সিলেট নগরীকে তারহীন প্রক্রিয়ায় বিপর্যয় আশঙ্কা ইন্টারনেটে
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩১:১৫,অপরাহ্ন ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৪৪৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সিলেট নগরকে উন্মুক্ত তারহীন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে তারা নগরে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করছে। অনেক এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে লাইন স্থাপনের এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় নগরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ‘বৈদ্যুতিক ক্যাবলের সাথে ইন্টারনেট ক্যাবলগুলো ভূগর্ভস্থ করার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের পদক্ষেপ ছাড়াই সম্প্রতি গণমাধ্যমে নোটিশ দিয়ে জানিয়েছেন সিলেটে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হলে তিনি কিংবা সিটি করপোরেশন দায়দায়িত্ব নেবে না।
এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে ইন্টারনেট সেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিলেট আইএসপি এসোসিশনের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সিলেটে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারিদের সংগঠন সিলেট আইএসপি এসোসিশনের নেতৃবৃন্দ বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পিডিবির খুঁটি না সরানোর অনুরোধও জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘এসোসিয়েশনের আওতায় ৪০ থেকে ৪৫ টি ইন্টারনেট কোম্পানী বিটিআরসির লাইসেন্স নিয়ে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে। যার গ্রাহক সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার। বিকল্প ব্যবস্থা না করেেত পারলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়বে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।’
তারা বলেন, ‘বর্তমানে শাহজালাল মাজার এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জিন্দাবাজার এলাকায় সকল ইন্টারনেট কোম্পানীগুলোর মূল কার্যালয়। এখান থেকে পুরো নগরীতে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়। যখন জিন্দাবাজার এলাকার খুঁটিগুলো অপসারণ করা হবে, তখন পুরো নগরীতে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হবে। তাই হাজার হাজার গ্রাহকের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পিডিবির খুঁটিগুলো যেন সরানো না হয়।’
মেয়রের সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আমাদেরকে নোটিশ দিয়ে জানান যে, আমরা যেন আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত সকল ইন্টারনেট ক্যাবল সরিয়ে ফেলি। সিলেট নগরীকে তারবিহীন করতে এ পদক্ষেপ। আমরাও চাই একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন নগরী হোক সিলেট। কিন্তু ইন্টারনেট ক্যাবল সরানোর বিকল্প কোনো পদ্ধতি না রেখেই তিনি আমাদেরকে নোটিশ প্রদান করেন। এনিয়ে আমরা তাঁর সাথে বারবার বৈঠক করে কোন ফল পাইনি। ইন্টারনেট ক্যাবল ভূগর্ভস্থ করতে গেলে গ্রাহকের খরচ প্রায় ৫ গুণ বেড়ে যায়। তাই আমরা স্ট্রিট ল্যাম্পের সাথে ইন্টারনেট ক্যাবলের সংযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেই এবং তিনিও তাতে সম্মত হন। কিন্তু পরে এ সিদ্ধান্ত থেকেও তিনি সরে আসেন।’
তারা এও বলেন, ‘মেয়র নিজে ডিজিটাল সিলেটের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু ইন্টারনেট সেবা চালু না থাকলে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। তাই ইন্টারনেট ক্যাবল নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যেভাবে আছে, সেভাবেই রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।’
সিলেট নেট ব্রডব্যান্ডের পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, শুধু আমাদের ব্যবসার স্বার্থে নয়, নগরবাসীর নির্বিঘ্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার সুবিধার্থেই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সাধারণ নাগরিকদের অবগতির জন্য একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নেওয়ার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। কিছুদিনের মধ্যে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের আওতায় আসা এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং তাতে থাকা সব তার অপসারণ করা হবে। খুঁটিতে থাকা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তারগুলোও অপসারণ করা হবে।
এতে ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা সভা করেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এ ব্যাপারে আইনগতভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, নগরীর বিদ্যুতের খুঁটিগুলোতে তারের জঞ্জাল রয়েছে। খুঁটিগুলো সরিয়ে নিয়ে জঞ্জাল কমবে। খুঁটিগুলো বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। এতে সিটি করপোরেশনের কোনো দায়িত্ব থাকার কথা নয়। ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বহু বছর ধরে এসব খুঁটি ব্যবহার করে আসছে। এখন ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন হলে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।