কাশ্মীরে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪০:২০,অপরাহ্ন ০৭ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৭৭৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বিশ্ববাসীর সব মনোযোগ এখন কাশ্মীরের দিকে। কি ঘটছে, কি হচ্ছে, সেখানকার মানুষের প্রতিক্রিয়া কি, সেদিকেই বিশ্বের চোখ। কিন্তু ইন্টারনেট, মোবাইলসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকায় কিছুই জানা যাচ্ছে না। তবে দু-দিন নীরবতায় তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়া সংশয় যেন বৃদ্ধিই পেয়েছিলো। অবশেষে কাশ্মীরের শ্রীনগরে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
বুধবার (৭ আগস্ট) ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই শ্রীনগরের রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করেন কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকরা। সেই বিক্ষোভকে ঘিরেই সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে ইতোমধ্যে। গুলিবিদ্ধ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেকে, আটকও হয়েছেন শতাধিক।
এটা তো শুধু শ্রীনগরের চিত্র, কাশ্মীর উপত্যকার বাকি অংশের ছবিটা ঠিক কেমন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সেখানে এখনো বন্ধ ল্যান্ডলাইন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, কেবল পরিষেবাসহ যোগাযোগের যাবতীয় মাধ্যম। সেগুলো চালু হলে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যে আরও বাড়বে, এমন আশঙ্কাই দানা বেঁধেছে ভারতের পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঙ্গলবারের কেন্দ্রকে পাঠানো রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদকে স্বাগত জানিয়েছেন কাশ্মীরবাসী। তখনই অনেকে আঁচ করেছিলেন, এই শান্তি চিরস্থায়ী না-ও হতে পারে। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সেদিনই দফায় দফায় বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে শ্রীনগরে। পুলিশ-সেনা জওয়ানদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে একাধিক দলের।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। তার মধ্যেই একজনকে তাড়া করে পুলিশ। সেই তাড়া খেয়েই নদীতে ঝাঁপ দেয় এক যুবক, পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই সংঘর্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ৬ জনের দেহে গুলির ক্ষত রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে।
এখন পর্যন্ত অন্তত শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন বলে ভারতের পুলিশ সূত্রে জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা এই গ্রেফতারির খবর স্বীকারও করে নিয়েছেন। তবে, ধৃতদের মধ্যে হেভিওয়েট কোনো রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী আছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি ওই পুলিশকর্তা।
অন্য দিকে প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়সল কাশ্মীরের সামগ্রিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখছেন, ‘শ্রীনগরে জিরো ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর, সব জায়গায় কার্যত কারফিউ। রোগী এবং পাসধারী ছাড়া কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে নিরাপত্তার ভার তুলে নিয়েছে সেনা। শ্রীনগরের বাইরে অন্য জেলাগুলোতে ১৪৪ ধারা আরও কঠোর। রাজ্যের ৮০ লক্ষ মানুষ এই রকম পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেনি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্যাটেলাইট ফোন ছাড়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। কেবল পরিষেবা বন্ধ থাকলেও ডিরেক্ট টু হোম (ডিটুএইচ) যাদের রয়েছে, তারা টিভি দেখতে পারছেন। তবে, অধিকাংশেরই এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই, ঠিক কী হয়েছে। জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শ্রীনগরের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও রামবাগ, নতিপোরা, ডাউনটাউন, কুলগাম, অনন্তনাগের মতো জায়গায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ-পাথর ছোড়ার মতো ঘটনার খবর এসেছে।’
উপত্যকার সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও কোনো না কোনোভাবে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতো তুলে ধরতে পারছেন। যেমন এর আগে ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিও এই যোগাযোগহীন অবস্থায় টুইট করেছেন। তেমনভাবেই ফেসবুকে লিখেছেন ফয়সলও।
সব মিলিয়ে এখনো থমথমে ভারত শাসিত গোটা কাশ্মীর উপত্যকা। মোদী-শাহের বিজেপি সরকার নিরপত্তার চাদরে মুড়ে কার্যত দুর্ভেদ্য দুর্গ করে তুলেছে কাশ্মীরে । এই পরিস্থিতি আরও কত দিন চলবে এবং কবে স্বাবাভিক পরিষেবা চালু হবে, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কাশ্মীরবাসী। অন্য দিকে জরুরী অবস্থা তোলার পর কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এবং সেই অনুযায়ী প্রতিরোধের নীল নকশাও তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। অন্য দিকে বুধবারই জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নামও ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।