আরামকো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদন কোম্পানি। বিশ্বের জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার প্রায় ১০ ভাগ উৎপাদন করে এই প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া সৌদির খুরাইসে বিশ্বের মোট চাহিদার ১ শতাংশ তেল উৎপন্ন হয়, আর আবকাইক তেল শোধনাগার বিশ্বের সরবরাহের প্রায় ৭ শতাংশ তেল জোগান দিয়ে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক। প্রতিদিন তারা প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেলের বেশি জ্বালানি তেল বিদেশে রপ্তানি করে আসছে।
এ দিকে অবশ্যই হামলার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে উল্লেখ করে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘ইরান সমর্থিত সেনাদের চালানো এই হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার সক্ষমতা এবং প্রস্তুতি উভয়ই রিয়াদের আছে। এরপরও নিজেদের সকল নিরাপত্তা ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী সৌদি আরব।’
যদিও এর জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাৎক্ষণিক এমবিএস খ্যাত যুবরাজ সালমানকে বলেছিলেন, ‘ড্রোন হামলার পর সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত। যেকোনো সময় সৌদি চাওয়া মাত্র মার্কিন প্রশাসন তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।’
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সৌদির ইস্টার্ন প্রদেশে অবস্থিত তেল স্থাপনাগুলোতে ইয়েমেনের ড্রোন হামলার পেছনে তেহরানও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব অভিযোগ এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে শিয়াপন্থি সশস্ত্র সংগঠন হুথি বিদ্রোহীরা।
টুইট বার্তায় মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘হাসান রুহানি (ইরানের প্রেসিডেন্ট) ও জারিফ (দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সৌদির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার ভান করছেন। কেন না রিয়াদে এখন পর্যন্ত চালানো প্রায় শতাধিক হামলার পেছনে তেহরান জড়িত। তাছাড়া উত্তেজনা হ্রাসের সকল আহ্বান সত্ত্বেও ইরান এখনো বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহে অভূতপূর্ব আক্রমণ করে যাচ্ছে।’
অপর দিকে ভয়াবহ সেই হামলার পর ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমাদের ওপর গত পাঁচ বছরের আগ্রাসন ও অবরোধের যে জবাব দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বৈধ ও স্বাভাবিক। আগামীতে আরও হামলা হবে।’
সম্প্রতি সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন প্রদেশে হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিরুদ্ধে লড়াইরত হুথি বিদ্রোহীরা। যার অংশ হিসেবে চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে পবিত্র নগরী মক্কা ও জেদ্দায় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। যদিও তখন প্রায় একই সময় সৌদির নাজরান বিমানবন্দরে পরপর তিনবার হামলা চালানোর দাবি করেছিল বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটি।
এর আগে ২০১৪ সালে রাজধানী সানা দখলের পর সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছিল তারা। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।