সংস্কারপন্থীদের `এবি পার্টি` নিয়ে মুখ খুললেন সয়ং জামায়াতের আমীর!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১৫:০৯,অপরাহ্ন ২৭ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৬৬৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থীদের নতুন দল এবি পার্টি নিয়ে কৌতূহল চারদিকে। তবে এতো দিনেও সরাসরি এই দলটিকে নিয়ে জামায়াত কোনও মুখ খুলেনি।
অবশেষে স্বয়ং দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান হঠাৎ এই দলটিকে নিয়ে মুখ খুললেন।
গত ২২ শে জুন অনলাইনে (জুম) অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে একজন কর্মীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এবি পার্টি প্রসঙ্গে কয়েক মিনিট কথা কথা বলেন জামায়াতের আমির।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমার এই ভাইটি (প্রশ্নকারী) জানতে চেয়েছেন এবি পার্টি সম্পর্কে। কিছু লোক এটার সাথে যোগাযোগ রাখে তাদের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি? এই পার্টিটা গঠন হয়েছে গতমাসের ২ তারিখে, মে মাসের ২ তারিখে। তারা তাদের দলীয় মেনিফেস্টো ঘোষণার সময় ঐদিনই বলেছেন- এই পার্টির নীতি হবে, কর্মকৌশল হবে তিনটা জিনিষের উপর ভিত্তি করে সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানবাধিকার। এটার উপরে তারা কাজ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘তারা (এবি পার্টি) তাদের সেশনে বলেছে, পরিস্কার করে বলেছে যে, তাদের কর্মসূচিতে তাদের এজেন্ডায় ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের এই চ্যাপ্টার থাকবে না। এটাকে বাদ দিয়েই হবে তাদের সবকিছু। ফলে আমাদের আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভাইয়েরা একেবারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কারণ দ্বীন তাদের সাবজেক্ট নয়। আর দ্বীনটাই আমাদের সাবজেক্ট। এই জায়গায় এই ভাইদের সাথে আমাদের আদর্শিক পথ একেবারে আলাদা হয়ে গেল। এখন তারা একসময় আমাদের ভাই ছিলেন, আমাদের প্রিয় মানুষ ছিলেন। এখন আমরা কী করবো এই ভাইদের ব্যাপারে?’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য দোয়া করবো। আল্লাহ যেন তাদের কে দ্বীনের পথে আবার পরিপূর্ণ ভাবে ফিরাইয়া আনেন। মুসলমানের জীবন কখনো খণ্ডিত হতে পারে না। তার জনম থেকে ওফাত পর্যন্ত তার প্রত্যেকটি অবস্থান হবে দ্বীনের ওপরে কোরআনের গাইড লাইন অনুযায়ী রাসুলে করীম (সা) এর সুন্নাহ মোতাবেক। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় জুড়ে দেয়ার কোন সুযোগ নাই। জোড়া তালির কোন সুযোগ নাই। দ্বীনে এলাহিরও কোন সুযোগ নাই। সুযোগ একটাই সেটা হলো আল্লাহর দ্বীন মেনে চলা পরিপূর্ণভাবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা এই দ্বীনটাকে একেবারে পরিপূর্ণ এবং এটাকে একেবারে খণ্ডিত করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন।’
ডা. শফিকুর বলেন, ‘আফা তু মিনুনা বি-বা’দিল কিতাব অ তাক ফুরুনা বিবাদ” আল্লাহ তার একটা অংশকে ঈমান আনা আর একটা অংশকে তাকফির বা অস্বীকার করাকে চরমভাবে ঘৃণা করেছেন। এর সুযোগ আমাদের নেই। তাই এই ভাইদের জন্য দরদভরা মন নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তাদের সাথে কোন বিতর্কে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রিয় সঙ্গী সাথীরা যারা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, আখেরাতে আল্লাহ তায়ালার থেকে নাজাত পাওয়ার আশায় প্রিয় জান্নাতে যাওয়ার আশায় এবং দুনিয়াকে জান্নাতময় দ্বীনের আলোকে করার আশায় যারা এখানে এসেছেন সে সমস্ত ভাইদের প্রতি আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, তাদেরকে কাছে টেনে রাখতে হবে।কেউ কারও অসওয়াসায় পড়ে তারা যাতে নিজেদের ভবিষ্যত হারিয়ে না ফেলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে না যান, এইজন্য পেরেশানীর সাথে তাদেরকে ধরে রাখতে হবে সাহচর্য দিতে হবে এটাই আমাদের কাজ।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতা বলেন, ‘তাদের (এবি পার্টি) সাথে কোন বিতর্কে জড়াবেন না। তাদের কোন প্রশ্নের জবাব দেবেন না। তাদের সঙ্গে অবশ্যই ফেসবুক চ্যাটিং এ লিপ্ত হবেন না। পজিটিভও না নেগেটিভও না। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আর যার যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে তাদেরকে বুঝান দ্বীন ছাড়া মুক্তির আর কোন জায়গা নাই। দুনিয়াতে তো নাই আখেরাতে তো একেবারেই নাই।’
প্রসঙ্গত, জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা ও বহিষ্কৃতদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক উদ্যোগ ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি আমার বাংলাদেশ পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী আহ্বায়ক ও জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মনজু সংগঠনটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’।
এর আগেও মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে প্রশ্ন তোলায় ১৯৮২ সালে থাকা শিবিরের সাবেক সভাপতি আহমদ আবদুল কাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই কমিটির সেক্রেটারি ফরীদ আহমদ রেজাকেও সরে যেতে হয়েছিল। আহমদ আবদুল কাদের এখন ২০ দলীয় জোটভুক্ত খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। আর ফরীদ আহমদ রেজা লন্ডনে বসবাস করছেন।