আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে বিধবার সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫০:২৫,অপরাহ্ন ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৬৬ বার পঠিত
শরীয়তপুর থেকে সংবাদদাতা:: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমান হোসেন দেওয়ানের বিরুদ্ধে এক হতদরিদ্র বিধবার সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী সালেহা বেগম (৬০) কাঁচিকাটা ইউনিয়নের শিবসেন এলাকার বাসিন্দা খাজ মোহম্মদ বেপারীর স্ত্রী। এছাড়া একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুল বাঘ, হাবিবুর রহমান সরদার ও ইদ্রিস খালাসীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির জমিজমা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে এ আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। বর্তমানে এসব ভুক্তভোগীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ও দখলের হুমকি দেয়ায় গত বৃহস্পতিবার ইমান দেওয়ানের বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।
ভুক্তভোগীর পরিবার, জমির দলিল ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, কাঁচিকাটা ইউনিয়নের শিবসেন এলাকার বাসিন্দা খাজ মোহম্মদ বেপারী ৩৪ বছর আগে তার স্ত্রী সালেহা বেগম ও ৭ মাস বয়সী একমাত্র পুত্র ওসমানগনিকে রেখে মারা যায়। এরপর থেকে সালেহা বেগম বিভিন্ন ব্যাক্তির বাড়িতে ও ক্ষেতে খামারে কাজ করে জীবন-যাপন করছিল। এসময় নিজের কষ্টে উপার্জিত টাকা দিয়ে স্থানীয় এক ব্যাক্তির কাছ থেকে কাঁচিকাটা ইউনিয়নের শিবসেন মৌজার ১৮৩নং খতিয়ানের ৬৮৬ ও ৭৪৪ দাগে ৮৫শতাংশ জমি সহ অন্যান্য দাগে আরো কিছু জমি ক্রয় করে। পরবর্তীতে ২৫ বছর পর্যন্ত এসব জমিতে চাষাবাদ করেই জীবন চলছিল সালেহা বেগমের। কিন্তু ৭ বছর আগে কাঁচিকাটা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমান হোসেন দেওয়ান জোরপূর্বক সালেহা বেগমের ঐ ৮৫শতাংশ জমি দখল করে নেয়। বর্তমানে তিনি ঐ বিধবার ভিটেবাড়ি দখল ও পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে সালেহা বেগম।
চোখের পানি মুছতে মুছতে সালেহা বেগম বলেন, বাবা, আমি বহু কষ্ট করে এটুকু জমি কিনেছিলাম। ৭ বছর আগে ইমান দেওয়ান আমার ৮৫শতাংশ জমি দখল করেছে। এখন আমি যে বাড়িটুকুতে থাকি সেটুকুও দখলের চেষ্ট করছে। বাড়ি ছেড়ে না গেলে আমার সবকিছু পুড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। আমার একমাত্র ছেলে তাদের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেনা। বাবা, আমি যদি কাগজপত্রে জমি পাই তাহলেই আমি জমি নেবো, এছাড়া আমার দরকার নাই। আমারে আপনারা বাঁচান।
সালেহা বেগমের ছেলে ওসমানগনি মিয়া বলেন, ইমান দেওয়ান লোকজন নিয়ে এসে আমাদেরকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরাও আওয়ামীলীগ করি কিন্তু আমাদের আওয়ামীলীগ তার কাছে চলেনা। প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের এলাকার উপমন্ত্রীর কাছে দাবি, কাগজপত্র দেখে আমাদের জমি যেন বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এ জমির রেকর্ড পর্চা, দলিল সব আমাদের নামে।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল বাঘ ও ইদ্রিস খালাসী বলেন, শুধু সালেহা বেগমই নয়। আমাদের ৪ পরিবারের মোট ৪ একর ৯০শতাংশ জমি ইমান দেওয়ান দখল করে নিয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করছে, কিন্তু ক্ষমতাশালী হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারিনা। উল্টো আমাদেরই হুমকি দেয়। বিষয়টি অনেকের কাছে জানিয়েছি কিন্তু কোন সমাধান পাচ্ছিনা। এখানে ফসল ভাল হয় তাই তিনি লোভ সামলাতে পারেননা।
ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান সরদার বলেন, ইমান দেওয়ানের দখল দারিত্ব বেড়ে যাওয়ায় আমরা বলেছিলাম আমাদের এলাকার উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের কাছে বিচার দিবো। কিন্তু ইমান দেওয়ান বলেন, সে নাকি শেখ হাসিনাকেই ভয় পায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল সরদার ও ইকবাল হোসেন বলেন, এ এলাকার হতদরিদ্র লোকজনের উপর ইমান দেওয়ান জোর-জুলুম করছে। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। কোন রকম দলিল-প্রমান ছাড়াই জমি-জমা দখল করছে। আমাদের দাবি, তার দখলদারিত্বের বিষয়ে যেনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কিন্তু ইমাম হোসেন দেওয়ান এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। পরে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনাদের যা খুশি মনে চায় লিখে দেন। লিখে দেন, আমি জোর করে জমি খাই। জমি নিয়ে সাংবাদিকদের কাজ কি!! এ এলাকার পুলিশ, সাংবাদিক সবাই আমার পক্ষে। কিন্তু আপনারা আসছেন নতুন। আপনারা যা পারেন করেন, যা ইচ্ছা লেখেন। আমার কিচ্ছু হবেনা। আমার কাছে সকল কাগজপত্র আছে।
এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারবো।