চসিকের দেয়ালচিত্র নিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫৬:১৩,অপরাহ্ন ১৭ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৬৮২ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে খন্দকার মোশতাক আহমেদের ছবি দিয়ে দেয়ালচিত্র এঁকে ক্ষোভের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
নগরীর সরকারি হাজী মুহম্মাদ মহসীন কলেজের দেয়ালে আঁকা একটি চিত্রে গলায় মালা দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ডানপাশে আঙুল উঁচিয়ে আছেন জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, বাম পাশে সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তার পাশেই দেখা যাচ্ছে মাথায় টুপি পরিহিত খন্দকার মোশতাক। তারই নিচে লিখা আছে ‘আ জ ম নাছির উদ্দীন, মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’।
নগরীর ছাত্রলীগ নেতারা মনে করেন, চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এই ঘটনার দাঁয় এড়াতে পারেন না। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি সংগঠনের সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই জায়গায় আঁকা খন্দকার মোশতাকের ছবি মুছে ফেলেছেন। এসময় ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে দিনটিকে সামনে রেখে সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা হয়েছে এসব চিত্র। কোথাও কোথাও কেবল বঙ্গবন্ধুর একক ছবি আঁকা হয়েছে। আবার কোথাও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্যান্য নেতাদের ছবিও আছে, যার মধ্যে একজন খন্দকার মোশতাক। ইতিহাস যাকে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার অন্যতম কুশীলব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী খন্দকার মোশতাকের ছবি তারই পাশে এঁকে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কলেজের একটি দেয়ালে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই শ্লোগানটিকেও বিকৃতভাবে তারা লিখেছিল। বিষয়টি দেখে আমি নিজে ওটা লাল কালি দিয়ে মুছে দিই এবং পরে সিটি কর্পোরেশন ঠিক করে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, বারবার এরকম ঘটনা ঘটছে নি:সন্দেহে এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে এবং চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। তাই তিনি দাঁয় এড়াতে পারেন না।
চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের ছবিও আঁকা হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের দেয়াল লেখনের কর্মসূচি আছে। দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। যেসব শিল্পীরা আঁকছেন, সম্ভবত তারা নতুন বিষয়টি খেয়াল করেনি। আবার এমনও হতে পারে তারা হয়তো খন্দকার মোশতাককে চিনতেই পারেনি। ইতিহাস না জানলে যা হয় আর কী! একটা মহসীন কলেজের ওখানে আছে। আরেকটা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ওখানে আছে শুনেছি। এগুলো আমরা দ্রুত মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে কল দেয়ার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর খন্দকার মোশতাক ৮৩ দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করার বিধান সম্বলিত কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল পাশ করেন। ওই বছরের ৫ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহে তিনি অপসারিত হন।