বাংলাদেশের স্টক মার্কেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৪:০৫,অপরাহ্ন ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৩৮০০ বার পঠিত
।। আনোয়ার আলমগীর ।।
বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভের প্রায় পনের বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৬ সালের 16 ই সেপ্টেম্বর তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নামে শেয়ার মার্কেট চালু হয়। খুব ছোট পরিসরে এই মার্কেট আস্তে আস্তে এগোতে থাকে।
তৎকালীন সময়ে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শিক্ষা ব্যবস্থা, সচেতনতা ও আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি থাকায় স্টক মার্কেট বলতে মুষ্টিমেয় সামান্য কিছু লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। 90 দশকের পর আস্তে আস্তে আমাদের এই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের স্টক মার্কেট মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছাতে থাকে এবং একটি সুন্দর সমৃদ্ধশীল মার্কেটে পরিণত হতে থাকে।
কিন্তু তখনও এদেশের কিছু কালপিট চক্রটি ছিল সক্রিয়। এই চক্রটি তাদের মূল টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় আমাদের স্টক মার্কেটকে। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক 1000 হতে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে একই বছরের 16 ই নভেম্বর তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক 3687 পৌঁছে যায়। দেশের আনাচে-কানাচে তথা গ্রাম অঞ্চলে এমনকি একজন সাধারণ কৃষক পরিবারেও স্টক মার্কেট সহজে টাকা রোজগারের উপায় হিসেবে তাদের কানে পৌঁছে যায়। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ছাত্রসমাজ সাধারণ চাকুরে সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে। দুষ্টচক্রটি তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সমর্থ হয়। তখন এই অবুঝ মানুষ গুলোর মাথায় ছিলনা যে একটু শেয়ারের দাম যেমন বাড়তে পারে তা কমতেও পারে। তখন অবুজ বিনিয়োগকারী সকলের ধারণা ছিল শেয়ারের দাম প্রতিদিনই বাড়বে।
তৎকালীন সময়ের ট্রেডিং ডাটা থেকে দেখা যায় যে ওই সময় পুঁজিবাজার 265 শতাংশ বেড়েছে এবং এবং দৈনিক লেনদেন বেড়েছে প্রায় 1000% যা পৃথিবীর ইতিহাসে অকল্পনীয়। এর পরিসমাপ্তি হয়েছে চোখের জলে। ১৯৯৭ সালের ১৬ ই নভেম্বরএরৎমধ্যে অগণিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের জীবনের অর্জিত পেনশনের সমস্ত টাকা, কৃষকের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা চোখের পলকেই নিঃশেষ হয়েছে । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অগণিত বিনিয়োগকারীর মৃত্যু ঘটেছিল আত্মহত্যার মাধ্যমে।
না জেনে না বুঝে বিনিয়োগ করে ধ্বংস হওয়া বিনিয়োগকারীদের বিচার হয়েছিল প্রতারণার জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় বিশ্বের একটি দ্রুত উন্নয়নশীল বা ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার পরেও বলা যাবে না স্টক মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীগণ ন্যায় বিচার পাবে বা ভবিষ্যতে বিচার হবে।
একটি শক্তিশালী আইনি সুরক্ষা বিনিয়োগকারীদের প্রকাশ এর উপর কাজ করতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। একটি ভালো উন্নত আইনি কাঠামো আর্থিক মার্কেটে তারল্য বৃদ্ধি করে।যা আমরা ইতিমধ্যে উপলব্ধি করতে পারছি পুরাতন চেয়ারম্যান সাহেব পরিবর্তন হয়ে নতুন চেয়ারম্যান শিবলী সাহেব দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই আস্তে আস্তে মার্কেটের উপর এর প্রতিফলন বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আমি মনে করি একটি উন্নতশীল এবং স্থিতিশীল স্টক মার্কেট অর্জন করতে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে লোভী অসাধু দুষ্ট কুচক্রী মহলকে পেছনে ফেলতে হবে। ভেঙে দিতে হবে তাদের কালো থাবার প্রসারিত হাত। ১৯৯৬ এবং তৎপরবর্তী ২০১০ সালের স্টক মারকেট কারসাজি এখনো দেশের সর্বমহলে ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি কালো অধ্যায়।
বাজার কারসাজির জন্য ১৯৯৬ সালে ন্যায় বিচার না হওয়ার কারণে পুনরায় কুচক্রী মহলটি নতুন ও বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে মার্কেটকে আবার ২০১০ ও ২০১৯ সালে ধ্বংস করে। এখনই উপযুক্ত সময় তাদের মূল উৎপাটন করে সমূলে ধ্বংস করার নয়তো পরস্পরায় আবারো বিনিয়োগকারীদেরকে পথে বসিয়ে দিবে।