আলোচিত মামলার তদন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন টিআইবি!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৫:০৫,অপরাহ্ন ২৭ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ২৮০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বরগুনার রিফাত হত্যা, ফেনীর নুসরাত হত্যা, ও কক্সবাজারের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ধর্ষণের মতো ব্যাপক আলোচিত মামলায় স্থানীয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা, বিশেষ করে হেফাজতে বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনসহ অপরাধের শিকার ব্যক্তি, যারা মামলার মূল স্বাক্ষী, তাদের ও পরিবারের সুরক্ষার পরিবর্তে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির ধারাবাহিক অভিযোগে গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
প্রভাবশালী মহলের সাথে যোগসাজসে জোর করে বরগুনায় নিহতের স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে মিন্নির বাবা ও তার আইনজীবীর অভিযোগে স্থানীয় পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করে টিআইবি।
ইতিপূর্বে ফেনীর নুসরাত হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালীদের সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একাংশের সম্পৃক্ততা ও নুসরাতকে অযাচিত হয়রানি, এবং সম্প্রতি কক্সবাজার ‘মডেল পুলিশ স্টেশন’ এ ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর তিনদিনব্যাপী হেফাজতে নির্যাতনের মাধ্যমে বানোয়াট জবানবন্দী সংগ্রহের মতো অভিযোগ দেশের আইনের শাসনের জন্য অশনিসংকেত মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, আলোচিত এ অপরাধের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মী কর্তৃক আইনের লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক ও শুদ্ধাচার পরিপন্থী আচরণের মাধ্যমে একদিকে অপরাধী বা তাদের দোসরদের সাথে যোগসাজসমূলক সুরক্ষা ও অন্যদিকে যারা অপরাধের শিকার তাদের নিরাপত্তা বিধানের পরিবর্তে হেফাজতে বিভিন্ন প্রকার হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যমে স্বাক্ষী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যে নিরাপত্তাহীনতার চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে তাকে বিচ্ছন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ঢালাওভাবে অস্বীকার করার যেমন অবকাশ নেই, তেমনি ‘বিভাগীয় পদক্ষেপের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সময়ওফুরিয়ে গেছে। সংবিধান স্বীকৃত ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন, যা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত, যার অবস্থান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তা ধুলিস্যাৎ হবার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে যদি এ ধরণের অভিযোগ উপেক্ষা করা হয়, যদি এ ধরণের অপরাধের প্রতিকার না হয়।”
প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্তের ওপর অপরাধের শিকার ব্যক্তি বা পরিবার ও আইনজীবি তথা সাধারণ মানুষের যে আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং সর্বজনবিদিত উল্লেখ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়, কিন্তু পুলিশের পেশাগত উৎকর্ষের সুনাম ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, বন্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এ জন্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব পালনকারী এ সংস্থাকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের আলোকে ঢেলে সাজাবার লক্ষ্যে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের বিচার বিভাগীয় তদন্ত অপরিহার্য।”
ড. জামান আরো বলেন, “গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত ও আলোচিত শিশু ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের ওপর সহিংসতার সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত অপরাধের ঘটনায় সমাজের সকল স্তরের আতংকিত মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য ব্যাকুল। তেমনি এ ধরণের অপরাধের সাথে পুলিশের একাংশের কথিত যোগসাজস বা হেফাজতে নির্যাতনের মত আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযোগ্য আইনি প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী এই সংস্থার প্রতি জনগণের আস্থা অর্জনের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রণয়ন-এখন অন্যতম রাষ্ট্রীয় প্রাধান্য।”