গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারবাসীর ‘স্বপ্ন’ পূরণ হচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৮:০৯,অপরাহ্ন ২৫ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৩০৫৪ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: ‘আমরার রাস্তা (সিলেট-গোলাপগঞ্জ-চারখাই) বড় অর হুনিয়া খুব খুশি অইছি, ই রাস্তা ইকান অতো বিজি, ইবায়দিয়া ইন্ডিয়াতও বড় বড় গাড়ি যায়-আয়, ই রাস্তাত কতো মানসর জীবণ গেছে, কত ইস্কুলর ছাত্র-ছাত্রীও মরছইন। আরো আগে ইকান বড় অইতো আছিল। যাই অউক দেরি খরি অইলেও বড় অর হুনিয়া মনো শান্তি পাইরাম। ই কাম কান যেন তাড়াতাড়ি শেষ অয়, সরকারর কাছে আমরা বিদেশী হখলে আবদার করিয়ার। আমরা বিদেশ থাকি আইলে যেন বড় রাস্তাবায় বাড়ি যাইতাম পারি। রাস্তা বড় অইতে যেতা মানসর ঘর-বাড়ি, দোকান-পাঠ ও জমি পড়বো ইতা মানসরে ন্যায্যমূল্য দিয়া নেউক্কা। আর যারার জাগা পড়বো তাইনতাইন যেন দেশর সুন্দরর লাগি ছাড়িয়া দেইন’।
সিলেট-গোলাপগঞ্জ-চারখাই-শেওলা সড়ক ৬ লেনে উন্নিত হওয়ার খবর শুনে নিজের মনের আনন্দ এবং প্রত্যাশা এমনভাবেই প্রকাশ করলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বরের বাসিন্দা ছামিউর রহমান। শুধু ছামিউর রহমান নয় এমন আনন্দন ও প্রত্যাশা প্রবাসীসহ গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের সকল মানুষের।
গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারসহ পূর্ব সিলেটের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সিলেট- গোলাপগঞ্জ-চারখাই-শেওলা-বিয়ানী
দেশের অন্যতম ব্যস্ত এ সড়ক প্রশস্তের জন্য এতদাঞ্চলের মানুষের দাবীও দীর্ঘদিনের। প্রতিদিন যানবাহন চলাচলের তুলনায় সড়কটি ছোট হওয়ায় দূর্ঘটনায় সড়কে প্রাণ গেছে অনেকের। দূর্ঘটনা থেকে রেহাই পায়নি শিশু ও শিক্ষার্থীরা। দূর্ঘটনা রোধে সড়ক প্রশস্ত নিয়ে বহু আন্দোলনও করেছেন স্থানীয়রা। অবশেষে এ সড়ককে ৬ লেন করে এশিয়ান হাইওয়ে উন্নিত করা হচ্ছে। ফলে শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়া প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারসহ পূর্ব সিলেটে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে প্রস্তাবিত ৬ লেন।
এশিয়ান হাইওয়ে সবেচেয়ে বেশি সুফল নিয়ে আসতে পারে সিলেটের শিল্পায়নে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সিলেটে গড়ে ওঠতে পারে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। বিশেষ করে সিলেটে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক এবং প্রস্তাবিত সিলেট ইকোনোমিক জোন ও শ্রীহট্ট ইকোনোমিক জোন বাস্তবায়িত হলে সেখানে দেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান। এশিয়ান হাইওয়ে ব্যবহার করে এসব ইকোনোমিক জোনে উৎপাদিত পণ্য সহজেই সার্কভূক্ত দেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। এতে রফতানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হবে।
জানা গেছে, ৬ লেনের এ এশিয়ান হাইওয়েটি সিলেট নগরীর ক্বীনব্রিজ হয়ে গোলাপগঞ্জ-চারখাই-শেওলা- বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রশস্তের কথা রয়েছে। ক্বীনব্রীজ থেকে এশিয়ান হাইওয়ে চন্ডিপুল হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত যাবে- এমন নকশা প্রণয়ন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। গত মার্চ মাস থেকে এই সড়কটির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং টেকনিক্যাল ও সোস্যাল স্ট্যাডি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথের (সওজ) একটি দল সিলেট থেকে শেওলা পর্যন্ত বর্তমান আঞ্চলিক সড়কটি মাপঝোঁক সম্পন্ন করেছে।
তবে শেষ পর্যন্ত সড়কের ম্যাপে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। শহরের যানজট কমাতে সড়কটি ক্বীনব্রিজ পর্যন্ত না এসে হয়তো দক্ষিণ সুরমার শ্রীরামপুর থেকে পারাইরচক বাইপাস হয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সাথে যুক্ত হতে পারে। এ হাইওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ কিলোমিটার হতে পারে বলেও সওজ সূত্র জানিয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া জানান, বিশাল এ প্রকল্পটি এশিয়ান হাইওয়ের প্রকল্প সওজ ঢাকা অফিস থেকে তদারকি করা হচ্ছে। হাইওয়েটি বাস্তবায়ন করতে হলে কি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা লাগবে, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকের সংখ্যা, স্থাপনার সংখ্যা এসব বিষয়ে জরিপ চলছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার অঞ্চল এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এখানকার অর্থনীতি ও সড়ক যোগাযোগে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এ অঞ্চল রূপান্তর হতে পারে শিল্পাঞ্চলে।
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখানে গড়ে ওঠতে পারে শিল্প কারখানা। সৃষ্টি হবে দেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগের। ফলে তৈরি হবে বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান- এমনটাই মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
এছাড়াও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ককে ৬ লেনে (২টি সার্ভিসলেন-সহ) উন্নীত করে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করতে ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাস্তবায়নের লক্ষে গত বছরের শেষের দিকে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাশ হয়।
শিল্প ও বাণিজ্য গতিশীল করতে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক জোরদারের লক্ষ্যে ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প’ হিসেবে এটি হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে নরসিংদীর কাঁচপুর থেকে সিলেটের শেরপুর হয়ে তামাবিল দিয়ে এই সড়কটি যুক্ত হবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে।
অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারেও জরিপ কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রম শেষ হলে হাইওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তবে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সিলেট-তামাবিল ও সিলেট-সুতারকান্দি সড়ক যুক্ত করার আগে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনের কাজ শেষ করতে হবে।
এদিকে, এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সড়ক দুটি যুক্ত হলে সিলেটের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হলে সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন তারা। এছাড়াও চীন, ভুটান, নেপাল, মায়ানমারের সাথেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।