ইসি গঠন আইন ঘিরে বিতর্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১৮:৩২,অপরাহ্ন ৩০ জানুয়ারি ২০২২ | সংবাদটি ১৮৩৭ বার পঠিত
জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন পাস হয়েছে। তবে সংসদের ভেতরে-বাইরে বিতর্ক থামছে না। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলছে, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস। বিএনপির ভাষ্য আইনটি লোকদেখানো। আর ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির মন্তব্য আইনটি করার জন্য সময় প্রয়োজন। তবে এসব সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যারা বাইরে কথা বলেন, তাদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তারা উঠে পড়ে লেগেছেন।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ বিল পাস হয়। পরে নানা সমালোচনা চলতে থাকে। অনেকে বলেছেন, এ আইনের মাধ্যমে যা হবে তা সরকারের নির্বাচনবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে নাগরিক সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খসড়া আইনে নাগরিক সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটিতে কিছু ত্রুটি রয়েছে যেগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইনের মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হবে তা অতীতের দুটি নির্বাচন কমিশনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজন করবে। মূলত সরকার পুনরায় ক্ষমতায় যেতে পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন সাজাতে আইনটি পাস করেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ আইন ২০২২ নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছি এবং আমাদের বক্তব্যের লিখিত কপি রাষ্ট্রপতি ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দিয়েছি। এতে সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বলা হয়েছিল। অনুচ্ছেদ ১১৮(১)-এ উল্লেখ আছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং ওই বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসারে আইন করা দরকার। আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও সে অনুযায়ী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়টি খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। ফলে কীভাবে এটি প্রযোজ্য হবে বা কার্যকর করা যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকা আবশ্যক।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সরকার আইন করার নামে জনগণের সঙ্গে প্রহসন করছে। এ আইনের সঙ্গে ২০১৭ সালের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপনে খুব একটা অমিল নেই। কোনো আইন মানুষের অকল্যাণে হলে তা না করাই ভালো। সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতার একটি হচ্ছে সরকারের অনুগত হওয়া। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সার্চ কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হলে তাদেরও বিতর্কিত করা হবে।
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, তাড়াহুড়ো করে আইন করা ‘আইওয়াশ’ ছাড়া কিছুই নয়। এ আইন কেবল বিএনপি নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কঠোর সমালোচনা করেছে। এটাকে ইসি গঠনের আইন না বলে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন বলা যেতে পারে।
সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এ আইন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আইনমন্ত্রী নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। এটা হলে তা অনেক ‘ইনক্লুসিভ’ হবে। অনুসন্ধান কমিটি যে নাম প্রস্তাব করবে, সেগুলো অন্তত প্রকাশ করা এবং এরপর জনমত বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন বলেই আশা করছি।
এদিকে, বিরোধী মতামতের তোয়াক্কা না করে সরকারি দলের পছন্দমতো কমিশন গঠনের নিমিত্তে নির্বাচন কমিশন আইন করা হয়েছে বলে মনে করে গণ অধিকার পরিষদ।
দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেন, বর্তমান সরকারের সময়কালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ঐকমত্য ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তাতে জনমতের চাওয়া প্রতিফলিত হবে না।
এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সরকার কী ধরনের সার্চ করবে সেটা আগে থেকেই অনুমেয়। তারা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীলদের খুঁজে পাবেন। দুজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেবেন। রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা হঠাৎ করে কীভাবে এলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কোন ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হচ্ছে আমরা জানব না। হঠাৎ দেখা যাবে। ৫ জনের নামে নির্বাচন কমিশন কমিশন গঠন হবে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলেও বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে। নির্বাচন চলমান অবস্থায় ব্যবস্থা নিতে পারে। তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের প্রণীত নির্বাচন কমিশন আইনের খসড়ায় অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের থেকে নাম নেওয়া কী অনুসন্ধান?