বিদ্যুতের তেলেসমাতি: জানতে চাইলেই ৩৩ কেভির অজুহাত
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৮:৪৩,অপরাহ্ন ০২ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৭১৯ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: ঝড় নেই, তুফান নেই, সাথে বিদ্যুৎও নেই ঘন্টার পর ঘন্টা। এমন চিত্র সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায়। ঝড় বৃষ্টি ছাড়াও প্রচন্ড তাপদাহে সে বিদ্যুত কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘন্টা, অনেক সময় ৪/৫ ঘন্টা পর আসে। রাতে এ সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যুৎ মিলে প্রায়ই পরদিন সকালে। আর এ বিষয়ে জানতে চাইলেই ৩৩ কেভি মেরামত বা গ্রীড লাইনে কাজের অজুহাত তুলে ধরেন কর্তৃপক্ষ। তীব্র গরমে বিদ্যুতের এমন তেলেসমাতিতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
এটা কি ‘সিস্টেম লস্ট, লোডশেডিং না বিদ্যুৎ বিভ্রাট’ এ বিষয়টি সম্পর্কেও অন্ধকারে গ্রাহকরা। গরমে নাভিশ্বাস সিলেটের মানুষ। এ অবস্থা সিলেটের সর্বত্র। লক্ষ্য করা গেছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে চরম হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়। ঘন ঘন ঘটছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজী। এতে করে বিনষ্ট হচ্ছে মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীও।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমের প্রথম ঝড়েই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ঝড়ে বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছের ডাল পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সংযোগ। ফলে প্রতিদিন দীর্ঘসময় পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে সিলেট নগরবাসীকে। বিভিন্ন উপজেলার চিত্র এর চেয়ে ভয়াবহ বলে জানা গেছে। আর এ বিষয়ে যোগাযোগ করলেই স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ৩৩ হাজার কেভি লাইনে ত্রæটি ও চাহিদার চেয়ে বিতরণ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ কম পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়িত।
দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক অবস্থায় আছে সিলেটের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা। ফলে চাহিদার প্রায় তিনগুণ উৎপাদন হলেও নিয়মিত বিদ্যুৎবিভ্রাটের শিকার হতে হয় সিলেটবাসীকে। ঝড়বৃষ্টির মৌসুমে তা অসহনীয় আকার ধারণ করে। হালকা ঝড়েই লাইন ছিঁড়ে খুঁটি উপড়ে পড়ে কিংবা ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে বিশাল এলাকা। আর গরমে থাকে লম্বা লোডশেডিং। এ লোডশেডিং সিলেট শহরের তুলনায় গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণসুরমা, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট উপজেলায় বেশি।
বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থার এই নাজুক অবস্থা দূরীকরণে সিলেটে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। তবে চলতি বছরে এর সুফল সিলেটবাসী কতোটা ভোগ করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অবস্থা আরো নাজুক বলে জানা গেছে। রাতের বেলাতো বেশিরভাগ বিদ্যুৎ নাই বললেই চলে আর অসহ্য গরমে দিনের বেলা ঘন্টার পর ঘন্টা চলে লোডশেডিং। কোন কোন এলাকায় রাতে যেমন দিনেও তেমন তেলেসমাতি চলে। তারমধ্যে একটু ঝড় তুফান বা বৃষ্টির আবাস দেখলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। এনিয়ে গ্রাহকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সিলেটের অনেক উপজেলায় বিদ্যুতের জন্য রাস্তায় আন্দোলনেও নেমেছেন গ্রাহকরা।
গ্রাহকরা অভিযোগ করেন দিনের বেলা ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলে কিছুটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু রাতের বেলা ঝিলিক মেরেই চলে যায়। কোন কোনদিনতো এমন হয় সারারাত থাকতে হয় বিদ্যুৎহীন। এবিষয়ে স্থানীয় জোনাল অফিস বা অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করলেই ৩৩ হাজার কেভি লাইনে সমস্যার অজুহাত দেখান কর্মকর্তারা এমন অভিযোগও গ্রাহকদের।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। অনেকে গ্রাহকদের আন্দোলনে নামার কথাও জানিয়েছেন।
গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী রাজু আহমদ বলেন, দিনে রাতে কত বার বিদ্যুৎ যায় তার হিসাব জানা নেই। তবে ২৪ ঘন্টায় ঠিকমত দুই ঘন্টাও বিদ্যুৎ সুবিধা পাইনা আমরা, কিন্তু মাস শেষে রিডিং থাকে অনেক বেশি, বিলও বেশি। আমরা শুধু পরিশোধ করি।
জকিগঞ্জ উপজেলার জাবির আহমদ জানান, সিলেট শহর থেকে আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি। কিন্তু বিদ্যুৎ যন্ত্রনায় আমরা অতিষ্ট। তিনি বলেন, ‘শুনলাম, সরকার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে, তাহলে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা কেন যে ঘটছে, তা বুঝতে পারছি না।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর মীরগঞ্জের বাসিন্দা আলহাজ্ব নুরুল আম্বিয়া জানান, বিদ্যুৎ নিয়ে আমরা বড় সমস্যায় আছি। আমাদের প্রতি কারো খেয়াল নেই। অফিসেও যোগাযোগ করে কোন সুরাহা মিলেনা। বললেই জানানো হয় অপেক্ষা করেন সময় হলেই পাবেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বহুগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও কেন বিদ্যুতের এতো বিশাল তামাশা। হয়তঃ কর্তৃপক্ষ সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এইসব তামাশা শুরু করেছে। তাদের এই তামাশা বন্ধ করা খুবই জরুরি।
এ বিষয়ে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজারের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।