প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেল সিলেটের গ্রীনি
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:০১:০৮,অপরাহ্ন ২৭ এপ্রিল ২০২২ | সংবাদটি ২০৮২ বার পঠিত
সিগমা আলমগীর গ্রীনি প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ডের জন্য চুড়ান্ত ভাবে বাংলাদেশ স্কাউটস কর্তৃক মনোনীত হয়েছে। সে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের (ইংলিশ ভার্শন) দশম শ্রেনীর ছাত্রী এবং স্কাউট দলের সদস্য। ইতিমধ্যে স্কাউটিং এ ভারত ও অষ্ট্রেলিয়া জাম্বুরীতে অংশ গ্রহণ করেছে। এ বছর পর্তুগাল জাম্বুরী ও আগামী বছর বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরী কোরিয়াতে অংশ গ্রহন করবে। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী গ্রীনি।
মামা মুবিন আহমেদ জায়গীরদার বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চলের সাবেক কমিশনার ও বর্তমান আঞ্চলিক সম্পাদক। মামার স্কাউটের পোষাক দেখেই শৈশব থেকেই আকৃষ্ট হয় স্কাউটিংয়ের প্রতি। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নকালীন যাত্রা শুরু হয় স্কাউটিংয়ে। সাথে ছিল বাবা সাংবাদিক ফারুক ইবনে আম্বিয়া আলমগীর ও মা কবি সুমা জায়গীরদারের সর্বাত্মক সহযোগিতা। ৫ম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ প্লাস ও ৮ম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জনকারী গ্রীনি প্রতিটি ধাপেই অর্জন করে আসছে সর্বোচ্চ সফলতা।
গ্রীনির বয়স যখন তিন বছর তখন তার রঙতুলির প্রতি আকর্ষণ ছিলো। বিভিন্ন বিষয়ে অংকন করা ছিল তার নেশা। এই অবস্থায় সে ভর্তি হয় স্কুল অব আর্ট-এ। এখান থেকে ৬ বছরের কোর্স সম্পন্ন করে। অসংখ্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেছেন অনেক অনেক পুরস্কার, সনদ।
গ্রীনির শিক্ষা জীবন শুরু হয় সিলেটের স্কলার্স হোম থেকে। স্কলার্স হোমে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়ন শেষে সে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যায়ন না করেই ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়ন করার টার্গেট করে। ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও গ্রীনি অর্জন করেছে সফলতা। এই প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত বুক রিডিং প্রতিযোগিতায় গ্রীনি রানার্সআপ হয়েছিল। দেয়া হয়েছিল সনদ ও ক্রেস্ট।তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে স্কলার্সহোম আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। পেয়েছে পুরস্কার, সনদ। স্কুলে অঙ্কণ ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। পেয়েছে পুরস্কার অকুতোভয় গ্রীনি। কবিতা আবৃতিতে প্রথম স্থান দখল করেছিলো গ্রীনি।
৫ বছর বয়স থেকে মার্সাল আর্টের থাই কোয়ান্ড প্রশিক্ষণে অংশ নেয় গ্রীনি। পরে এই সাবজেক্ট অফ রাখে সে। জালালাবাদ ক্যান্টেনমেন্টে ৬ ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে ওই প্রতিষ্ঠানের থাই কোয়ান্ডতে ভর্তি হন। এখানে অর্জন করেছে ইয়োলো গ্রিণ বেল্ট। করোনার জন্য থাই কোয়ান্ডো প্রেক্টিস বন্ধ ২ বছর ধরে। এখন আবার শুরু করবে ওই বিষয়টি। ৮ম শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে ক্রিকেটেও সাফল্য অর্জন করে গ্রীনি। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত অভ্যন্তরীণ ক্রিকেটে সিগমা আলমগীর গ্রীনির টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ৭ম শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে জাতিসংঘ আয়োজিত মডেল ইউনাইটেড নেশনে অংশ গ্রহণ করেন। প্রথম দফায় ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে। একই প্রতিযোগিতায় লিডিং ইউনির্ভাসিটি ও এমসি কলেজে অংশ গ্রহণ করেছে ধারাবাকিভাবে। এমসি কলেজে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় স্পেশাল মেনশন এওয়ার্ড পেয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নটরডেম কলেজে ওই প্রোগ্রামের প্রতিযোগিতায় অংশ করে সর্বশেষ সনদ অর্জন করেছে। ২৩ জানুয়ারি মেট্রোপলিটন ইউনির্ভাসিটিতে আয়োজিত একই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সে। ২০২১ সালে স্কুলে তাতক্ষনিক অভিনয়ে ১ম স্থান দখল করে গ্রীনি। হেন্ডবল কম্পিটিশনে তার দল রানার্স আপ হয়।জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান হাউস প্রিফেক্ট গ্রীনি।২০২২ সালের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাইকেল রেসে সে পর্যায়ক্রমে ১ম ও ৩য় স্থান লাভ করে।
স্কাউট জীবন প্রবেশের সময় তার বয়স ছিল ১১। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে ২০১৮ সালে সিলেটের গোলাপগঞ্জে পঞ্চম আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশে অংশ গ্রহন করে। এই প্রোগ্রামের পরপরই ২০১৮ সালের ভারতের পশ্চিম বঙ্গের গঙ্গানগর ক্যাম্পে স্কাউট হিসেবে গ্রীনি অংশ নেয় ইন্ডো-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ নামক ক্যাম্পে। এখান থেকেও কৃতিত্বের সনদ অর্জন করেছে গ্রীনি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ২৫তম অস্ট্রেলিয়ান স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ গ্রহণ করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে গ্রীনি।বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে ওই জাম্বুরিতে অংশ গ্রহণের বিষয়টি তার কাছে স্মরণীয়। ২০২১ সালে “JOTA JOTI” তে অংশ গ্রহন করে। তারপরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ১ম আঞ্চলিক ফ্রেন্ডশিপ ক্যাম্প এ অংশ গ্রহন করে গ্রীনি।
গ্রীনি বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যায়ন করছে। আগামী দিনের ইচ্ছে সম্পর্কে বলতে গিয়ে গ্রীনি বলেছে, সে আগামীতে একজন ডাক্তার হতে চায়। হৃদরোগ চিকিৎসা বিদ্যায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের ইচ্ছে রয়েছে। তার মতে একজন চিকিৎসক হিসেবে সে মানুষের সেবা করতে পারবে। সেবার মাধ্যমে সন্তুষ্টি অর্জনের সম্ভাবনা শতভাগ। ওই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রয়োজন সকলের দোয়া ও সহযোগিতা।গ্রীনির প্রিয় সময় কাটে প্রিয় সব গান শুনে। একান্তভাবে গিটার বাজিয়ে একান্ত সময়টাকে উপভোগ করার গ্রীনির প্রিয় অভ্যাস। মানুষের সফলতা গ্রীনিকে আকৃষ্ট করে। তাদের সফলতা যখন আকর্ষণ করে তখন গ্রীনির মনে হয় সে যেন তার নির্দিষ্ট লক্ষচুত্য হয়ে যাচ্ছে। শেষ কথায় অন্যের সফলতা তার মনকে ভাল করে দেয়-এটাই বড় সত্য।