প্রতারক বাবলু ভুয়া ডাক্তার, শত শত মানুষের ভোগান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪১:৪৮,অপরাহ্ন ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | সংবাদটি ১০৮ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বর্তমানে ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যাঁরা প্রকৃত অর্থে চিকিৎসক নন, তাঁরা মিথ্যা পরিচয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। ভুয়া চিকিৎসকদের কার্যক্রম শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই সক্রিয়। তবে গ্রামীণ এলাকায় তাঁদের প্রভাব তুলনামূলক বেশি। আর এই প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসার আশায় ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন।
মো. লুৎফর রহমান (ডা. বাবলু) নামের তেমনই এক ভুয়া চিকিৎসকের সন্ধান মিলেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। নামের আগে ডা. ব্যবহার করে চিকিৎসার নামে প্রতারণা, সরকারি চাকুরিতে দুর্নীতি, তদবীর বানিজ্য, জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনেছেন তিনি।
উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের ভেংড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ এর ছেলে ও উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার লুৎফর রহমান (বাবলু)। কোনো ডাক্তারি ডিগ্রি না থাকলেও এখন নামের আগে পদবী লাগান ডাক্তার বাবলু। নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতে ব্যানার ফেস্টুন ও বিল বোর্ডও করেছেন নিজ উপজেলায়। কখনও গ্রাম্য ডাক্তার, কখনও এনেস্থেসিয়া আবার কখনো সিজারিয়ান। এমনকি নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
সরেজমিনে জানাযায়, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাবেক এমপি তানভীর ইমাম ও তার এপিএস মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জলের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি পদ বাগিয়ে নেয়ার পর হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।সরকারি চাকরিরত অবস্থায় দুর্নীতির মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্যামলীপাড়ায় নিজ অর্থায়নে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবনের ‘‘কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’’। নিজ প্রতিষ্ঠানের একাধিক নার্সদের সাথেও অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এছাড়াও দুই স্ত্রী, সন্তান, মা ও ভাই-বোনের নামে করেছেন বিপুল পরিমান সম্পদ। গত কয়েক বছরে সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। তার অনুসারীদের নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। জামায়াত-বিএনপির কর্মীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি। তার অবাধ্য হলেই পুলিশে ধরিয়ে দিতেন।
কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কনক চাঁপা নামের এক নার্স জানান, ‘আমি কোন অবৈধ সম্পর্ক করিনি, তিনি আমাকে ভালোবেসে ধর্ম মতে আইনগতভাবে বিয়ে করেছেন। আমরা বৈধ স্বামী স্ত্রী।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেয়ার হাসপাতাল থেকে সদ্য চাকরিচ্যুত এক নার্স জানান, ‘এখানে চাকরি করতে হলে স্যারকে সন্তুষ্ট করতে হয় এই কথা আমি শুনেছি তবে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু ডা. লুৎফর স্যার আমাকে তার চেম্বারে ডেকে নিয় কুপ্রস্তাব দেয়, তাতে আমি রাজি না হওয়ায় আমার চাকরি চলে যায়।’
ভেংড়ী গ্রামের সনেট নামের এক যুবক বলেন, ‘বাবলু ডাক্তার আমাদের বসতভিটা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পেশী শক্তি ও মামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। সে একজন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমি তার বিচার চাই।’
এলাকার রফিক শেখ ও ইয়াছিন আলী জানান, ‘আমরা জানি সে ডাক্তার। কেমন ডাক্তার, কিসের ডাক্তার আমাদের সেটা জানা নাই। শুনেছি সিজার করে, অপারেশন করে। শ্যামলীপাড়ায় তার নিজস্ব একটি বিশাল হাসপাতাল আছে। এলাকায় অনেক জায়গা জমিও কিনেছেন।’
উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কখনই নামের আগে ডাঃ লিখতে পারবেনা। যদি কেউ লেখে তাহলে সেটার দায়ভার একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের লুৎফর রহমান (ডা. বাবলু) তার নিজস্ব প্রাইভেট হাসপাতালে শিফট করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা জানান, ‘আমি শুনেছি ডিউটি শেষে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে পার্টটাইম কাজ করেন তিনি। রোগী শিফটের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখবো।’
কিন্তু কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি এবং অত্র হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন কর্মচারী ও কর্মকর্তার ফেসবুক আইডিতে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির বর্ষপূর্তির গ্রুপ ছবি, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত স্বয়ং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. আতাউল গনি ওসমানী!
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নুরুল আমীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’