একই পরিবারের কাছে ব্যাংকের পাওনা ২০০ কোটি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৮:১১,অপরাহ্ন ২০ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৬৫৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বগুড়ায় ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না একটি পরিবার। অর্থঋণ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে একাধিক। আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও অল্প সময়ে জামিনে বেরিয়ে এসে রিট করেছে উচ্চ আদালতে।
একই পরিবারের দুই ভাই ও তাদের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে রায় পেলেও ব্যাংকগুলো টাকা আদায় করতে পারেনি। এসব মামলায় শত কোটি টাকার বেশি জরিমানার আদেশও বাস্তবায়ন হয়নি।
বগুড়ায় আটা ময়দা সুজির ব্যবসা ছিল পরিবারটির। রিমা ফ্লাউয়ার মিল এবং মাহিন আটা ময়দা সুজি নামে ব্যবসা ছিল তাদের। ব্যবসা বড় করতে ব্যাংক ঋণ নিলেও এখন ব্যবসা উল্টো অনেক সংকুচিত হয়েছে। বগুড়ায় ইন্টারনেট লাইন দেওয়ার ব্যবসাও তাদের ছিল।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বড় ভাই জহুরুল হক মোমিন ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখা, প্রাইম ব্যাংক, এসআইবিএল ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক থেকে দেড়শ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে অর্থঋণ আদালতে আটটি মামলা হয়। মামলাগুলোর রায় ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দেয়া হয়। প্রতিটি মামলায় এক বছর করে কারাদ- এবং জরিমানা হয়। আটটি মামলায় মোট জরিমানা হয় ১৫৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
২০১৩ সালের ৪ জুলাই জেলে যান মোমিন। সাড়ে চার বছর কারাবাস করেন। ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে মুচলেকা দিয়ে জামিনে ছাড়া পান। তখন আদালতকে তিনি ওই বছরেই ঋণের টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু টাকা দেননি।
এ বিষয়ে জহুরুল হক মোমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
২০১২ সাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েও প্রকাশ্যে ছিলেন মোমিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার ঝুনুও। ২০১৮ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে তিনিও বগুড়ার জলেশ্বরীতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তবে ছয় ঘণ্টা পরেই মুক্তি পান জামিনে।
মোমিনের আপন ভাই এনামুল হক বাবু এবং বাবুর স্ত্রী আইরিন হক রুমার বিরুদ্ধেও ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এনামুল হক বাবুর স্ত্রী আইরিন হক রুমার কাছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখার পাওনা ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
একই শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৪১ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও আছে এদের বিরুদ্ধে। দুদক এই অভিযোগে মামলা করেছে। এতে বলা হয়, জহুরুল হক মোমিনের ৯ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার এবং তার আপন ভাই এনামুল হক বাবু ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫ হাজার আত্মসাৎ করেছেন। ওই মামলায় দুই ভাই বর্তমানে আসামি।
ইসলামী ব্যাংকের করা মামলায় বলা হয়, শিরিন আখতার ঝুনু তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শিরিন ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানির নামে নানা সময় ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের ২ আগস্ট বগুড়া জেলা অর্থঋণ আদালতে মামলা হয়। ২০১২ সালের ১৬ জুলাই আদালত চার কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৬ টাকা পরিশোধের আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার বিনিয়োগ বিভাগের প্রধান তৌহিদ রেজা জানান, জহুরুল হক মোমিনের মাহিন ফুডের কাছে তাদের মোট পাওয়া না ৩১ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৯০ টাকা। মামলার রায় হলেও তা কার্যকর হয়নি।
‘পরে আমরা সার্টিফিকেট শাখায় মামলা করেছি। তখন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তখন তিনি আদালতে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে মুচলেকা দিয়েছিলেন যে, বাকি টাকা ওই বছরের মধ্যেই পরিশোধ করবেন। কিন্তু আদালতের কাছে দেওয়া ওয়াদা এখন পর্যন্ত রক্ষা করেননি। উল্টো এখন হাইকোর্টে রিট করে সময়ক্ষেপণ করছেন।’
‘আদালত যতবারেই ব্যাংকের পক্ষে রায় দেয় ততবার তিনি রিট করেন। এ করে ১০ বছর পার করে দিয়েছেন তিনি। মোমিনের করা সবশেষ আপিলও খারিজ করে দিয়েছে আদালত।’
‘মোমিনের স্ত্রী শিরিন আখতার ঝুনুর কাছেও ব্যাংক পায় এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে ১১ জুন তিনি গ্রেপ্তার হন। তিনিও আদালতে মিথ্যা বলে জামিন নিয়েছেন। অর্ধেক টাকা পরিশোধের কথা বললেও এখনো কোনো টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করেননি।’
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মাসুদুর রহমান জানান, মোমিনের কাছে ব্যাংক ৯ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার এবং তার আপন ভাই নিলয় এন্টারপ্রাইজের মালিক এনামুল হক বাবু ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫ হাজার টাকা জালিয়াতি করে তুলেছেন। ব্যাংক তাদের কাছে আরও প্রায় ১৬ কোটি টাকা পাবে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ব্যাংকে ওই টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখাপ্রধান আশরাফুল আলম জানান, ‘মোমিন এবং শিরিনকে ব্যাংক থেকে বহুবার ঋণ পরিশোধের জন্য বলা হলেও তারা কোনোভাবেই টাকা ফেরত দেয়নি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক মামলা করতে বাধ্য হয়েছে। মামলায় ব্যাংকের পক্ষে আদালত রায় দিলেও সেই রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন তিনি।’