গোলাপগঞ্জ নিয়ে ‘তথ্য বাতায়নে’ ভুলের ছড়াছড়ি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:০১:০৬,অপরাহ্ন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৭৭৩ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ‘তথ্য বাতায়নে’ বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। উপজেলার পটভূমিতে ২১৯ শব্দের ১১ লাইনের মধ্যে ১৬টি বানান ভুল লেখা হয়েছে।
সেই বৃটিশ আমল থেকে একটি শিক্ষিত উপজেলা হিসেবে দেশ বিদেশে সুনাম রয়েছে।
কিন্তু বর্তমান যুগে ইন্টারনেটে উপজেলার পরিচিতি লিখতে গিয়ে বানান ভুলের এমন ছড়াছড়িতে হতবাক সচেতন মহল।
ভুলের ছড়াছড়িতে হতবাক শুধু গোলাপগঞ্জ উপজেলার লোকজনই নয়। হতবাক ভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারাও।
বানানে এমন ভুলের জন্য দায় কার? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।
এজন্য ‘তথ্য বাতায়েন’র কলা কৌশলীদেরই দায়ি করছেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন, অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করালে এমনই হয়। এজন্য সংশ্লিষ্টদের এ বিষেয়ে সচেতন হওয়ার আহবানও জানান উপজেলাবাসাী।
এ ভুলের ছড়াছড়ি নিয়ে একটি ফিচার লিখেছেন সিলেটপিডিয়ার প্রধান সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শুভ।
নিম্নে পাঠকদের জন্য ফিচারটি হুবহু তুলে ধরা হল-
ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে পড়া অনেক দিনের পুরোনো অভ্যাস। স্বাভাবিকভাবে সিলেট বিভাগের তথ্যগুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। কারণ সিলেটের ইতিহাস তো আর ২শ কিংবা ৩শ বছরের পুরোনো নয়, তার চেয়েও অধিক। খ্রিষ্টপূর্ব থেকে পাওয়া যায় সিলেট বিভাগের সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের অস্তিত্ব। আর সিলেট বিভাগের মধ্যে বিভিন্ন কারণে যে কয়েকটি উপজেলার নাম প্রথমে চলে আসে তাদের মধ্যে গোলাপগঞ্জ অন্যতম। তাই আমাদের সিলেটপিডিয়া www.sylhetpedia.com এর জন্য সিলেটের নদ-নদী ও উপজেলা নিয়ে বর্তমানে কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে চোখ আটকে গেল উপজেলা তথ্য বাতায়নে। উপজেলা সম্পর্কে সাব মেনু- গোলাপগঞ্জ উপজেলার পটভূমিতে সেকশনে ২১৯ শব্দের ১১ লাইনের মধ্যে ১৬টি বানান ভুল লেখা হয়েছে। আমরা যদি লাইন বাই লাইন সে লেখাগুলো পড়ি তাহলে দেখতে পাই।
প্রথম লাইনের ২য় শব্দ ভুল বানান দিয়ে লেখা শুরু করা হয়েছে ‘সুরমা-কুশিয়ার’ অথচ আমাদের জানামতে দেশের যে কটি প্রবহমান বড় নদী আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুশিয়ারা নদী। এই নদীর নাম কি করে ভুল হয়? তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে। উপজেলাকে লেখা হয়েছে ‘উপজেল’,
৩য় লাইনে সবজিকে সবিজ, আবিষ্কৃতকে আবিস্কৃত,
৪র্থ লাইনের শেষ শব্দ প্রাকৃতিককে প্রকৃতিক,
৫ম লাইনে মাঝামাঝি মুদ্রাকে মূদ্রা,
৬ষ্ঠ লাইনে প্রমিত বাংলার সাথে সিলেটি শব্দের সংমিশ্রণ করা হয়েছে। সেখানে হাওড়কে আওড় লেখা হয়েছে,
৭ম লাইনের শুরুতে আরও ভয়াবহ অবস্থা, সেখানে প্রথম তিনটি শব্দই ভুল। ‘ভ্রমণকে ‘ভ্রমন’, পিপাসুদের না লিখে লেখা হয়েছে ইপপাসুদের, মুগ্ধকে মূগ্ধ,
৮ম লাইনে ভুলের পরিমাণ কিছুটা কমে একটি হয়েছে। সেখানে সুদূরকে সূদুর লেখা হয়েছে,
৯ম লাইনে ভুলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে এক থেকে দুই হয়েছে। ‘আসছেন’কে লেখা হয়েছে ‘আসেছন’ এবং ‘দুর্ভাগ্যজনক’ লেখার মধ্যেও দুই জায়গায় ভুল করে লেখা হয়েছে ‘দূভার্গ্যজনক’,
১০ম লাইনে যদিও কোনো ভুল বানানের দেখা পাওয়া যায়নি কিন্তু ১১তম লাইনে সে মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়ে তিনে পৌঁছেছে। সেখানে ‘রচিত’ না লিখে ‘রচিতক’, প্রবীণ বানান ভুল লেখা হয়েছে ‘ণ’ র জায়গায় ‘ন’ দেওয়া হয়েছে, ‘গোলাপগঞ্জ’ বানানে চরম ভুল করে লেখা হয়েছে ‘গোআলাপগঞ্জের’।
কোনো একক ব্যক্তির বা যেনতেন একটি পোর্টাল যদি এ মাত্রায় বানান ভুল থাকে তাহলে তাও মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু সরকারি কোনো ওয়েবসাইটে ভুল থাকা আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। আর বর্তমানে সবাই যেকোনো তথ্য খুঁজতে হলে উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া’র পরই তথ্য বাতায়নে তথ্য খুঁজেন। সবার ধারণা, এমনকি আমিও বিশ্বাস করি যেহেতু উপজেলা তথ্য বাতায়নের সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরাসরি মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ আছে এমনকি উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রত্যেকটি বিভাগের তথ্য আছে, সেখানে ভুল তথ্য প্রকাশিত হবে তা অন্তত আমি আশা করি না।
আমি শুধু একটি বিভাগের একটি প্যারাকে চেক করেছি, অন্য বিভাগগুলোর অবস্থা বানানের দিক থেকে তো খারাপ, তথ্যের দিক থেকে সে আলোচনা না হয় আজ থাক।
• এ লেখাটিতে শুধুমাত্র বানানের বিষয়টি খেয়াল করা হয়েছে। বানান বাংলা একাডেমির বানান রীতি অনুযায়ী।