সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা ইউকে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৬:৪৩,অপরাহ্ন ১৬ এপ্রিল ২০২১ | সংবাদটি ১১৫৫ বার পঠিত
আনোয়ার শাহজাহান, লন্ডন থেকেঃ
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকাদক্ষিণ বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সরকারি পুকুরে জেলা পরিষদের মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল এবং পুকুর সংস্কারের নামে নির্মিত দেয়াল অপসারণ করে পুকুরের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা পরিষদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা ইউকে।
স্মারকলিপিতে ঢাকাদক্ষিণ বাজারের সরকারী পুকুরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার দাবী জানিয়েছে।
এদিকে সরকারি পুকুরে জেলা পরিষদের মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা এবং পুকুর সংস্কারের নামে নির্মিত দেয়াল তৈরির খবরে ব্রিটেনে গোলাপগঞ্জ তথা ঢাকাদক্ষিণ এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দা-ক্ষোভ, প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থার ভার্চুয়াল সভায় সর্বসম্মত ভাবে এর প্রতিবাদ জানানো হয়।
বাজারের একমাত্র প্রাচীন সরকারি পুকুরটির একপাশে ঢাকাদক্ষিণ কালিদা প্রসাদ দাতব্য চিকিৎসালয় (বর্তমান উপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) এবং অপরপাশে জেলা পরিষদ এর ডাক বাংলো অবস্থিত। এই পুকুর থেকে একসময় মানুষের পানীয় জলের সংস্থান হত। হাসপাতালের রোগীদের ব্যবহার ও চিকিৎসায়, বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের পানির চাহিদা পূরণ হত এই পুকুর হতে। পুকুরের পানি যাতে কোন ভাবেই নষ্ট না হয় সে জন্য পুকুরের উপরে স্টিলের সিঁড়ি দিয়ে সেখানে শিকলের মাধ্যমে বালতি ঝুলানো ছিল। মানুষ বালতি দিয়ে পানি তুলে খাওয়া সহ সকল ধরনের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন। কালের বিবর্তনে পুকুরের ব্যবহারের সাথে সাথে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুন। এমনিতেই প্রাকৃতিক জলাশয় হারিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং দ্রুত পানির সংস্থান করতে পুকুরটি এখনও আরো গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে কোনভাবে যদি আগুন লাগে তবে দ্রুত পানি পাওয়ার একমাত্র উৎস হল এই পুকুরটি।
এছাড়া, দুইপাশে সরকারি প্রতিষ্ঠান মধ্যখানে মনোরম পরিবেশে পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরটিকে যথাযথ সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করলে এটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থানে পরিণত হবে। স্থানীয়রা সহ শ্রীচৈতন্য মন্দিরে আগত পুণ্যার্থীরা এখানে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাবেন। বিকেলে বা সকালে অবসর বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শতাব্দী প্রাচীন পুকুরটি হাসপাতাল পুকুর হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন শোনা যাচ্ছে পুকুরটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, জেলা পরিষদ পুকুরটির একটি অংশে মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। তারা ইতিমধ্যে পুকুরের প্রায় ৩০ ফুট ভিতরে দেয়াল নির্মাণ করেছে এবং মাটি ভরাটের চেষ্টা করছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে পুকুরটি অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান অবস্থান পুরো ঢাকাদক্ষিণ এলাকাবাসীর সাথে ব্রিটেন প্রবাসী ঢাকাদক্ষিণবাসী সহ ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা (ইউকে) উদ্বিগ্ন এবং পুকুর রক্ষার দাবী জানিয়েছে।
ঢাকাদক্ষিণ বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাজারকে কেন্দ্র করে স্থাপিত হয়েছে উপজেলা সাব- রেজিষ্ট্রার অফিস, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস, উপ-ডাকঘর, ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ, ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকাদক্ষিণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকাদক্ষিণ দারুল উলুম হোছাইনিয়া মাদ্রাসা, ডাক বাংলো, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
প্রাকৃতিক জলাশয় রক্ষায় সরকার কঠোর আইন করেছে। জলাশয় কোন ভাবেই ভরাট করা যাবে না এবং ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ক্রমে কাজ করা যায়। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যতিরেখে একটি মার্কেট নির্মাণের জন্য পুকুর ভরাট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই অবস্থায় পুকুরটি রক্ষায় ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা এবং প্রবাসী ঢাকাদক্ষিণবাসী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরের সহযোগিতা কামনা করছে।
ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা ইউকে প্রাকৃতিক গুরুত্ব এবং স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে পুকুরে জেলা পরিষদের মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল এবং পুকুর সংস্কারের নামে পুকুরের মধ্যে নির্মিত দেয়াল অপসারণ করে পুকুরের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। সুত্র: আমাদের প্রতিদিন, লন্ডন, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১।